সন্দীপ্তা ভঞ্জ: প্রত্যেক মহিলাদের কুর্নিশ জানিয়ে আজ ৬ মার্চ মুক্তি পেল ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’। যে ছবি মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলে। যে ছবি প্রকৃতপক্ষে সমাজের সবস্তরের নারীদের গল্প বলে। আর সেই সিনেমাতেই নারীশক্তির জয়গান গাইলেন চার গায়িকা। কারণ, ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ছবিতে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি গানই মহিলাকণ্ঠে। গেয়েছেন সুরঙ্গনা, উজ্জিয়িনী, লগ্নজিতা এবং সোমলতা।
উল্লেখ্য, এই প্রথম কোনও টলিউড ছবিতে শুধুমাত্র মহিলাকণ্ঠের গানই ব্যবহার করা হয়েছে। ছবির গানে নেই কোনও পুরুষকণ্ঠ। যেখানে বাংলা হোক কিংবা বলিউডের কোনও সিনেমার গানে মহিলাদের থেকে পুরুষকণ্ঠের আধিক্যই বেশি থাকে। কিংবা গাইতে দিলেও গানের মধ্যে সেভাবে মহিলাকণ্ঠের আধিক্য থাকে না, এমন অভিযোগ কিন্তু অনেকের কাছেই শোনা যায়। সেখানে উইন্ডোজ প্রযোজিত এই ছবিতে শুধুমাত্র মহিলাকণ্ঠের গানই রাখা হয়েছে। নারীকেন্দ্রিক ছবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই অবশ্য এই সিদ্ধান্ত। তবে, পরিচালক-প্রযোজকের এই উদ্যোগে বেজায় খুশি সুরঙ্গনা, উজ্জয়িনী, লগ্নজিতা এবং সোমলতা।
যে ছবি নারীদের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে, সেই ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে উচ্ছ্বসিত চার গায়িকাই। ‘কোন গোপনে’ গানটি গেয়েছেন সুরঙ্গনা। ‘তুই চল’ গানটি সোমলতা আচার্য চৌধুরির গাওয়া। যে গান দুটি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে মন ছুঁয়েছে শ্রোতাদের।
সোমলতার কথায়, “প্রথমত বাংলা ছবিতে এখন যা হয়, খুব বেশি হলে একটা গানের ৩ লাইন গাওয়ানো হয় গায়িকাদের দিয়ে। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র মহিলাদের কথা ভেবে কোনও ছবি বানানো কিংবা শুধু মহিলাকণ্ঠের গান ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত খুবই প্রশংসনীয়। ‘রঞ্জনা’র পর প্রায় বছর দশেক পরে এরকম একটা গান গাওয়ার সুযোগ পেলাম, যেখানে মহিলাকণ্ঠের চাহিদা রয়েছে। অনিন্দ্যদার লেখা গান নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অদ্ভূত সুন্দর। আমাদের সমাজে মহিলাদের যে অবস্থান, আমার গান ‘তুই চল’ গানটি তাঁদের উদ্বুদ্ধ করবে।”
“বাংলা ছবি শুধু কেন, হিন্দি ছবির কথাও বলব। শেষ ২-৩ বছরে মূল ভোকালিস্টের গানের শেষে কিংবা অন্তরার শুরুতে মহিলাদের দুটো লাইন ছাড়া, শুধুমাত্র মহিলাকণ্ঠ নিয়েই একটা গোটা গানের সংখ্যা খুবই কমে গিয়েছে। অলকা ইয়াগনিক, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি কিংবা শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠেও একটা গোটা গান শুনেছি। কিন্তু এখন তো মহিলাদের জন্য কোনও সুযোগই নেই সেরকম। সবাই সবসময়ে বলে শুধুমাত্র চিত্রনাট্যের প্রয়োজনেই নাকি পুরুষকণ্ঠ দরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’র এরকম একটি উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে খুব ভাল লাগছে”, বলছেন লগ্নজিতা।
সুরঙ্গনার কথায়, “যেহেতু নারী দিবস উপলক্ষে মুক্তি পাচ্ছে, তাই ছবির অ্যালবামকে আমরা ‘সেলিব্রেশন অফ ওমেনহুড’ বলতেই পারি। অসম্ভব মেলোডিয়াস এবং ভার্সেটাইল একটা অ্যালবাম। আর এই মহিলাকণ্ঠের ব্যাপারে বলব, মানুষ যখন কাজের ক্ষেত্রেও লিঙ্গ ভেদাভেদ ভুলে যাবে, শুধুমাত্র তখনই বৈষম্যগুলো উঠে যাবে।” ছবি প্রসঙ্গে সুরঙ্গনার মত, ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ভীষণ জরুরি একটা ট্যাবু ভাঙার কথা বলে। পিরিয়ডস নিয়ে যে সমাজের একটা বিরাট অংশ এই ট্যাবুর দ্বারা প্রবাবিত, তা ভাবলেও ভয় হয়। ২০২০ সালে যখন আমরা জাত-পাত, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ সবকিছু বৈষম্য বিভেদ মেটানোর চেষ্ট করছি, তখন ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটির একটা অংশ হতে পেরে আমিও খুব খুশি।”
উজ্জয়িনীর কথায়, “ইচ্ছেপূরণ। অনিন্দ্যদার সঙ্গে অনেকদিনের কাজ করার ইচ্ছে। অবশেষে ছবির ‘তুই চল’ গানটি শুনে ফোন করে বলে ফেললাম, ‘যে আমি কবে গাইতে পারব!’ তো এই প্রথম ওনার সুরে এবং কথায় গাইলাম। উইন্ডোজের সঙ্গেও এই ছবির মাধ্যমে যুক্ত হলাম। আমার গানটা যে সময় এবং প্রেক্ষাপটে ছবিতে এসেছে সেটার জন্য আমি গর্বিত। লক্ষ্মী মেয়ে দস্যি হোক না, পালটাক না দিন আজকে… বুড়ো আঙুল দেখাক না সমাজকে.. এই লাইনগুলো শবরীর জার্নির জন্যে একেবারে উপযুক্ত। যদিও ৪টে গানই আমার পছন্দের। রুদ্রনীল চৌধুরিকেও ধন্যবাদ জানাব, যিনি বাকি গানগুলো অ্যারেঞ্জ করেছেন। ”
পাশাপাশি পুরুশকণ্ঠের আধিক্য নিয়ে তিনি এও বলেন যে, “মশালা ছবিগুলোর ক্ষেত্রে যেহেতু পুরুষ চরিত্ররা মুখ্য ভূমিকায় থাকে সাধারণত, তাই বোধহয় প্রয়োজনের খাতিরেই মহিলাকণ্ঠটা সেখানে ব্রাত্য থাকে। এই ছবির ক্ষেত্রেও প্রয়োজনের খাতিরেই শুধু মহিলাকণ্ঠ ব্যবহার করা হয়েছে। গায়কদের থেকে গায়িকাদের পারিশ্রমিক কম, এসব ইস্যুর সম্মুখীন তো হতে হয়েইছে। কিন্তু আমরা বোধহয় এই পেশাগত ক্ষেত্রেও লিঙ্গ বৈষম্য ঘুঁচে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম, রয়েছি। আর সেই সুদিন যে অবশেষে আসছে কিংবা এসে গেছে, এই উপলব্ধিটাই ভাল লাগছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.