Advertisement
Advertisement
Bagha Jatin Review

‘বাঘা যতীন’ ইতিহাসকে ধরেছে যত্নে, নিজের সেরাটা দিলেন দেব, পড়ুন রিভিউ

দেব বাঘা যতীনের চরিত্রে আবেগ দিয়ে মিশে গিয়েছেন।

Dev new Movie Bagha Jatin Review| Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:October 20, 2023 9:34 am
  • Updated:October 20, 2023 9:57 am  

প্রিয়ক মিত্র: উনিশ শতকের যে যুবসমাজ সামাজিক নিগড় ভাঙার আন্দোলনে নেমেছিলেন, তাঁদের কাছে জ্ঞান, যুক্তি এবং পাণ্ডিত্যের আয়ুধ ছিল বটে, কিন্তু বোমা-বন্দুকের ধারেকাছেও তাঁরা ছিলেন না। ডিরোজিওর ছাত্রদের আন্দোলন, রামমোহন-বিদ্যাসাগরের সমাজ-সংস্কার, ছাপাখানা ও ত‍ৎপরবর্তী নানা সামাজিক অভ্যুত্থান– সব মিলিয়ে বিনয় ঘোষের ভাষায় যা ‘বাংলার নবজাগৃতি’, তা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করল বিশ শতকের গোড়ায় এসে, যখন একশো বছর আগে মা কালীকে নিয়ে তামাশা করা যুবকদের উত্তরসূরিরা সেই কালীরই পায়ে গড় করে বোমা মারতে গেল ব্রিটিশদের ওপর। শুধু ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের সঙ্গে এই অগ্নিযুগের প্রারম্ভের যে মিলটুকু ঐতিহাসিকভাবে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, তা হল দিশাহীনতা। ‘বাংলার বিপ্লব প্রচেষ্টা’-র দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের শুরুতেই ওইজন্য হেমচন্দ্র দাস কানুনগো লিখেছিলেন, “আমাদের মধ্যে যেটুকু কর্ম্মপ্রবণতা জেগে উঠেছিল,— যা এ দেশের পক্ষে সম্পূর্ণ অভিনব, তা ঠিক পথে চালাতে হলে, গন্তব্যটা যে কি, আমাদের সকলের তার অল্পবিস্তর ধারণা আগে করা উচিত ছিল।”

[আরও পড়ুন: ‘আমরাই শুরু করেছিলাম’, নস্ট্যালজিক ‘লক্ষ্মী কাকিমা’, দেখুন অপরাজিতা আঢ্যর পাড়ার পুজো]

১৯০২ থেকেই বাংলার কোণে কোণে শুরু হয়েছিল গুপ্ত সমিতির বিস্তার। ‘অনুশীলন সমিতি’ ‘যুগান্তর’-সহ বাকি সংগঠনগুলির চোরাগোপ্তা গতিবিধি মাপতে চেয়ে তৎপরতা শুরু হচ্ছিল ব্রিটিশ পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগেও। আর এসবের মধ্যেই ১৯০৩ সালে অ্যান্ড্রু ফ্রেজারের চিঠিতে আভাস মিলছে বঙ্গভঙ্গর। তারপর ১৯০৫-এর ১৯ জুলাই চূড়ান্ত হবে বঙ্গভঙ্গ। ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হওয়ার দিনে বাড়িতে বাড়িতে ‘অরন্ধন’, রবীন্দ্রনাথের ডাকে রাখিবন্ধন থেকেই মোড় ঘুরছিল ইতিহাসের। এই সময়কালে কলকাতায় প্রিন্স ওয়েলসের শোভাযাত্রায় মহিলাদের বিরক্ত করা কয়েকজন গোরা মিলিটারি পিটিয়ে খোদ যুবরাজের নজরে এলেন যে যুবক, তাঁর নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ওরফে ‘বাঘা যতীন’।

Advertisement

বাংলার অগ্নিযুগে বিলেতফেরত অরবিন্দ ঘোষ ও তাঁর ভাই বারীন ঘোষ, প্যারিস থেকে বোমা বানানো শিখে আসা হেমচন্দ্র দাস কানুনগো, লন্ডন-ফেরত, কলেজে সাহেব অধ্যাপক-পেটানো উল্লাসকর দত্তদের গেরিলা বিপ্লব যদি নিষ্প্রভ বাঙালিকে প্রথম ধাক্কাটা দিয়ে থাকে, তবে দ্বিতীয় ঝড়টা এসেছিল কিন্তু বাঘা যতীনের হাত ধরেই। রাসবিহারী বসু, সুভাষচন্দ্র বসুদের আইএনএ ফৌজ ও যুদ্ধপ্রস্তুতির আগে, বাংলা থেকে প্রথম ব্যাপক স্তরের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ঘটেছিল তঁার হাত ধরেই। দেব-অভিনীত অরুণ রায়ের ‘বাঘা যতীন’ সেই বিপ্লবের ইতিহাসকেই ধরেছে যত্ন করে। রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাই, পাবলিক প্রসিকিউটর আশুতোষ বিশ্বাস, পুলিশ অফিসার শামসুল আলমের রাজনৈতিক হত‌্যা থেকে ইন্দো-জার্মান ষড়যন্ত্র, রডা কোম্পানির অস্ত্র লুঠ, হার্ডিঞ্জ হত‌্যার চেষ্টার প্রসঙ্গ হয়ে বুড়িবালামের শেষ যুদ্ধ– রুদ্ররূপ মুখোপাধ্যায়ের গবেষণা, সৌনাভ বসু ও অরুণ রায়ের চিত্রনাট্য, সৌনাভ বসুর সংলাপ ঐতিহাসিকভাবে নিশ্ছিদ্র প্রায়।

