দেবাশিস কর্মকার: ১২ মে ১৯৭৮। সেদিন কে জানত মেন স্ট্রিমের ভারতীয় সিনেমায় একটি মাইলফলক প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে!
ওই দিন মুক্তি পায় পরিচালক চন্দ্রা বারোটের ‘ডন’ ছবিটি। দিনের দিনই বক্স অফিসে তুলকালাম। সেই সময় মাত্র সত্তর লাখ টাকা বাজেটের ছবিটি সাত কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। সে ছবি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে অনুপ্রাণিত হয়ে ২৮ বছর পর ফারহান আখতার সেই ছবির ‘রিমেক’ করেছিলেন। কিন্তু তাতেও মূল ছবিটি হারিয়ে যায়নি।
সোমবার ‘ডন’ মুক্তির ৪১ বছরে পিছনে ফিরে যান অমিতাভ বচ্চন, যিনি এই ছবির নায়ক, দ্বৈত ভূমিকায়। অমিতাভের যে সব ছবির চরিত্র ‘আইকনিক’ হয়ে রয়েছে, তার মধ্যে ‘ডন’ অন্যতম। ৭৬ বয়স বয়সি মেগাস্টার টুইটারে শুনিয়েছেন ছবির নাম ‘ডন’ হওয়ার নেপথ্য কাহিনি। তাঁর কথায়, “বলিউড ইন্ডাস্ট্রির অনেক গণ্যমান্যই ‘ডন’ নামটিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁরা বুঝতেই পারছিলেন না আসলে ‘ডন’ শব্দটির কী অর্থ। এটা কোনও হিন্দি সিনেমার নাম হতে পারে এমনটা তাঁরা ভাবতে পারেননি। সত্যি কথা বলতে কী…অনেকের কাছে এই নামটি মজার লেগেছিল।”
তখন পুরুষদের একটি অন্তর্বাস ‘ব্র্যান্ড’-এর সঙ্গে ছবির নাম নিয়ে মজার গল্প শুনিয়েছেন বচ্চন সাব। তিনি বলছেন, “ওদের ব্র্যান্ড ছিল ডন (DAWN)। ‘ডন’ (DON) শব্দটিও বাজার চলতি ওই ব্র্যান্ডের মতো শুনতে লাগে। অন্তর্বাস ব্র্যান্ডের মতো শুনতে লাগে এমন একটি নাম সিনেমার হওয়াতে আপত্তি ছিল।” তবে তিনি বলছেন, হলিউড ক্লাসিক ‘গডফাদার’-এর অনুকূলে কিন্তু ‘ডন’ শব্দটি ‘সম্মান’ পেতে থাকে। ততদিন পর্যন্ত ‘ডন’ শব্দটি হাস্যরসের খোরাক ছিল।
[ আরও পড়ুন: নিজেদের গ্রামকে ভুলে পাঞ্জাবের সেবা করবেন! সানিকে নিয়ে ক্ষোভ প্রতিবেশীদের ]
১৯৭২ সালে ‘গডফাদার’ এবং ১৯৭৪ সালে ‘গডফাদার ২’ মুক্তি পায়। ফলে চন্দ্রা বারোটের ‘ডন’ মুক্তি পাওয়ার সময় ছবির নাম নিয়ে আর চিন্তা করতে হয়নি কাউকে। ‘গডফাদার’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিল একজন গ্যাংস্টার। ওই ভূমিকায় অভিনয় করেন মার্লোন ব্র্যান্ডো। ‘ডন’ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রও একজন আন্ডারওয়ার্ল্ড গ্যাংস্টার। প্রথম অমিতাভ ‘ডন’। পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে যার মৃত্যু হয়। কিন্তু পুলিশ অফিসার ডনের পুরো গ্যাংটিকে ধরার জন্য খবরটি গোপন রাখেন। এই সময় তিনি ডনের মতোই দেখতে এক সহজ সাধাসিধে যুবক বিজয়ের দেখা পান। তাকেই শিখিয়ে পড়িয়ে ‘ডন’ সাজিয়ে গ্যাংয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ‘ডন’ বিজয় চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসতে পারল কি না, সেটাই ছবির গল্প।
সব ছবি তৈরির গল্প যেমন থাকে তেমনই সেই ছবি অনেক গল্পও তৈরি করে। তেমনই ‘ডন’। এই ছবিতে অমিতাভের পারিশ্রমিক ছিল ২.৫ লক্ষ টাকা। এটি পরিচালক চন্দ্রা বারোটের পাঁচ নম্বর ছবি। এর আগের চারটি ছবিই হিট। কিন্তু ডনের পরে তিনি ১৯৯১ সালে আর মাত্র একটিই ছবি পরিচালনা করেন, সেটি তেমন চলেনি। আবার দেখুন প্রযোজক নরিম্যান ইরানি বক্স অফিসে এত সাফল্যের পরেও আর কোনও সিনেমা প্রযোজনা করেননি। আসলে প্রযোজক-পরিচালকদের ছবি নয়, ‘ডন’ হয়ে গিয়েছে অমিতাভের ‘ক্লাসিক ব্লকব্লাস্টার’। ছবিতে অমিতাভের ১৯৮০ সালে ‘ডন’-এর তামিল রিমেক হয়েছিল, ‘বিল্লা’। তাতে অমিতাভের ভূমিকায় ছিলেন সুপারস্টার রজনীকান্ত। কিন্তু ‘বিল্লা’র সঙ্গে ‘ডন’-এর কোনও তুলনাই হয় না।
[ আরও পড়ুন: ভুল শুধরে নতুনভাবে প্রকাশ পেল ‘সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ’ ছবির পোস্টার ]
টানা ৪১ বছর ধরে ডান্স ফ্লোর, বারাতি থেকে শুরু করে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় যে গানে ৮ থেকে ৮০-র পুরুষ মহিলার কোমর দোলে, মন দোলে- তা হল, ‘খাইকে পান বানারসওয়ালা’, ‘ডন’ ছবিতে বিজয়ের এন্ট্রি। আসলে প্রথমে ছবিতে এই গানটিই ছিল না। পরিচালক চন্দ্রা বারোট ছবিটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর মতামত জানার জন্য মনোজ কুমারকে দেখিয়েছিলেন। ছবিটি তাঁর ভাল লাগলেও তিনি বলেন, দু’টো পর্ব মিলিয়ে নেওয়ার জন্য দর্শকের কাছে কোনও ‘লু ব্রেক’ নেই। প্রযোজক-পরিচালকরা ব্যাপারটায় গুরুত্ব দেন। ফের শুটিং হয়…খাইকে পান বানারসওয়ালা’র। অথচ কল্যাণজি-আনন্দজি গানটি তৈরি করেছিলেন দেব আনন্দের ‘বাণারসীবাবু’ ছবির জন্য। সেখানে গানটি ব্যবহার হয়নি। হয়তো তা ‘ডন’-এর ভাগ্যে ছিল বলেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.