‘সর্বজয়া’ হয়ে ফিরছেন ছোটপর্দায়। তার আগে টেলিফোনের মাধ্যমে একান্ত সাক্ষাৎকারে ধরা দিলেন দেবশ্রী রায় (Debashree Roy)। মন খুলে কথা বললেন তিনি। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
এই বিধিনিষেধ বা আত্মশাসনের দিন কীভাবে কাটাচ্ছেন?
আমি আবার ৫০০-৬০০ কুকুরকে খাওয়ানো শুরু করেছি। অনুদান নেওয়া ছাড়াও, ব্যক্তিগত ভাবেও ওদের জন্য ব্যয় করছি। রোজ বিকেলবেলা বেরচ্ছি, পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। ঘুরে ঘুরে দেখছি যেখানে অফিস আছে বা দোকান আছে, সেগুলো বন্ধ থাকায় ওই চত্বরগুলোয় ডগিরা খেতে পাচ্ছে না। ওদের খাওয়ার বন্দোবস্ত করছি। তারপর সাতটা-সাড়ে সাতটায় বাড়ি ফিরে আসি।
ইতিমধ্যে জি বাংলায় (Zee Bangla) আপনার অভিনীত ‘সর্বজয়া’-র প্রোমো চলে এসেছে। ছোটপর্দায় আবার ফেরার সিদ্ধান্ত কেন?
কারণ প্রথমত, এই মুহূর্তে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা খারাপ। দ্বিতীয়ত, এখন তো সেইরকম ভাবে আর ছবি হচ্ছে না। তৃতীয়ত, হয়তো আমি পছন্দমতো চরিত্র পেলে ছবিতে করব। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি যখন একটা ক্ষেত্র ছেড়ে এসেছি, আমার মনে হচ্ছে আমার অভিনয় দেখার জন্য দর্শকের যে চাহিদা, যে দর্শক ভালবাসে দেবশ্রী রায়কে, তাকে আবার নিয়ে আসতে চাই পর্দায়। সেই জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি আবার যদি ছোটপর্দায় ফিরি তাহলে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাব। আর ওদের যে চাহিদা, কেন দেখতে পাওয়া যায় না দেবশ্রী রায়কে- সেই আশা কিছুটা পূরণ করতে পারব।
অনেক আগে আপনি টেলিভিশন করেছিলেন…
হ্যাঁ, সেটাই বলছি। টেলিভিশনে তো হঠাৎ করে ফিরছি না। যখন প্রচুর ফিল্ম করেছি, সেই সময়ে ‘দেনা পাওনা’ করেছিলাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আমি কোনওদিন ছোটপর্দা-বড়পর্দা পার্থক্য করিনি। তখন ‘নগরপারে রূপনগর’ ব্লকবাস্টার হিট হয়েছিল। তারপরে যিশু দাশগুপ্তর ‘বিরাজ বউ’ করেছিলাম। ‘রত্নদীপ’ করেছিলাম। ‘বানজারণ’ করেছি দূরদর্শনের জন্য। আর ‘মহাভারত’ তো করেইছিলাম। প্রচুর কাজ। ‘লৌহকপাট’-এর একটা এপিসোড করেছিলাম। আর আমি যখন টেলিভিশন করেছিলাম, কোনও লিডিং হিরোইন সাহস পায়নি টেলিভিশন করতে। কেন করেছিলাম জানো? কারণ আমি জানতাম, এই চরিত্রগুলো, যেমন–‘ষোড়শী’, ‘জ্যোতিরানি’ বা ‘লৌহকপাট’-এ মঞ্জু দে-র রোলটা, এইগুলো ফিচার ফিল্মে হবে না, এটা আমি বুঝেছিলাম। একজন অভিনেত্রীর পক্ষে এই চরিত্রগুলো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বলেই করেছিলাম, জানতাম এই চরিত্রগুলো ফিচার ফিল্মে কেউ ভাববে না। তাই ছোটপর্দাতেই করতে হবে। তখনকার নিরিখে বড় পদক্ষেপ নিয়েছিলাম বলতে পারো।
প্রায় দশ বছর অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন, কিন্তু কেন?
