Advertisement
Advertisement
Priyo Chinar Pata Iti Segun

গোটা বাংলায় একটি মাত্র শো, টানা ৩ দিন হাউসফুল ‘প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন’, কোন জাদুতে?

জীবন সংকটে স্ত্রী, তবু হার মানেননি পরিচালক। এভাবেও স্বপ্ন দেখা যায়!

Bengali film Priyo Chinar Pata, Iti Segun gets back to back houseful show
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:August 16, 2022 7:07 pm
  • Updated:August 16, 2022 10:58 pm  

সুপর্ণা মজুমদার: এভাবেও স্বপ্ন দেখা যায়! ক্ষ্যাপা সাধকের মতো সেই স্বপ্নের পিছনে ছোটা যায়! নিজের সমস্ত কিছু নিংড়ে দিয়ে তৈরি করা যায় চলমান চিত্রের রাজপ্রাসাদ! ‘প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন’ (Priyo Chinar Pata, Iti Segun) সিনেমার পরিচালক কুমার চৌধুরীর (Kumaar Chowdhury) সঙ্গে কথা না বললে এসব অবিশ্বাস্য মনে হত। শুনেছেন এই সিনেমার নাম? ‘লাল সিং চড্ডা’, ‘রক্ষা বন্ধন’, ‘ধর্মযুদ্ধ’, ‘ভটভটি’র মতো সিনেমার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ১২ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে। মাত্র একটি হল নন্দনে একটি মাত্র শো পেয়েছে ছবিটি। সন্ধে ৬.২০ মিনিট নাগাদ। কিন্তু মুক্তির পরের তিনটি দিন টানা হাউসফুল। টিকিট না পেয়ে অনেকেই হতাশ।

Priyo Chinar Pata

Advertisement

কিন্তু একটা সিনেমার এত জোর? কোন জাদুবলে মাত্র একটি সিনেমা হলেই মুক্তি পেয়ে এভাবে ‘রমরমিয়ে’ চলছে? প্রশ্নের উত্তর জানতে পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। ফোনে পাওয়া যায় পরিচালককে। স্ত্রীর ডায়ালিসিসের জন্য তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই কুমার চৌধুরী শোনালেন এক রূপকথা, যা দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস্তবেরই ভিত্তিভূমিতে।

crew of Bangla new movie Priyo Chinar Pata Iti Segun

এ রূপকথা রাজপুত্র কিংবা রাজকন্যার নয়, রক্তমাংসে গড়া মানুষের দুরন্ত লড়াইয়ের। বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ কুমার চৌধুরী। অভিনেতা হিসেবে তাঁকে অনেকেই দেখেছেন। এই মানুষটাই প্রায় নিজের পরিচালনায় অন্তত খান কুড়ি টেলিফিল্ম ও শর্টফিল্ম তৈরি করে ফেলেছেন। নিয়মিত লেখালেখি করেন। দেশ-দুনিয়ার খবরও রাখেন। ২০১২ সাল নাগাদ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খবরগুলি তাঁর নজরে পড়ে। তারপর পশ্চিম এশিয়া, সিরিয়ার খবরগুলিও ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সারা বিশ্বে যেন একটা অদ্ভুত অশান্তি আর অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ। রাজনীতির দাবাখেলায় খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। চোখের পলকে তাঁদের জন্মভূমি হয়ে যাচ্ছে ভিনদেশ। উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। এই বিষয় সিনেমার পর্দায় তুলে ধরবেন বলে ঠিক করেন।

Priyo Chinar Pata Iti Segun director

ম্যাগাজিনে এক রোহিঙ্গা মেয়ের গল্প পড়েন কুমার। ঠিক করেন তাঁকে মুখ্য চরিত্র হিসেবে রেখেই চিত্রনাট্য লিখবেন। এরপরই শুরু হয় সংগ্রাম। ম্যাগাজিনের সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে রোহিঙ্গা মেয়েটির ঠিকানা জোগাড় করেন। সেখানে গিয়ে অন্যদের সঙ্গেও কথা বলেন। এতেও সমস্যা। প্রতি পনেরো দিন অন্তর সিম চেঞ্জ করতেন এই উদ্বাস্তুরা। যোগাযোগ করা খুবই কষ্টকর। তবে কুমার হার মানেনি। তথ্য জোগাড় করেই ছাড়েন। ২০১৬ সাল থেকে চিত্রনাট্য লেখা শুরু হয়। ২০১৮ সালে শেষ হয় লেখা।

[আরও পড়ুন: গতানুগতিক কাহিনি, চেনা ছকের বাইরে বের হতে পারল না ‘মার্ডার বাই দ্য সি’ ওয়েব সিরিজ]

