‘প্রজাপতি’ ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীর (Mithun Chakraborty) সঙ্গে কাজের প্রসঙ্গে বললেন দেব (Dev)। ছবির কনটেন্ট নিয়ে আত্মবিশ্বাসী শোনাল অভিনেতা-প্রযোজককে। তাঁর কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরলেন শম্পালী মৌলিক।
মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে আপনার রসায়ন অদ্ভুত জায়গায় গিয়েছে। ‘প্রজাপতি’র ট্রেলার দেখে মনে হচ্ছে। এর নেপথ্যে কী?
ভীষণ ভাল মানুষ মিঠুনদা। ওঁকে বহু বছর ধরে চিনি। মিঠুনদার প্রতি সম্মান-ভালবাসা বরাবরই ছিল। কাজ করার আগ্রহও ছিল। এবং এমন একটা চরিত্র পেয়েছি, যেটা আমরা নিজেরাই একে-অপরের জন্য। আমি ওঁর ছেলেরই মতো, উনিও আমার পিতৃসম। কোথাও যেন ওই কেমিস্ট্রি কাজে লেগে গিয়েছে।
যতদূর মনে পড়ছে ‘হিরোগিরি’-র পরে এতদিন বাদে আপনারা এক সিনেমায়। রাজি করালেন কীভাবে ওঁকে?
যখন আমরা গল্পটা লিখছিলাম, ‘টনিক’-এর পর, বাবা-ছেলের চরিত্র নিয়ে– অনেকগুলো নাম এল। তখন মিঠুনদার সঙ্গে একটা রিয়ালিটি শো করছিলাম, আমারই মনে হল, মিঠুনদা করলে ভাল হয়। সবাই সঙ্গে সঙ্গে ‘হ্যাঁ’ বলল। কিন্তু প্রশ্ন হল, মিঠুনদা কি ‘হ্যাঁ’ বলবে? আমি বললাম, আগে অ্যাপ্রোচ তো করি। খুব জোর না বলবে। এরপর আমি মিঠুনদাকে বলি, কোভিডের মাঝখানে। তখন সবাই কাজ কিছুটা কমিয়ে রেখেছিল। মিঠুনদার যথেষ্ট বয়স হলেও, মনেপ্রাণে পজিটিভ। দাদাকে বললাম, একটা গল্প আছে, আমি প্রোডিউস করছি, শোনাতে চাই। দু’মিনিটে গল্পটা শোনাই। ওঁর পছন্দ হয়ে যায়। তারপর অভিজিৎ (সেন), অতনুদাকে (রায়চৌধুরী) ডেকে নিই, ওরা বাকি গল্পটা বোঝায়। ওইদিনই মিঠুনদা হ্যাঁ বলে দেন।
শুনেছি একবার ওঁর সঙ্গে দেখা করতে মুম্বইয়ের মাড আইল্যান্ডের বাড়িতেও গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, কারণ মিঠুনদার শরীর খারাপ হয়েছিল, ডেট দিতে পারছিলেন না। একটা কাজের প্রেশারও থাকেই। তখন বললাম, কালকের ফ্লাইটে যাচ্ছি বাড়িতে। শুটিংয়ের ডেট নিয়ে বেরব। গেলাম মুম্বই। মিঠুনদা সকাল পাঁচটা থেকে আমার জন্য রান্নাবান্না করে রেখেছিলেন। আমরা আনন্দ করে খেলাম। ডেট নিলাম। এবার ছবিটা রিলিজ হতে চলেছে।
ট্রেলারে দেখলাম স্বতঃস্ফূর্ত কান্নার দৃশ্য। ইমোশনাল জার্নির ছবি দেখে দর্শক খুব কাঁদবে?
না, না। দর্শক আনন্দ করে হল থেকে বেরবে। এটা সেইরকম ইমোশনাল জার্নি নয়। প্রত্যেকটা বাড়ির একটা গল্প হয় না, একটা ছেলে বা মেয়ে সিঙ্গল ফাদারের সঙ্গে জীবন কাটাচ্ছে, বিয়ে করেনি। বাবা-মায়ের তখন চিন্তা হতে শুরু করে, সন্তান বিয়ে করলে নিশ্চিন্তে পরপারে যেতে পারবে। আবার ছেলে বা মেয়েটির পার্সপেকটিভ থেকে দুশ্চিন্তা থাকে যে, বিয়ে করে ফেললে বাবা বা মাকে কে দেখবে। বা মেয়েটি ভাবতে থাকে যে বাড়িতে বউ হয়ে যাবে, তারা যদি আমার অভিভাবককে সময় দেওয়ার মতো পরিস্থিতি না করে দেয়। দু’ধরনের ভাবনা থেকেই ছবিটা। তার মধ্যে ঝগড়া, মজা, ভালবাসা সব আছে। মনে ফুর্তি নিয়ে দর্শক হল থেকে বেরবে।
আপনার বাবা একসময় মুম্বইয়ে শুটিংয়ের সেটে কেটারিংয়ের দায়িত্ব সামলাতেন, মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে চেনা কি সেই সময় থেকে?