ঠিকই। কারণ হচ্ছে আমি পলিটিক্সে ঢুকেছিলাম এবং আমার এনজিও-র কাজ। তারপরে যে ছবিগুলো এসেছিল আমার কাছে, গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমার মনে হয়েছিল ওগুলো করে আমার কিছু হবে না। দর্শকও খুশি হবে না। আমি কোনওদিন ছবি করার জন্য করব ভাবিনি। আজকে আমার যে নামটা আছে, সেই নামটা বজায় রাখতে চাই। সেরকম ডায়নামিক চরিত্র না পেলে, আমি করব কী করে! তার চেয়ে ছবি না করা ভাল। কখন রিলিজ হল, আর কখন চলে গেল দর্শক বুঝতেও পারল না, সেইটায় আমি বিশ্বাস করি না।
আমি শেষবার আপনার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম রেশমি মিত্র-র ‘হঠাৎ দেখা’ ছবির সূত্রে।
ওটা করেছিলাম কিন্তু তারপর আর করিনি।
তার মাঝখানের সময়টায় শিবপ্রসাদ-নন্দিতা, রাজ চক্রবর্তী বা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের তরফে কোনও অফার পাননি?
হ্যাঁ, শিবুর কাছ থেকে এসেছিল। একটা ইনিশিয়াল কথা হয়েছিল কিন্তু তার পর
আর এগোয়নি।
বুঝলাম। এই লেখা বেরনোর দু’দিন পরে ৩০ মে। ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রয়াণ দিবস। যাঁর পরিচালনায় আপনি ‘উনিশে এপ্রিল’-এর মতো মোড় ঘোরানো ছবির নায়িকা ছিলেন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ওঁকে কতটা মনে পড়ে?
ডেফিনিটলি ঋতুপর্ণকে মনে পড়ে। সেই মেকিং অফ ‘উনিশে এপ্রিল’। ঋতুপর্ণর
সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল, দীপঙ্কর দে-র মেয়ের বিয়েতে। আমাকে সেদিনই ছবিটা অ্যাপ্রোচ করেছিল। আমি বলেছিলাম, ঠিক আছে। স্ক্রিপ্ট শোনাও। পুরো জার্নিটা মনে পড়ে। তারপর আমরা ‘অসুখ’-এও একসঙ্গে কাজ করেছিলাম।
‘সর্বজয়া’-তে ফিরি। প্রোমোতে আপনাকে নাচতে দেখা যাচ্ছে, খুব সামান্য হলেও। দর্শক কি আবার পর্দায় দেবশ্রী রায়ের নাচ দেখতে পাবেন? যাঁর ট্র্যাক রেকর্ডে রয়েছে ‘কলকাতার রসগোল্লা’…
আমি জানি না (হাসি)। পরিচালক যা বলবেন আমি তাই করব। স্নেহাশিস (চক্রবর্তী) যখন আমাকে অফারটা দেয় ভাল লেগেছিল যে, মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
‘সর্বজয়া’-র চরিত্রটা কেমন?
একলাইনে বলতে পারি যে মহিলার এমন একটি পরিবারে বিয়ে হয়ে গিয়েছে, যেখানে অনেক ঐশ্বর্য-বিত্ত। কিন্তু এই মেয়েটি সহজ-সরল সাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে। এখানে সর্বজয়া বাংলা মিডিয়ামে পড়া, শান্তিনিকেতন ফেরত মেয়ে। অথচ বরের ফ্যামিলি বেশ আপস্টার্ট। তারা সর্বজয়াকে গ্রহণ করতে পারে না সহজভাবে। প্রোমো দেখলেই বুঝবে, সর্বজয়া তাদের কাছে ব্যাকডেটেড। শেষ পর্যন্ত, এই গল্প সর্বজয়ার ঘুরে
দাঁড়ানোর লড়াই। কারণ, একজন মহিলা সব করতে পারে।
শুটিং কীরকম সময়ে শুরু?
লকডাউন-পরিস্থিতি মিটলে, যখন পারমিশন পাওয়া যাবে তখনই হবে।
প্রোমো দেখে প্রতিযোগী চ্যানেলের ‘শ্রীময়ী’-র সঙ্গে কেউ কেউ মিল খুঁজে পাচ্ছে।
কোনও মিল নেই।
রায়দিঘির প্রাক্তন বিধায়ক আপনি। এবার আর নির্বাচনে দাঁড়ানো হয়নি বলে কোনও আক্ষেপ আছে?
একদমই নেই।
তাহলে কি বলা যায়, রাজনীতির প্রাঙ্গণের চেয়ে অভিনয়ের আঙিনা বেশি উপভোগ করেন?
আমি তো অভিনেত্রী, উপভোগ করব না! আমার তো কাজই অভিনয় করা। ছোটবেলা থেকে অভিনয় করছি। চাইল্ড আর্টিস্ট হিসাবে শুরু করেছিলাম। ওটাই আমার প্রথম প্রায়োরিটি এবং প্যাশন।
এখনকার ছবিতে আপনাকে পাব না?
হ্যাঁ, একটা হিন্দি ছবি সাইন করেছি আমি। এক্ষুনি এর বেশি বলা যাবে না। আরও
দু-তিনটে কাজের কথা চলছে। দেখা যাক কী হয় (হাসি)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.