কিন্তু প্রযোজক? অনেকের দরবারেই গিয়েছিলেন নবাগত পরিচালক। কেউ রাজি হননি। আশ্বাস দিয়েও পিছিয়ে গিয়েছেন। হতাশ হয়ে আবার মেগা সিরিয়ালে অভিনয় করতে শুরু করেন কুমার চৌধুরী। ভেবেছিলেন আর বোধহয় হবে না। ঠিক, সেই সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পরিচালকের স্ত্রী পিয়ালি চৌধুরী। নিজের সমস্ত গয়না বিক্রি করে দেন। লোনও নেন কুমার চৌধুরী। কিন্তু তাতেও কুলানো যাচ্ছিল না। তখন ক্রাউড ফান্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
কাশ্মীরি যুবক ও রোহিঙ্গা তরুণীর প্রেমের কাহিনি দেখানো হয়েছে ‘প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন’ সিনেমায়। তাতেই প্রতিফলিত হয়েছে অনুপ্রবেশকারী, শরণার্থী, উদ্বাস্তু মানুষদের দুর্দশার কাহিনি।

Priyo Chinar Pata Iti Segun bengali movie

নতুনদের নিয়েই কাজ করেছেন পরিচালক। বড় তারকা নেওয়ার সাধ্য ছিল না, ইচ্ছেও ছিল না। সাধারণ মানুষের কাহিনি সাধারণ কিছু চেহারার মাধ্যমেই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। দুই মুখ্য চরিত্রাভিনেতাকে বেছে নিয়েছেন রঙ্গমঞ্চ থেকে। ‘বহুরূপী’ নাট্যগোষ্ঠী থেকে পেয়েছেন পিয়ালি সামন্তকে। রোহিঙ্গা কন্যা শমীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। কাশ্মীরি যুবক ইকবালের ভূমিকায় আরেক মঞ্চাভিনেতা ক্যাপ্টেন আরমান। চট্টগ্রামের এক মহিলাকে পেয়েছিলেন কুমার চৌধুরী। যিনি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি অভিনেতাদের ভাষাও শিখিয়েছেন। ভায়োলিন বাজানোও শিখতে হয়েছে অভিনেতাদের।

তবে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ করতে হয়েছে পরিচালক ও তাঁর পরিবারকে। যে স্ত্রী সিনেমা তৈরির জন্য গয়না বিক্রি করে দেন, তিনিই শুটিংয়ের আগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিডনির সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইউনিটের কাউকে কিচ্ছুটি জানতে দেননি কুমার-পিয়ালি। শুটিং চলাকালীন আবার কোভিডের প্রকোপ। প্রায় চার মাস সিনেমার কাজ তো বন্ধ ছিলই, মেগা সিরিয়ালে অভিনয়ের কাজও বন্ধ ছিল। একটি স্কুলের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে কাজ করতেন পিয়ালি। সেটিও চলে যায়। এদিকে চিন্তার জন্য পিয়ালির শরীর আরও খারাপ হতে শুরু করে।

Priyo Chinar Pata Iti Segun

এত কিছুর মধ্যেই সিনেমার কাজ সম্পূর্ণ করছেন পরিচালক কুমার চৌধুরী। এদিকে স্ত্রী পিয়ালির শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। মাসে আটটি ডায়ালিসিস হয় তাঁর। ১২টি করে ইঞ্জেকশন লাগে। শরীরে হিমোগ্লোবিন খুবই কম। হার্টের অবস্থাও খারাপ। ডাক্তারের কথায় পিয়ালির কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতেই হবে। কিন্তু এর খরচ অন্তত ২৮-৩০ লক্ষ টাকা। তা কোথা থেকে পাবেন জানেন না কুমার। সরকারি হাসপাতালে আবেদন করেছেন। যদি কিছু সুরাহা হয়।

এমন পরিস্থিতিতেও কুমার ও পিয়ালি ১২ আগস্ট থেকে পরপর নন্দনে গিয়েছেন। দাঁড়িয়ে দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করেছেন। বাংলা সিনেমা বাঁচানোর জন্য? না বোধহয়, এ তো দুরন্ত পাগলামো। সিনেমার জন্য সর্বস্ব লুটিয়ে দেওয়া। বেসরকারি হল পাওয়ার সাধ্য নেই পরিচালকের। ভাড়া অনেক। যদি কোনও স্বহৃদয় ডিস্ট্রিবিউটর বা প্রযোজক এগিয়ে আসেন তবেই সম্ভব। দু’মাস ছেলের স্কুলের মাইনে দিতে পারেননি কুমার, অথচ তাঁর ‘প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন’ দেশ-বিদেশের প্রায় কুড়িটি চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হয়েছে। অন্তত সাতটিতে সেরা ছবি বা পরিচালকের শিরোপা পেয়েছে। গত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও দেখানো হয়েছিল ছবিটি। ”এবার যদি দর্শক এমনভাবেই ভালবাসা দিয়ে হল ভরিয়ে দেন, তাহলেই এত সংগ্রাম সার্থক”, জানালেন পরিচালক।

[আরও পড়ুন: ৭ দিনেই সিনেমা হল থেকে বিদায় নেবে ‘লাল সিং চাড্ডা’? ভেঙে পড়েছেন আমির খান]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement