Advertisement
Advertisement

Breaking News

Ritwik ghatak

ঋত্বিকের রাজশাহীর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে নতুন বাংলাদেশ! মহাপরিচালকের দেশভাগের যন্ত্রণাকেই চরম স্বীকৃতি?

আজ কিংবদন্তি এই পরিচালকের জন্মদিনে যেন ওপার বাংলার ভিটে-মাটির কান্নাও মেপে নিচ্ছে চলচ্চিত্র প্রেমী মানুষরা।

Director Ritwik ghatak and his pain on celluloid
Published by: Akash Misra
  • Posted:November 4, 2024 3:41 pm
  • Updated:November 4, 2024 6:09 pm  

আকাশ মিশ্র: ‘ভাবো, ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো’। চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রথম ধাপই হল যেন ঋত্বিক ঘটকের এই জনপ্রিয় উক্তি। মগজে থাকা একাধিক দর্শন, হৃদয়ে থাকা দেশভাগের যন্ত্রণা। আর তা থেকেই ভাবনার সঞ্চার হয়ে সিনেমা নয়, যেন একটুকরো ভাঙা হৃদয়কে রুপোলি পর্দায় নিয়ে এসেছিলেন ঋত্বিক। যা আজও বিশ্ব সিনেমার দলিল। চলচ্চিত্র শিক্ষার এবিসিডি। ঋত্বিক এবং তাঁর ছবি সংক্রান্ত এই বক্তব্য হয়তো কতকটা চেনা, তাই বলে মহাপরিচালকের দেশভাগের যন্ত্রণাকে এভাবে স্বীকৃতি দেবে বাংলাদেশ! গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা দেশছাড়ার পর দ্বিতীয়বার ‘স্বাধীনতা’ পাওয়া বাংলাদেশের একশ্রেণির মানুষ গুড়িয়ে দিয়েছে ঋত্বিকের রাজশাহীর পৈতৃক বাড়ি। যা আদতে বঙ্গ সংস্কৃতিকে ধ্বংসের সমান। হয়তো এই পাপের ফলও ভুগতে হবে নতুন বাংলাদেশকে!

মাত্র ৫১ বছরের জীবনে ঋত্বিক কুমার ঘটক মোট ৮টি ছবি তৈরি করেছিলেন। এছাড়াও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন সব মিলিয়ে ১০টি। আরও অনেকগুলো কাহিনীচিত্র, তথ্যচিত্রের কাজে হাত দিয়েও শেষ করতে পারেননি। অকালেই চলে যান তিনি। কিন্তু তাঁর শেখানো ছবির ভাষা, তাঁর শেখানো গল্প বলার কায়দা আজও সমানভাবে মানুষের মনে দাগ কেটে যায়। যখনই দেশ ভাগের প্রসঙ্গ ওঠে, তখনই ঋত্বিক ঘটকের ফ্রেমে একের পর এক পদ্মাপারের গল্প চোখের সামনে স্পষ্ট হয়। নাহ, তার কাছে সিনেমা বিনোদন নয়, বরং সাদা-কালো রঙের তফাৎ বুঝিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে জীবন দেখানোর মাধ্যম।

Advertisement

১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার জিন্দাবাজারের জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ঋত্বিক। ঋত্বিকের বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং তিনি কবিতা, নাটক লিখতেন। তার বদলির চাকরির কারণে তাঁরা ঘুরেছেন দেশের নানা প্রান্তে। তাঁর বাবা অবসরের পর রাজশাহীতে বাড়ি করেন। ১৯৪৬ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এই আই.এ পাশ করেন। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগে পরে পূর্ববঙ্গের প্রচুর লোক কলকাতায় আশ্রয় নেয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর পরিবারও কলকাতায় চলে যায়। তবে নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করে শরণার্থী হবার মর্মবেদনা ঋত্বিক কোনওদিন ভুলতে পারেননি এবং তাঁর জীবনদর্শন গঠনে এই ঘটনার প্রভাবও ছিল মারাত্মক। যা পরবর্তীকালে তার ছবির মধ্যে বার বার ফুটে ওঠে।

ঋত্বিক ঘটক জীবনের শুরুর সময়টা কাটিয়েছেন রাজশাহীর যে পৈতৃক বাড়িতে, অশান্ত বাংলাদেশে সেই বাড়িটিই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল! যে মানুষটি দুই বাংলার ছিন্নমূল, বাস্তুহারাদের কষ্ট-যন্ত্রণার কাহিনি সিনেপর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন, পদ্মার সঙ্গে যাঁর আত্মিক যোগ ছিল, তাঁর বাংলাদেশের বাড়িই আজ নিশ্চিহ্ন। কাঁটার মুকুটধারী রাজা ঋত্বিকের ট্রাজিক জীবনে এযেন চূড়ান্ত এক সমাপতন! আজ কিংবদন্তি এই পরিচালকের জন্মদিনে যেন ওপার বাংলার ভিটে-মাটির কান্নাও মেপে নিচ্ছে চলচ্চিত্র প্রেমী মানুষরা। ঠিক যেমন ভাঙা হৃদয়ের ছাপ উজ্জ্বল তাঁর পরিচালিত সুবর্ণরেখা, তিতাস একটি নদীর নাম, কোমলগান্ধারে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement