স্বীকার করে নিলেন ‘কসমিক সেক্স’ ছবিটা করা উচিত হয়নি। এই ঋ অনেক পরিণত, আত্মবিশ্বাসী। নতুনভাবে জীবনটা দেখছেন। লিখছেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
অনেক দিন পর আবার মেগা করছেন, কেমন লাগছে?
ভালই লাগছে। ‘ত্রিনয়নী’ সিরিয়ালে আমি ‘রঙ্গনা’। মজার একটা চরিত্র। এর আগে আমি যে ধারাবাহিক করছিলাম, সেখানে নেগেটিভ চরিত্র ছিল। আমি এখন আর নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে চাইছি না। এখানে রঙ্গনা বেশ বোকা সরল একটি মেয়ে। একটা কমিকাল ব্যাপার আছে। আমি নিজেও মজার মানুষ, তাই ভাল লাগছে। স্ক্রিপ্টটা বেশ টাইট। এখানে আমি মেজ বউ। যেখানে পরিবারের সবাই সবার বিপক্ষে প্লট করছে, সেখানে রঙ্গনা তা করতে পারে না। সবার কথা শুনে ফ্যালে, তারপর কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। সব মিলিয়ে একটা রিলিফের কাজ করে। আর রঙ্গনা কোনও পলিটিক্সের মধ্যে থাকে না। শাশুড়ি ওকে নিয়ে হিমসিম খায়। কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। একটা রিফ্রেশিং ব্যাপার আছে।
নিজের ইমেজ ভেঙে এরকম একটা বোকা মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে কেমন লাগছে? আপনার চেহারাটাও তো এমপাওয়ার্ড।
এটা একটা চ্যালেঞ্জ তো নিশ্চয়ই। যখন প্রথম লুক টেস্ট হয় তখন সাহানাদি বলেছিল, পারবি তো? আমি লুক টেস্টে প্রায় বাদ পড়ে গিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, পারব না কেন, আমি তো অভিনেতা আমাকে যে চরিত্র দেবে আমি করে দেব। সাহানাদি আমাকে বলল তুই সারেন্ডার করে দে। যাই হোক, একটা নেগেটিভ চরিত্র করার চাইতে এরকম একটা মজার চরিত্র করতে ভালই লাগছে।
এই যে কয়েকটা ছবি করার পর একটা দুই আড়াই বছরের একটা গ্যাপ ছিল, সেটা কেন?
আমি জানি না। হয়তো পরিচালকরা আমার উপর ভরসা করতে পারছিলেন না। কিছু ভুল তথ্যও বাজারে ছড়াচ্ছিল। ঋ করবে কী করবে না, ডেডিকেটেডলি সিরিয়ালের কাজ করতে পারবে কি না, মাঝপথে ছেড়ে চলে যাবে না তো! এই ভুল ভাঙতেও সময় লাগে, সেই সময়টুকু তো দিতেই হবে।
কী মনে হয়, এই ধরনের কথা কেন উঠেছিল?
আমি বলছি না পুরোটা ভুল। আমি মুডি ছিলাম একটা সময়ে। এখন অনেকটা পালটেছি নিজেকে কিন্তু সেটা তো লোকের জানতে সময় লাগবে। এখন অনেক কাম ডাউন করেছি। আগে কোনও কিছু তীব্রভাবে অপছন্দ হলে আমি বেরিয়ে যেতাম কাজ ছেড়ে। আমার এই নতুন কাজটা আমার অ্যাটিটিউড অনেকটা বদলেছে।
এই যে একটা সময় আপনি অল্টারনেটিভ সিনেমার ফেস হয়ে উঠেছিলেন, আর এখন আপনি মেগা সিরিয়াল করছেন এটা ভাবলে কিছু মনে হয়?
নট অ্যাট অল! আই অ্যাম অ্যান অ্যাক্টর, অ্যান্ড অ্যাম গুড অ্যাট থিংস আই ডু। আমার প্লেটে যাই দেবেন, তার মধ্যে থেকে আমি ভাল একটা রান্না করে বানিয়ে দেব।
২০১০ বা ২০১১ যখন আপনি অল্টারনেটিভ ছবি করছেন আর এখন যখন আপনি মেগা করছেন- এই দুটো সময়ের ঋতুপর্ণা কতটা আলাদা?