একরকমভাবে, তখন মিঠুনদার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাইনি। তবে মিঠুনদার অনেক ছবির কেটারিং আমরা করেছি। যেহেতু বাবা ’৮৫ থেকে অনেক বড় ছবির কেটারিং করেছেন, অনেক তারকাকেই কেটারার হিসেবে খাইয়েছেন। মিঠুনদা আলু-পোস্ত খেতে ভালবাসেন। আমার বাবা ওঁর কেটারিং টিমের সঙ্গে বিদেশেও গিয়েছেন একসময়। সেই জায়গা থেকে আমি হয়তো মিঠুনদাকে চিনতাম। উনি আমাকে সেভাবে চিনতেন না। কিন্তু আমি যখন হিরো হলাম, নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছিলাম, স্যর, আমার বাবাকে আপনি চেনেন? দাদার, উত্তর ছিল, ‘ওরে তেরি, তুই ওঁর ছেলে!’ সেদিন থেকে পারস্পরিক সম্মানের জায়গা তৈরি হয়। যে, একটা মানুষ কেটারিং করতে করতে তার ছেলেকে স্টার বানিয়ে দিল। ওই জার্নিটা আমি দেখতে পাই, দাদা সেটাকে সম্মান করেন। অদ্ভুত ভাললাগা আছে আমাদের দু’জনের মধ্যে।
ওঁকে প্রোমোশনে আরেকটু পেলে ভাল হত না?
উনি যে প্রজন্মের মানুষ, তখন এত প্রচার হত না। আমরা তো প্রায় রাস্তায় নেমে প্রোমোশন করি। আমরা ‘টনিক’-এর সময় পরানদাকেও নিয়েও যে জন্য কম করেছিলাম। আর মিঠুনদার শরীরের কথাও ভাবতে হয়। প্রোমোশন ম্যাটার করলেও, দিনের শেষে ছবিটা ম্যাটার করে। প্রথমদিনের পর দর্শক বেরিয়ে কী বলছে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এবার স্ট্র্যাটেজি একটু পালটে আমরা ওভার দ্য টপ প্রোমোশনে যাচ্ছি না। এবার আমরা ধীরে যাচ্ছি যে, কনটেন্ট-ই কথা বলুক।
একই দিনে ২৩ ডিসেম্বর ‘হত্যাপুরী’, ‘হামি টু’, ‘সার্কাস’ আসবে ‘প্রজাপতি’-র সঙ্গে। তার আগের সপ্তাহে (আজ) ‘অবতার’ এবং ‘হাওয়া’-র মুক্তি। প্রযোজক হিসাবে চাপ অনুভব করছেন?
না। আমি তো ভিড়ের মধ্যেই সারাক্ষণ ছবি রিলিজ করেছি। কনটেন্ট ভাল হলে দেখবে। প্রথম শোয়ে দশটা লোকের ভাল লাগলে, তারা একশোজনকে নিয়ে আসবে, তার আবার হাজারজনকে আনবে, মাউথ পাবলিসিটিতে। শুধু স্টারডম দিয়ে এখন আর হিট হবে না, কনটেন্ট ভাল দরকার…স্টারডম দিয়ে ছবিটা অনেকদূর যেতে পারবে। একটা ভাল কনটেন্ট যদি কেউ না চেনে, জানে, সে ক্ষেত্রে কম ট্র্যাভেল করে। যখনই সুপারস্টার থাকে অনেকদূর ছবিটা ট্র্যাভেল করে। অনেক মানুষের কাছে সহজে পৌঁছয়, গ্রহণযোগ্য হয়। তারপর তো কনটেন্ট দরকার-ই।
‘প্রজাপতি’-র ক্ষেত্রে স্টার পাওয়ার এবং কনটেন্ট দু’টোই আছে?
আমি বলব ভাললাগা আছে। মিঠুনদা সুপারস্টার বলে নিইনি। মনে হয়েছিল বাবা-ছেলের চরিত্রে আমাদের মানাবে। উই আর নট টেকিং এনি ক্রেডিট অ্যাওয়ে, যে মিঠুনদা লেজেন্ড। বাঙালির গর্ব। কিন্তু ওই সময়, বক্স অফিসের কথা ভাবিনি আমরা। দর্শক দেখবে ভেবেই এই কাস্টিং।
ট্রেলার দেখে বুঝেছি, এ ছেলের বিয়েতে ভয়। যে বউ এসে বাবা-ছেলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করবে। দেবেরও কি বিয়েতে ভয়? এখনও সুখবর পাচ্ছি না কেন?
আমরা ‘প্রজাপতি’-র মধ্যেই থাকি, প্লিজ (হাসি)। ছবিটা রিলিজ করে যাক তার পরে উত্তর দেব। আর সত্যি, ‘প্রজাপতি’র সঙ্গে তো বিয়ের সম্পর্ক আছেই। নামটা অতনুদার দেওয়া। আমরা শুনেই হ্যাঁ বলেছিলাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.