শুরুতেই কল্পনার আশ্রয়ের কথা যেহেতু কিছুটা বলা রয়েছেই, তাই কিছু ‘সিনেম্যাটিক লাইসেন্স’ অবধারিত হবেই। কারণ শেষত এটি ফিচার ছবি, কাহিনিচিত্র, তথ্যাচিত্র নয় কোনও মতেই। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য, দেব যদি এই ছবির প্রধান তারকা হয়ে থাকেন, সময়রেখা বজায় রাখা, ইতিহাসের বিকৃতি না করা চিত্রনাট্য এই ছবির দ্বিতীয় তারকা। যদিও যতীন্দ্রনাথের সঙ্গে খালি হাতে বাঘের লড়াই নিয়ে ঐতিহাসিক মতবিরোধ আছে। আর সিনেমার দৃশ্যে প্রাণীহত্যার বিপক্ষে যতীনের সওয়ালের পরেও ওই গোটা দৃশ্যটা হয়তো খানিক অতিরেক, ভিএফএক্স-এর প্রয়োগও হয়তো দৃশ্যের দৈর্ঘ্যের জন্যই কিঞ্চিৎ চোখে লাগে। মুজফ্‌ফরপুরে কিংসফোর্ড হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর কলকাতা পুলিশের লালবাজার ফোর্সের কুখ্যাত মুরারিপুকুর রোডে অরবিন্দ ও বারীন ঘোষ একই বাড়ির একই ঘর থেকে গ্রেপ্তার হননি, অরবিন্দ সেসময় ছিলেন স্কট লেনের বাড়িতে। তাঁর ‘কারাকাহিনী’-র শুরুতেই সেকথা বলা। কিন্তু এতটা যত্নশীল ইতিহাসের প্রদর্শনে এই সামান্য বিচ্যুতিগুলিকে ত্রুটি বলে বিবেচনা করা যায় না খুব একটা।

নামচরিত্রে দেব ছাড়াও যতীনের দিদি বিনোদবালার চরিত্রে সুদীপ্তা চক্রবর্তী অনবদ্য। তাঁর চোখের ভাষায়, নীরবতায় যে অভিনয়, তা মনে থেকে যায়। যতীনের স্ত্রী ইন্দুবালার চরিত্রে সৃজা দত্ত যথাযথ, যদিও তঁার উচ্চারণ কিছুটা সময়ানুগ হতে পারত। অন্য প্রায় সবকটি চরিত্রে অভিনেতা নির্বাচনের জন্য কুর্নিশ জানাতেই হয় সৃজা ভট্টাচার্যকে। অরবিন্দ ঘোষের চরিত্রে সজল মণ্ডল, হেমচন্দ্র দাস কানুনগোর চরিত্রে সুমন্ত রায়, বারীন ঘোষের চ‍রিত্রে সন্দীপ ঘোষ, রাসবিহারী বসুর চরিত্রে কোলাজ সেনগুপ্ত, ক্ষুদিরাম বসুর চরিত্রে সামিউল আলম স্বল্প প‍রিসরেও চোখ টেনে রাখেন। এক্ষেত্রে মেক-আপ শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুর কথাও বলতে হয়। এছাড়াও টেগার্টের চরিত্রে কার্ল এ হার্ট উল্লেখ্য, শীতল অভিনয়ে তিনি মানানসই। চিত্তপ্রিয় ঘোষের চরিত্রে রোহণ ভট্টাচার্যও উল্লেখযোগ্য। বাদবাকি সব অভিনেতাদের অভিনয়ই এই ছবির সম্পদ হয়ে উঠেছে সব মিলিয়ে। নীলায়ন চট্টোপাধ্যায়ের সংগীত খুব স্মৃতিধার্য হয়ে থাকে না, তবে রূপম ইসলামের কণ্ঠে ‘জাগো রে বাঘা’ শুনতে ভালো লাগে। শুরুতে উপযুক্ত মীর আফসর আলির নেপথ‌্যকণ্ঠও, বাকি ছবি যদিও খুব একটা ‘ন‌্যারেশন’-এর উপর দাঁড়িয়ে নেই।
দেব বাঘা যতীনের চরিত্রে আবেগ দিয়ে মিশে গিয়েছেন। দৃপ্ততায়, দৃঢ়তায়, ভালোবাসায় তিনি এই চরিত্রের সঙ্গে বাস করেছেন, বোঝা গিয়েছে তা পরতে পরতে। এই ছবি তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে মনে রাখার মতো হয়ে থাকবে, এটুকু বলাই যায়।

ম‌্যান অফ দ‌্য ম‌্যাচ : দেব

[আরও পড়ুন: রং মিলান্তি পোশাকে জমল কাঞ্চন-শ্রীময়ীর চতুর্থী, এই পুজোতেই আমি থেকে ‘আমরা’]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement