এঁরা প্রত্যেকেই এখনও গ্ল্যামার জগতে সক্রিয়। রাজনীতির ময়দানে এসেছেন পরে। কেউ কিছুটা অভিজ্ঞ, কেউ বা সদ্য ডেবিউ করলেন। লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর তাঁদের ভাবনা কী? শম্পালী মৌলিক
রচনা- প্রথম বার রাজনীতিতে এসেই হুগলির ‘নাম্বার ওয়ান’ হয়ে উঠলেন। দীর্ঘ দুমাসের লড়াই শেষে এবার কি একটু বিশ্রাম? হেসে বলছেন, “না গো, এখন বিশ্রাম হবে না। এরপরে দিল্লি যেতে হবে। বিজয় মিছিল ও আরও ব্যস্ততা রয়েছে। রেস্ট নেই। এছাড়া ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’-এর শুট রয়েছে।” নির্বাচনে প্রথমবার এই সাফল্য আশা করেছিলেন, এমন ট্রোলিংয়ের পরেও? উত্তরে রচনা বলছেন, ‘আমি জানতাম মানুষ আমাকে ভালোবাসে, পাশে আছে, এই আত্মবিশ্বাস ছিল। ট্রোলিং যারা করছে তাদের কথা ভেবে যদি আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করি তাহলে তো হয়েই গেল। মিম-ট্রোল আমার কোনও ক্ষতি করতে পারেনি। মানুষের মনেও কোনও দাগ কাটতে পারেনি। আমি বলব থ্যাঙ্কস টু এভরিওয়ান, আমার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে এর ফলে।’ ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’-এর শুটিং সামলে এলাকার কাজে ব্যালান্স করতে পারবেন? ‘এই দুমাস যখন দিনরাত কাজ করে সবটা ভারসাম্য রাখতে পেরেছি, আগামিদিনেও আশা করি পারব।’ আত্মবিশ্বাসী শোনাল অভিনেত্রীকে। আদতে সিনেমা-টেলিভিশনের মানুষ হিসাবে, ইন্ডাস্ট্রির জন্য কী করতে চান? ‘আগে হুগলির মানুষের জন্য ভাবি, তারপর ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভাবব। হুগলির মানুষ আমাকে বাঁচিয়েছে, ভালোবেসেছে আগে তাদের দেখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রির মানুষকে দেখার জন্য অনেকে আছেন।’ অকপটে বললেন অভিনেত্রী-সঞ্চালিকা।
দেব- জয়ের হ্যাটট্রিক করে সংসদ যাত্রা এবারেও নিশ্চিত করেছেন দেব। সুপারস্টার কি এবার সাময়িক বিশ্রাম নেবেন? “না, ‘খাদান’-এর শুটিং শুরু হবে। সব প্ল্যানিং চলছে এখন। বিশ্রামের সময় নেই।” হাসতে হাসতে বলছেন দেব। সিনেমার মানুষ হিসাবে, এবার ইন্ডাস্ট্রির জন্য কী করতে চান? সিঙ্গল স্ক্রিনের জন্য? ‘একটা মানুষ তো একা কিছু করতে পারে না। ইটস টিম ওয়ার্ক। ভালো গল্প, ভালো স্ক্রিপ্ট, আর ছবিটা ভালো হলে চলে এবং হল-এর সংখ্যা বাড়তে বাধ্য। এই তিন-চারমাস এ বছর সেভাবে ছবি চলেনি। হল মালিকেরা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। সিঙ্গল স্ক্রিনের ক্ষেত্রে সব আমার একার হাতে নয়। যে সমস্ত এনওসিগুলো লাগবে সরকারের দিক থেকে, সেখানে একটা চেষ্টা করতে পারি। তার পরেও এটা টিমওয়ার্ক। ভালো ছবির সংখ্যা বাড়লে, টান থাকবে, সাপ্লাই বাড়বে।’ বলছেন নায়ক। রাজনীতি-সিনেমার কাজে কতটা ভারসাম্য রাখতে পারবেন? ‘‘দশ বছর ধরে তো রেখেছি। আমার মনে হয় আমাকে নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। এবারে ভোটের মার্জিন দেখেও বোঝা যাচ্ছে, যে আগের থেকেও বেশি। এতগুলো বছরে ঘাটালের মানুষ নিশ্চয়ই বিশ্বাস করতে পেরেছে রাজনীতিক হিসাবে আমাকে। কোভিডের পরেও আমি কিন্তু ‘বাঘা যতীন’, ‘প্রজাপতি’, ‘প্রধান’ পর পর দিয়ে গেছি। আর পুজোয় ‘টেক্কা’ উপহার দেব দর্শককে। সিনেমা-রাজনীতি দুটো দায়িত্বই আমি পালন করে যাচ্ছি।’’
