শম্পালী মৌলিক: এবারে কি তাহলে ওয়েব সিরিজে সেন্সরশিপ আসতে চলেছে? এতদিন যা চলে আসছিল সরাসরি দর্শকের কাছে। প্রত্যেকটা ওয়েব কনটেন্টকে প্রি স্ক্রিনিং কমিটির সামনে আসতে হতে পারে, তেমন দিন কি আসতে চলেছে অচিরেই? ৫ অক্টোবরের বম্বে হাই কোর্টের একটি নোটিস কি সেই দিকেই নির্দেশ করছে?
ভারতীয় ওয়েব শো-এর ক্ষেত্রে রাশ টানার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকে নোটিস পাঠিয়েছে বম্বে হাই কোর্ট। দিব্যা গণেশপ্রসাদ গন্টিয়ার পিআইএল-এর ভিত্তিতে বোম্বে হাই কোর্টের এই নোটিস। দিব্যার আইনজীবী শ্যাম দেওয়ানি জানান, ওয়েব শো-এর কনটেন্টে অনিয়ন্ত্রিত অশ্লীলতা রুখতেই তাঁদের এই পিটিশন। এই ধরনের ওয়েব সার্ভিস প্রোভাইডারের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপের দাবি তাঁদের। অশ্লীলতা ও নগ্নতা সম্প্রচার করা সংবিধানে বিচার্য অপরাধ। পিটিশনে আবেদন করা হয়, যাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফ থেকে একটি প্রি স্ক্রিনিং কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মুক্তির আগে ওয়েব কনটেন্ট সেন্সর করা হবে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা।
বাংলার ‘আড্ডাটাইমস’ ওয়েব প্ল্যাটফর্মের তরফ থেকে কথা বললেন রাজীব মেহরা- “এই ধরনের সেন্সরশিপ দিয়ে ওয়েব কনটেন্টকে আটকানো আজকের দিনে মুশকিল। ইউটিউব, ফেসবুক, হোয়াটঅ্যাপ-এ যা যা আসছে সবই তো তাহলে ওই প্রিভিউ-এর আন্ডারে পড়ে যাবে। করতে হলে এটা প্রথম দিনই করা উচিত ছিল। এখন তো সব ছড়িয়ে গিয়েছে। মানুষের হাতে হাতে মোবাইল। এখন ওয়েব কনটেন্টকে কাঠগড়ায় তুলে কিছুই করা যাবে না। লোকের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এখন বদল আনতে গেলে ব্যাকল্যাশ আসবেই। হয়তো ওঁরা একটা মাপকাঠি করবেন। যেহেতু এটা ব্যক্তিগতভাবে দেখার, পাবলিক ভিউয়িং নয়। ভারতে যদি এটা করেও যে, এই এই জিনিস দেখাতে পারব না, আমেরিকা বা বিদেশের অন্য জায়গা থেকে যে যে কনটেন্ট লোড করা হয় সেগুলো তো থাকবেই! ইন্টারনেট তো কাট করা সম্ভব নয়। তো এই কনটেন্ট ব্লক করা যাবে না। আজকে ফেসবুকের ক্ষেত্রে বা ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রেও তো এটা সম্ভব নয়। এত স্ক্রিনিং এখন করা শক্ত। কিছু একটা গাইডলাইন হয়তো আসতে পারে। পেলে সেই গাইডলাইন মেনে কাজ করব আমরা।”
এখন প্রশ্ন ‘সেক্রেড গেমস’ বা ‘ঘুল’-এর মতো ওয়েবসিরিজ তৈরির স্বাধীনতা কি আর থাকবে? বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’-এর মুখপাত্র জানাচ্ছেন, এখনও তো বিষয়টা লাগু হয়নি। তেমন হলে দেখা যাবে। আমাদের ওয়েব কনটেন্ট মানুষ সাবস্ক্রাইব করে দেখে। অর্থাৎ ক্রেতা ঠিক করে কেন দেখবে বা দেখবে না। সেন্সর হোক বা না হোক দর্শক ঠিক করবে দেখবে কি না। পরিচালক অরিন্দম শীল বলছেন, “আমাদের দেশের স্বভাবটাই হয়ে গিয়েছে সবকিছুর উপর খবরদারি করা। তো ওয়েব সিরিজ একটু করে খাচ্ছিল এখন সেখানেও সেন্সরশিপ আনার চেষ্টা শুরু হল। মৌলবাদীদের নিয়ে মহা জ্বালা। আমরা কিছু করে উঠতে পারব না। আমার প্রশ্ন তাহলে কি নেটফ্লিক্স, আমাজন সবই সেন্সরের আওতায় আসবে? ভারতীয় ওয়েব প্ল্যাটফর্মের প্রোডাকশন না হয় সেন্সরশিপের আন্ডারে এল কিন্তু ইউটিউব খুললে বা নেটফ্লিক্স-আমাজন-এ গেলে, মানে বিদেশি ওয়েব প্ল্যাটফর্ম আমরা উইদাউট সেন্সরশিপ দেখব, আর ঘরের ভেতরের গুলোর ক্ষেত্রে বোকা বোকা সেন্সরশিপ হবে? তেমন হলে খুব চিন্তার ব্যাপার। আমরা যতবারই উন্নত হতে চাই, প্রাপ্তমনস্ক-পরিণত হতে চাই, মৌলবাদীরা তা হতে দেন না।” পরিচালক সঞ্জয় নাগ বলছেন, “আমি যে কোনও ধরনের সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে। ক্রিয়েটিভ স্পেসে সেন্সরশিপ থাকবে কেন? তবে এটা তো এখনও হয়নি, প্রস্তাব মাত্র। একটাই কথা বলব আমরা মহাভারতের মতো লিটারেচার পড়েছি, তাদের নতুন করে শিক্ষিত করা বন্ধ হোক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.