অনেক, অনেকটা বদলেছি। জীবন আমাকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে এবং তার জন্য আমি সত্যি খুব থ্যাংকফুল জীবনের প্রতি। এবং সাহানাদিকেও একটা বড় থ্যাংকস জানাতে চাই, ঠিক যে সময়টাতে আমার এরকম একজনের দরকার ছিল, অর্থের প্রয়োজন ছিল, শি অ্যাপ্রোচড মি। আর যখন আমি অল্টারনেটিভ ছবি করছি তখন একটা অন্য মানসিক ঘোরে ছিলাম। যতটা না নিজের সিদ্ধান্তে কাজ করেছি, তার চেয়েও বেশি করেছি কারণ একটা টিম বানিয়ে কাজ করছিলাম, সঙ্গতভাবে কাজ করেছি। এখন সেই ধরনের চরিত্র এলে অনেক ম্যাচিওরভাবে হ্যান্ডেল করব। যে আমাকে দিয়ে কাজটা করতে চাইছে সে কী ভাবছে, আমাকে দিয়ে কী এবং কেন করাতে চাইছে, সেটা আগে যাচাই করে নেব।
[আরও পড়ুন: ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’ গল্পের আসল স্টার কঙ্গনাই]
একটা লেবেল করে দেওয়া হয়। ছবিতে ন্যুডিটি থাকলেই ঋ-কে বলা যায়, এরকম একটা ধারণা আছে। এখন তেমন চরিত্রে অফার এলে কীভাবে হ্যান্ডেল করবেন?
যারা এটা ভেবে আসবে যে নগ্নতা মানেই ঋ, আই উইল থ্রো দেম আউট। কাজ করার প্রথম শর্ত হল আমি কার সঙ্গে কাজ করতে চলেছি। এখন যদি বিশাল ভরদ্বাজ বা জোয়া আখতার আমাকে বলে আমি জানি তাঁরা সেনসিটিভলি নগ্নতাকে হ্যান্ডেল করতে পারবেন অ্যান্ড আই নো হোয়্যার আর দে কামিং ফ্রম। এখন কলকাতায় কেউ আমাকে নগ্নতা নিয়ে অ্যাপ্রোচ করলে আমি লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে কাজ করব কি না, যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
কী মনে হয় কলকাতার পরিচালকরা নগ্নতা সেনসিটিভলি হ্যান্ডেল করতে পারেন না?
হয়তো তাঁরা ম্যাচিওর কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে আমাকে অবজেক্টিফাই করেছেন। অল অফ দেম হ্যাজ ডান দ্যাট। আমি আর নিজেকে অবজেক্টিফায়েড হতে দেব না।
এই যে ঋ মানেই বোল্ড নায়িকা বা কারও প্রাক্তন বান্ধবী-এই লেবেলগুলো ঝেড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে না?
এই লেবেল আমি নিজেকে দিইনি, আমি কারও থেকে নিইওনি। আমার কিছু এসে যায় না। আর সত্যি কথা বলতে কী, কারও সাহস নেই যে আমার সামনে এসে কিছু বলবে। আমি কেয়ার করি না। আমি আমার জীবনটা বাঁচতে চাই। আই অ্যাম হ্যাপি ইন মাই লাইফ। আই অ্যাম ফ্রি, আই অ্যাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট। আমার নিজেকে ভাল লাগে এখন। নিজেকে আয়নায় দেখলে মনে হয় একটা নতুন, ফ্রেশ মানুষকে দেখছি। আই অ্যাম হ্যাপি উইথ মাইসেল্ফ। আমি নিজের কাজ নিয়ে ভাবতে ভালবাসি। অন্য কেউ ভাল কাজ পেয়ে গেল কি না, সেটা নিয়েও আমার হিংসে হয় না। আমি ভাল শট দিলাম কি না, আমার সিনটা কেমন সেটা নিয়ে ভাবি। কে আমার সঙ্গে কবে ব্রেক-আপ করেছে, সেসব আমি মনেও রাখি না। অফকোর্স আমি জানি আমার ব্রেক-আপ হয়েছে কিন্তু সেটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, সবার হয়। অ্যান্ড থ্যাংক গড ফর দ্যাট! আমি এখন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করছি। আই অ্যাম ফ্রি, নিজের জন্য নিজে উপার্জন করছি, আই অ্যাম বাইং মাইসেল্ফ অল দ্যাট আই নিড। আমার চারপাশে অনেক নতুন পুরুষ। তারা আমাকে অ্যাটেনশন দিচ্ছে, আমি সেটা আমার মতো করে এনজয় করছি।
সম্পর্কে থাকা না থাকার পার্থক্যটা কতটা এনজয় করছেন?