সায়নী- যাদবপুরের মতো মর্যাদাব্যঞ্জক কেন্দ্র থেকে এবারে বড় ব্যবধানে জিতেছেন সায়নী ঘোষ। অভিনয় তাঁর আঁতুড়ঘর হলেও বিগত কয়েক বছরে রাজনীতির বাইশ গজে ক্রমশ পোক্ত হয়েছেন অভিনেত্রী। প্রায় একাশি দিনের যুদ্ধপর্ব সমাপ্ত। এবার কি কদিনের বিশ্রাম? ‘ভেবেছিলাম একটু বিশ্রাম নেব। কিন্তু হবে না সেটা। আমার কনস্টিটিউয়েন্সি ভিজিট শুরু করে দিয়েছি। মনে হয় না বিশ্রাম নেব।’ স্পষ্ট জানালেন সায়নী। সক্রিয় রাজনীতিতে বিগত কয়েক বছর ধরেই, তবু আপনার আদত পরিচয় অভিনেত্রী হিসাবে। সিনেমার মানুষ হিসাবে ইন্ডাস্ট্রির জন্য কিছু করতে চান? উত্তরে তিনি বলছেন, ‘ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক কিছু করতে চাই। যেহেতু টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও আমার লোকসভার অন্তর্গত, সেখানে দাঁড়িয়ে অনেক কিছুই করতে চাই। আগেও বলেছি এখানে অনেক মাথা আছেন, সবাইকে একটা কমন প্ল্যাটফর্মে এনে কাজগুলো করতে হবে। কী চাহিদা সেটাও বুঝতে হবে। আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে, তার বাইরে গিয়ে সব চাহিদা পূরণ করতে পারি না আমরা। তবে সাবট্যানসিয়াল কিছু করার চেষ্টা করব টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য। আর আমার তো একটা ঋণও আছে টালিগঞ্জের কাছে।’ রাজনৈতিক কাজের মধ্যে ভালো সিনেমা-সিরিজের অফার এলে করবেন? উত্তর দিতে একটুও সময় নিলেন না সায়নী, ‘অবশ্যই করব। অ্যাক্টিং ইজ মাই ফার্স্ট লাভ, আগেও বলেছি। ভালো চরিত্র, ভালো পরিচালক পেলেই করব। সকলের ভালোবাসায় আজ আমি এইখানে আসতে পেরেছি।’
জুন- ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে এসেও রাজনীতিক হিসাবে ইতিমধ্যেই ছাপ ফেলেছেন জুন মালিয়া। মেদিনীপুর থেকে এবারও জিতেছেন। দুমাসের লড়াইয়ের পর কি এবার বিশ্রাম? অভিনেত্রীর স্পষ্ট জবাব, ‘না, বিশ্রাম নেওয়ার জায়গাই নেই। এই তো সামনের ৯ তারিখ ওরিয়েন্টেশনের জন্য দিল্লি যাওয়ার কথা। মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় ফিরে আটেই দিল্লি বেরিয়ে যাওয়ার কথা। সামনে অনেক কাজ।’ সিনেমার মানুষ হিসাবে রাজনীতির লড়াই কতটা কঠিন ছিল? ‘আমার দুটো সত্তা এখন। দুটো আলাদাভাবে ট্রিট করি। সুতরাং আমার জন্য এটা কঠিন ছিল না। হ্যাঁ, ময়দানের লড়াই শক্ত ছিল নিশ্চয়ই, খুবই। বিধানসভা, লোকসভা, দুবারই কঠিন ছিল।’ অকপট অভিনেত্রী। এবার কী রাজনীতির পাশাপাশি সিনেমা-সিরিজের কাজ এলে সম্মতি দেবেন? “নিশ্চয়ই ‘হ্যাঁ’ বলব। অভিনয় তো ভুলতে পারি না। সবকিছু আমার হয়েছে অভিনয়ের জন্য। তবে হয়তো মেগা সিরিয়াল করাটা ডিফিকাল্ট হবে, এই ছয় মাস। আগে আমাকে দেখে নিতে হবে কতটা সময় বের করতে পারছি। আগামিদিনে ছবি-ওয়েব সিরিজও করব। আর যদি বম্বে থেকেও প্রস্তাব আসে করব। আগে যেমন এড়িয়ে চলতাম। কারণ ডেলি সোপ করতাম, জানতাম সময় দিতে পারব না বম্বেতে। অডিশন দিতেও যাইনি। এবার সুযোগ এলে না বলব না। আর আগের তিন বছরের মতোই মেদিনীপুর-কলকাতা মিলিয়েই থাকব।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.