সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘বুদ্ধের মহানির্বাণ’। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কাঁদো কাঁদো আকাশ। ‘রক্তশূন্য’ বাংলায় হঠাৎ করেই ‘রক্তসঞ্চারণ’। কমরেড বুদ্ধবাবু আর নেই। দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে অমৃতলোকে পাড়ি দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee)। বাম জমানার শেষ মুখ্যমন্ত্রী। শেষ আইকনকে হারিয়ে ‘অভিভাবক’হীন বামপন্থীরা। একজন অভিজাত, রুচিশীল, সৎ তথা সংস্কৃতিমনস্ক রাজনীতিককে হারিয়ে রং-দল নির্বিশেষে শোকবিহ্বল রাজনীতির দুনিয়ার সদস্যরা। লাল সেলামে কমরেডকে বিদায় জানালেন তারকারাও।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে আর নেই, কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না বামপন্থী তারকারা। গলা ধরে এল অনীক দত্তর। শোকবিহ্বল শ্রীলেখা মিত্রও কাঁদছেন। স্মৃতির সরণিতে হেঁটে গিয়ে পরিচালক কমলেশ্বর মনে করলেন বাংলার শিল্পায়নের কথা। যে কমরেড একাই লড়ে গিয়েছিলেন বাংলাকে শিল্পসমৃদ্ধ করতে। সোশাল মিডিয়ায় প্রোফাইল ছবি কালো করে নিজেকে বুদ্ধপন্থী বলে পরিচয় দিলেন জীতু কমল।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের নিজের ফ্ল্যাটেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অশীতিপর বুদ্ধবাবু। গত কয়েকদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এদিন সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট বেড়েছিল। অক্সিজেন দেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি! পরলোকের উদ্দেশে রওনা দেন। কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চিকিৎসাশাস্ত্রে গবেষণায় মরোণত্তর দেহদান করছেন। গানের ছন্দ ধার করেই শ্রীলেখার মন্তব্য, “ও আলোর পথযাত্রি এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না। আপনি চলে গিয়ে বেঁচে গিয়েছেন।” শ্রীলেখার কথায়, “বাংলার মানুষ বুদ্ধবাবুর সঙ্গে যেটা করেছে, সেটা ক্ষমার অযোগ্য। কারও কাছে মাথা নোয়ালেন না। কোনও আপোস করলেন না। ওই দুঃখ, এই কষ্ট ভিতরে রেখে মাথা উঁচু করে চলে গেলেন। যেরকমভাবে একজন কমিউনিস্ট নেতার যাওয়ার কথা, সেভাবেই গেলেন। কোনও ঢাকঢোল না বাজিয়ে! এবং আমি বলব, বেঁচে গেলেন। আমার মনে হয়, বুদ্ধবাবুর যোগ্য আমরা নই।”
শোক সামলে অনীক দত্তর মন্তব্য, “গভীর অন্ধকারে কোথাও এককোণে নিভৃতে একটা ছোট্ট প্রদীপ জ্বলছিল। সেটাও নিভে গেল। আজ শোকের থেকেও বেশি ক্রোধ হচ্ছে। ভয়ংকর রাগ হচ্ছে।” কেন? সেই উত্তরও অনীক নিজেই দিয়েছেন। বুদ্ধস্মরণে তাঁর মন্তব্য, “আমরাই আপনাকে ব্যর্থ হতে দিয়েছি স্যর। আমাদের ক্ষমা নেই। তার ফল ভুগছি। আরও ভুগতে হবে।”
পরিচালক-অভিনেতা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, যিনি বরাবর বামপন্থায় বিশ্বাস করেন, সিনেমার কাজের বাইরে দুস্থ মানুষদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাও করেছেন, তিনি জানালেন, “আজ বাংলায় যদি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাত ধরে শিল্পায়ন শুরু হত, তাহলে আপামর বাংলার মানুষ একটা অন্য ধরনের পশ্চিমবঙ্গ দেখতে পেত।” যে সিঙ্গুরকাণ্ড পশ্চিমবঙ্গে বানশিবিরের অবসান ঘটিয়েছিল, সেই দগদগে ক্ষত যে আজও কমরেডরা ভোলেননি, সেকথা আবারও প্রকাশ পেল তাঁর কথায়।
সোশাল মিডিয়াতেই জীতু কমল জানালেন, “আজ থেকে আর কমরেড বলে আমায় নাই বা ডাকলেন। আর যদি ডেকেও ফেলেন, দয়া করে একটিবারের জন্য অনুমতি চাইবেন। সিপিআইএম রইলাম না আর। বুদ্ধপন্থী বলে রইল আমার পরিচয়। সুবিধা-অসুবিধা কোনও কিছুই কিন্তু নিইনি কোনওদিন। তাই পালটিবাজ, ধাপ্পাবাজ, চিটিংবাজ ভাষাজ্ঞান শূন্য মন্তব্য নাই বা করলেন সিপিআইএম। আমার বন্ধু, আমার পথপ্রদর্শক, আমার ঈশ্বর বিদায় তোমায়। পরপারে স্লেট হাতে আবার যাব, পিছু পিছু তোমার।” পাশাপাশি কোথাও একটা আক্ষেপও জুড়ে দিলেন অভিনেতা। সেই পোস্টেই তাঁর সংযোজন, “হিড়িক পড়েছে ছবি দিয়ে ব্যতিক্রমী পোস্ট করার, হিড়িক পড়েছে শ্রদ্ধার ঝুলি খুলে দিয়ে রাজপথে ফুল ঝরানোর, হিড়িক পড়েছে ওর সঙ্গে জড়িত সমস্ত সুখ স্মৃতি উজাড় করার, হিড়িক পড়েছে কমরেড বলে একে-অপরকে সম্বোধন জানানোর।” লোকসভা ভোটে বামেদের হয়ে লড়েছিলেন দেবদূত ঘোষ। পিতৃহারা কমরেড হিসেবে তাঁর মন্তব্য, “বহিবারে দাও শক্তি।”
শেষবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ভগ্ন শরীর নিয়েই কোনওক্রমে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড পর্যন্ত এসেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, যদি খারাপ সময়ে একবার মঞ্চে গিয়ে দলীয় কর্মীদের সাহস জোগানো যায়। বারো মিনিটেই ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন তিনি। ভঙ্গুর বামদুর্গের কর্মীদের আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা করতে টনিকের মতো কাজ করেছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.