দারুণ, ঝাড়া হাত-পা। মন দিয়ে কাজ করতে পারছি। কোনও ব্যাগেজ নেই! সম্পর্কে থাকলে কেয়ার করার লোক যেমন থাকে, তার সঙ্গে থাকে ঝগড়াঝাঁটি, ট্রাস্ট ইস্যু। এখন আই নো অ্যাম দেয়ার ফর মাইসেল্ফ, হুইচ ইজ গ্রেট!
সম্প্রতি ‘তিনকন্যা’র শুটিং করলেন। আপনার চরিত্রটা কেমন?
এটা তিনটে মেয়ের গল্প। আমি বিনোদিনী। আমাকে দিয়ে শুরু হচ্ছে। বিনোদিনী হাউস ওয়াইফ। বর, বাচ্চা আছে। সে কিছু করতে চায়। নিজের মনের মতো কাজ। থিয়েটার জয়েন করতে যায়, সেখানে গিয়ে তাকে কম্প্রোমাইজ করতে হবে এমন পরিস্থিতি এলে সে কী স্ট্যান্ড নেয়, সেটা নিয়েই গল্প। ছোট কাজ। কিন্তু করে খুব ভাল লেগেছে।
এছাড়া আর কী করলেন এর মধ্যে?
বিজয় নাম্বিয়ারের সঙ্গে একটা ওয়েব সিরিজ করলাম ‘স্লিপ’ বলে। গেরিলা মুভমেন্ট নিয়ে। এটা ‘ইরস’-এর। কেরলে শুট হয়েছিল।
টলিউডের প্রিয় পাত্রী আপনি কোনওদিনই ছিলেন না। তথাকথিত প্রথম সারির পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা হয়নি। রাগ-অভিমান হয় না?
একেবারেই প্রিয় পাত্রী নই। দেখো, তাদের ছবিতে সুযোগ পেতে গেলে যে পলিটিক্স বা পলিটিকাল জার্নির মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেটা আমি করিনি। আই অ্যাম টু কেয়ার ফ্রি ফর দ্যাট। এবং সেটা আমি ভাল বলেই মনে করি। যে যার নিজের মতো, আমি এইরকমই। তার জন্য যদি এক্স ওয়াই জেড-এর সঙ্গে কাজ করা না হয়, দ্যাট্স ফাইন।
পলিটিকাল জার্নি বলতে আপনি কী বলতে চাইছেন?
ওয়েল পিআর করা, সবটা ঠিক জানি না। এইসব ছবিতে কাজ পাওয়ার নিশ্চয়ই একটা রাস্তা আছে, যে রাস্তায় আমি হাঁটিনি। আর লোকজন ঠিক বুঝেও উঠতে পারে না আমাকে কীভাবে হ্যান্ডেল করবে! (হাসি)
[আরও পড়ুন: ‘উৎসব বন্ধ করে এঁদের টাকা আগে মেটান’, শিক্ষকদের অনশন নিয়ে মমতাকে খোঁচা অপর্ণার]
একটা সময় যেসব এক্সপেরিমেন্টাল ছবি করেছেন, এইভাবে কি সেটার দাম দিতে হয়েছে বলে মনে হয়?
অনেক অনেক দাম দিতে হয়েছে। আই হ্যাভ পেড দ্যাট প্রাইস।
যারা নতুন ছবি করতে আসছে এবং এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করতে চায়, তাদের কী বলবেন?
বি ট্রুথফুল টু ইওরসেল্ফ অ্যান্ড বি অনেস্ট। নিজের মনের কথা শোনো, এবং গো উইথ দ্য ফ্লো। আমি নিজে খুব ক্যালকুলেটিভ নই। যারা নতুন, কাজ করতে চায়, তারা অনেস্টলি কাজটা করুক। কাজ করতে করতে একটা সময় সমস্ত ময়লা পরিষ্কার হয়ে হিরের ঔজ্জ্বল্য দেখা যাবে।
এমন কোনও ভুল আছে, যেটা রিপিট করতে চান না?
নট দ্যাট আই রিমেম্বার। উম… ওয়েল আমার ‘কসমিক সেক্স’ ছবিটা করা উচিত হয়নি। পরিচালক, প্রযোজক আমাকে এটা বলার জন্য হেট করবেন, তবু আমি বলব ওই ছবিটা আমার করা উচিত হয়নি।
আর এমন কোনও ভুল যেটা বারবার করতে চান?
প্রেমে পড়লে আমিই সব সময় প্রথমে বলতে চাই যে, আই লাভ ইউ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.