এই নিয়ে জাতীয় পুরস্কারের হ্যাট্রিক। মানে তিন নম্বর জাতীয় পুরস্কার। সেরা ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরিং-এর জন্য এবার তাঁর ঝুলিতে দু’-দুটো জাতীয় পুরস্কার। এক ‘উরি’ এবং দ্বিতীয়ত ‘চিলড্রেন অফ সয়েল’। উচ্ছ্বসিত তো বটেই, তবে আগামী ছবি ‘ব্রহ্মাস্ত্র’র কাজ নিয়েও বেজায় ব্যস্ত। তার মাঝেই মুম্বই থেকে ফোনালাপ সারলেন বিশ্বদীপ চট্টোপাধ্যায়। কথা বললেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পর্দায় ছবির কাহিনি ফুটিয়ে তুলতে হলে আবহ সংগীতের গুরুত্ব যে ছবির কাহিনির চেয়ে কোনও অংশে কম নয় কিংবা তারই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। কাজেই কোনও ছবির আবহ সংগীত বা ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড ডিজাইন করার সময়ে সেই ছবি নিয়ে গবেষণার কাজও কাহিনিকারের গবেষণার তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। আর সেই ছবি যদি হয়, ঐতিহাসিক কিংবা বাস্তব কোনও ঘটনা অবলম্বনে, তাহলে সেই তাঁর চ্যালেঞ্জ বেড়ে আরও দ্বিগুণ হয়। ‘উরি’র সাউন্ড ডিজাইন গিয়ে সেরকমই অভিজ্ঞতা হয়েছিল বিশ্বদীপ চট্টোপাধ্যায়-এর।
এই নিয়ে ৩ নম্বর জাতীয় পুরস্কার, সেলিব্রেশন ছেড়ে এখনও কাজে মুখ গুঁজে?
হ্যাঁ। আমি শুধু কাজটাই করে যেতে চাই। পুরস্কার পাওয়া, না পাওয়া আমার হাতে নেই। সেরার তালিকায় আমাকে ঠাঁই দেওয়ার জন্য যদিও অসংখ্য ধন্যবাদ তাঁদের।
সাধারণত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পুরস্কার পেলে, তাঁরাই খবরের শিরোনামে আসেন। কিন্তু ক্যামেরার নেপথ্যের মানুষগুলিকে নিয়ে খুব কম মাতামাতি হয়, এরকম ভাবনা আসে না?
একেবারেই না। আমায় বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই চেনে সেটাই আমি এনজয় করি। দর্শকরা সাধারণত ফিল্ম মেকিংয়ের নেপথ্যের গল্প নিয়ে খুব একটা উৎসাহী থাকেন না। যেসব ছবিতে কাজ করেছি, সেসব অভিনেতারা এসে ‘দাদা’, ‘স্যার’ বলে যখন জড়িয়ে ধরে। ওটাই অনেকটা আনন্দের আমার কাছে।
এর আগে যদিও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন, এবার তো ঝুলিতে ২ টো, কেমন অনুভূতি?
হ্যাঁ, এর সুজিত সরকারের ‘মাদ্রাস কাফে’ এবং সঞ্জয়লীলা বনশালির ‘বাজিরাও মাস্তানি’র জন্য পেয়েছিলাম। এবার একটা ফিচার ফিল্ম ‘উরি’র জন্য এবং নন-ফিচার ফিল্ম ‘চিলড্রেন অফ দ্য সয়েল’-এর জন্য। ‘চিলড্রেন অফ দ্য সয়েল’ আসলে একটা ক্লে-অ্যানিমেশন। উচ্ছ্বসিত তো বটেই। এবার খুশিটা আরও দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।
তো ‘উরি’র সেলিব্রেশন কবে হচ্ছে?
আদিত্য (পরিচালক) আপাতত লস অ্যাঞ্জেলসে। ও ফিরলেই পার্টি করব।
‘উরি’ টিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শুনব?
