সন্দীপ্তা ভঞ্জ: বাড়ির কোণে গুটিয়ে থাকা বয়স্ক লোক। রোদমাখা বারান্দায় বই পড়া হয় ঠিকই কিন্তু নাতি-নাতনিদের আর সেসব পড়ে শোনানো হয় না। পারিপার্শ্বিক চাপে হোক কিংবা অন্য কোনও কারণ, বাড়ির সদস্যদের কাছে এই বয়স্ক মানুষটি কিন্তু ব্রাত্য! আমাদের চারপাশে অনেক ‘বরুণবাবুরা’ই রয়েছেন। যাঁরা পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে হয়তো নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেননি। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর অবশেষে প্রেক্ষাগৃহে এলেন ‘বরুণবাবু’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। নেপথ্যে ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ পরিচালক অনীক দত্ত।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরীর ‘ছাদ’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘বরুণবাবুর বন্ধু’। বরুণ চক্রবর্তীর চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এক অশীতিপর বয়স্ক ব্যক্তি বরুণবাবুকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে গল্প। নিজের পরিবারের সদস্য তথা সমাজের একাংশের থেকে নিজেকে খানিক আলাদা করে রেখেছেন বরুণবাবু।
‘বরুণবাবুরা’ আজকের সমাজের জন্য কতটা প্রাসঙ্গিক? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ওরফে বরুণবাবুর চরিত্র প্রসঙ্গে পরিচালক অনীক দত্ত বললেন, “আমি শৈশব থেকে বরুণবাবুদের মতো লোক দেখেই বড় হয়েছি। শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত লোক। আদ্যোপান্ত বাঙালি ভদ্রলোক। কিন্তু এই বরুণবাবুর মতো মানুষগুলিই আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছেন, প্রায় অবলুপ্তির পথে! বরুণবাবুর মতো লোকের সংখ্যা এখন সীমিত। হয়তো তাঁরা পারিপার্শ্বিক চাপে গর্তে ঢুকে গিয়েছেন, কিংবা প্রান্তিক হয়ে গিয়েছেন। এখন সময় পালটেছে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিও বদলেছে। যে মানুষগুলো একদিন দৃঢ় কণ্ঠে নিজেদের বক্তব্য রাখতে পারতেন। মতামত দর্শাতে পারতেন। আজ তাঁরা হারিয়ে গিয়েছেন।” পাশাপাশি তিনি এও বলেন যে, “বরুণবাবুর মতো চরিত্রগুলো আমাদের সমাজে খুব দরকার।”
আপনার ছবিতে বরাবরই পলিটিক্যাল ছোঁয়া থাকে, সেইদিক থেকে ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ কতটা আলাদা কিংবা আজকের জন্য প্রাসঙ্গিক? “‘বরুণবাবুর বন্ধু’ কিন্তু সেই অর্থে কোনও রাজনৈতিক ছবি নয়! আদ্যোপান্ত একটা ফ্যামিলি ড্রামা। আবার বলব, পরিবারের মধ্যেও তো একটা রাজনীতি থাকে। ‘বরুণবাবুর বন্ধু’র ক্ষেত্রে রাজনীতিটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। বরুণবাবু এমন একটা মানুষ যিনি সবক্ষেত্রে নির্লিপ্ত থাকেন। সমাজ তথা বাড়ির মানুষদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। সেখানে কিছুটা আধুনিক প্রজন্মের প্রতি অভিমান রয়েছে। আবার তাঁর নিজস্ব একটা একগুয়েমিও রয়েছে। বাড়ির সদস্যরা একপ্রকার তাঁকে এড়িয়েই চলে। কিন্তু হঠাৎই বরুণবাবুর একজন ‘প্রভাবশালী বন্ধু’র আগমনের খবরে পরিবারের সবাই তাঁকে তোয়াচ করা শুরু করে। সেই দিক থেকে বলতে গেলে এই ছবি আমাদের চারপাশেরই চেনা ছবি, যেখানে সমাজের মধ্যেকার ব্যক্তিগত স্বার্থ-রাজনীতি সবকিছুই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে বরুণবাবুর চোখ দিয়ে।”
তারকাখচিত ছবি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে মাধবী মুখোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, শ্রীলেখা মিত্র, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, দেবলীনা দত্ত প্রমুখকে। আমাদের চারপাশের অতি পরিচিত ‘বরুণবাবু’দের অচেনা দিকগুলিকে জানতে-বুঝতে কিংবা কেন আজকের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এরকম আরও ‘বরুণবাবু’র দরকার? জানতে হলে অবশ্যই দেখতে হবে এই ছবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.