আদিত্য একদিন ফোন করে বলল, দাদা তোমাকে নতুন একটা ছবির স্ক্রিপ্ট পাঠাচ্ছি। কেরালায় ছিলাম তখন। ফোন করে পালটা বললাম আদিত্য তোমার সিনেমাটা আমার চোখের সামনে ভাসছে ভাই। কোথায় কীরকম শব্দ ব্যবহৃত হবে প্রায় সবটাই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে চিত্রনাট্য পড়তে পড়তে। পরিচালক আদিত্য এবং সংগীত পরিচালক শাশ্বত দু’জনেই আমাকে বলেছিল, দাদা যেহেতু আমরা নতুন। আমাদের কিছু ক্ষেত্রে গাইডেন্স দরকার। আর ওঁদের মতো ইয়ং টিমের সঙ্গে কাজ করতে পেরে বেশ ভালই লেগেছে।
ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরিংয়ের সময়ে ন্যাচরাল সাউন্ডও তো ব্যবহার করা হয়…
‘বাজিরাও’য়ের কাজ করার সময়েও অনেক রিসার্চ করতে হয়েছিল। মহারাষ্ট্রের একটা মন্দিরে যেখানে সব মারাঠি ব্রাহ্মণেরা বৈদিক মন্ত্র পড়েন সমস্বরে। গিয়ে ওটা রেকর্ড করলাম। বৃ্দ্ধা মারাঠি মহিলারা বসে ভজন গাইছেন, সেগুলোও রেকর্ড করে ছবিতে ব্যবহার করেছিলাম। ‘উরি’ রিসার্চ করতে গিয়েও জানতে হয়েছে ভারতীয় সেনারা কীরকম বন্দুক ব্যবহার করেন, টেররিস্টরা কীরকম আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, সেগুলোও জানতে হয়েছে। সিনেমার কাহিনিতে ড্রামাটিক ছোঁয়া আনতে আবহ সংগীতের দায়িত্ব যে অনেকাংশে বেড়ে যায়। মানে দর্শকরা যখন সিনেমা দেখছেন তাঁরা যেন ফিল করেন যে পার্টিকুলারলি ওরকম যুদ্ধক্ষেত্রেই আছেন তিনি। ‘উরি’র সংগীত পরিচালক শাশ্বত সচদেবের সঙ্গে অনেক আলোচনাও করতে হয়েছিল কোথায় কোন গান ব্যবহারের সঙ্গে কীরকম সাউন্ড এফেক্ট ব্যবহার করা হবে।
হোমওয়ার্কও ভীষণ জরুরি..
হ্যাঁ। খুব ভাল লাগে যখন পরিচালকরা ভীষন নিখুঁত কাজ করেন। এক্ষেত্রে ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং সঞ্জয়লীলা বনশালি দু’জনেই আমার খুব প্রিয় পরিচালক। ঋতুদার সঙ্গে ‘চোখের বালি’ যখন করেছিলাম ওঁর জ্ঞানে আমি নিজে সমৃদ্ধ হয়েছিলাম। বারাণসীর ঘাটে ড্রামাটিক দৃশ্যের আবহ তৈরির জন্য রবি ঠাকুরের গান, সেখানকার পণ্ডিতদের মন্ত্রোচ্চারণ ব্যবহার করেছিলাম। আইডিয়াটা ওঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। ঠিক সেরকমই বনশালিজিও ভীষন নিখুঁত কাজ করতে পছন্দ করেন। ‘বাজিরা…’ও করার আগে গোটা একটা বই পড়ে ফেলেছিলাম। ‘পদ্মাবত’-এর সময়েও সেই পিরিয়ডের সিংহল নিয়ে পড়তে হয়েছিল। ওরা কীরকম শাঁখ, ঢোল, খঞ্জনী ব্যবহার করত…সব। আর এক্ষেত্রে হোমওয়ার্কও খুব ইন্টারেস্টিং হয়ে যায়।
‘ব্রহ্মাস্ত্র’র কাজ কেমন চলছে?
যেহেতু কল্পবিজ্ঞান ছবি, অয়ন (মুখোপাধ্যায়) প্রচুর ভিএফএক্স ব্যবহার করবে। সেটা অনুযায়ী সাউন্ড ডিজাইন হবে।
ঋতুপর্ণ ঘোষের পর বাংলায় আর কারও সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছে করে না?
ইচ্ছে তো করে। আমিও চাই বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে। কিন্তু বাজেটই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.