সাসপেন্স, হরর, থ্রিলের পাশাপাশি এই ছবিতে আছে ইমোশনাল জার্নির গল্প। লিখছেন সোমনাথ লাহা।
টলিউডে সাম্প্রতিক সময়ে ভূতের আনাগোনা ক্রমশ বেড়েছে। এমনকী বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতেও থেকেছে ভূত। এমতাবস্থায় এ বছর ভূত চতুর্দশীতে সিনে আঙিনায় আবির্ভাব ঘটতে চলেছে ‘ব্রহ্মদৈত্য’-র।
একসময় নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ভরপুর বাংলা লোকগাথার এই সমস্ত কালজয়ী অশরীরী চরিত্ররা (ব্রহ্মদৈত্য, শাকচুন্নী, মেছো পত্নী) স্থান করে নিয়েছিল বাংলা সাহিত্যে ও বাঙালি মননে। এই সমস্ত অশরীরীদের নিয়ে লেখা সেই সমস্ত গা ছমছমে গল্পগুলি আজও শিহরণ তোলে পাঠকদের মনে-প্রাণে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর নেক্সট জেনের কাছে ক্রমশ ফিকে হয়ে এসেছে এইসব অশরীরীদের নাম। অনেকেই হয়তো তাদেরই নামই জানে না। বাংলার সেই অন্যতম কালজয়ী অশরীরীকে এবার সিনে আঙিনায় ফিরিয়ে আনছেন পরিচালক অভিরূপ ঘোষ। তাঁর সাসপেন্স হরর থ্রিলার ছবি ‘ব্রহ্মদৈত্য’-র হাত ধরে। এই ছবির পরতে পরতে রয়েছে একাধিক টুইস্ট।
আজকের প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটেই ‘ব্রহ্মদৈত্য’-র বুনন করেছেন অভিরূপ। সাসপেন্স, হরর, থ্রিলের পাশাপাশি এই ছবিতে রয়েছে এক ইমোশনাল জার্নির গল্প। পাণ্ডে মোশন পিকচার্স ও ট্রু কলিং মিডিয়ার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই ছবির প্রযোজক মুকেশ পাণ্ডে।
ছবিতে মুখ্যচরিত্রে রয়েছেন সায়নী ঘোষ। এ ছাড়াও ছবিতে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। প্রসঙ্গত, এটি অভিরূপের তৃতীয় ছবি। ইতিপূর্বে ‘কেঃ সিক্রেট আই’-র ছবি করেছেন তিনি। মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে অভিরূপের ছবি ‘রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ’। “ব্রহ্মদৈত্য’-র হাত ধরে অভিরূপের তিনটি ছবিতেই কাজ করলেন রুদ্রনীল, অন্যদিকে ‘রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ’-এর পর সায়নীর এটি অভিরূপের সঙ্গে দ্বিতীয় ছবি।
[ আরও পড়ুন: হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে মণিরত্নম, শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশা ]
তবে ছবির ব্রহ্মদৈত্যটি আসলে কে তা এখনও খোলসা করেননি পরিচালক। এছাড়াও রয়েছে বেশকিছু চমক। ভিএফএক্সে নয়, বরং প্র্যাক্টিক্যাল এফেক্টসকে ছবিতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন পরিচালকও তাঁর টিম। ছবির প্রস্থেটিকের অনেক কিছুই বিদেশ থেকে নিয়ে এসেছেন পরিচালক, মেকআপের পাশাপাশি ছবির লুকসটিতে একটা ইন্টারন্যাশনাল ফিল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অভিরূপ।
ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে অন্তর্মুখী ও মনমরা সাংবাদিক সায়ন্তিকা (সায়নী)-কে কেন্দ্র করে। সায়ন্তিকা সারাজীবন সকলের কাছেই উপহাসের পাত্রী। নিজের বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব, এমনকী কাজের জায়গাতেও সকলেই তাকে নিয়ে পরিহাস করে। স্বভাবত মনমরা হয়ে থাকে সে। এমতাবস্থায় একদিন অফিসের সিনিয়র তাকে বাংলার অশরীরীদের নিয়ে লেখার একটা অ্যাসাইনমেন্ট দেয়। নিজের লেখাটিকে আজকের প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য সায়ন্তিকা রিসার্চওয়ার্ক করলেও সে ব্যর্থ হয় বিষয়টা ঠিকমতো তুলে ধরতে। এমতাবস্থায় সে ‘বাই আ ঘোস্ট ডট কম’ নামক একটি মেল আইডির সন্ধান পায়। এই সাইটে ভূত কেনাবেচা হয়। বিষয়টা নেহাত মজা মনে করে সে সেখানে একটা (অর্থাৎ সেই পোর্টালে) একটা ভিনটেজ ‘ব্রহ্মদৈত্য’-র অর্ডার দেয়। যথাসময়ে তার বাড়িতে ক্যুরিয়রের মাধ্যমে আসে একটা পুরনো ট্রাঙ্ক। আর সেই ট্রাঙ্কটি খোলার পরেই সায়ন্তিকার সঙ্গে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। তারপর কী হয়? উত্তর মিলবে ছবির পর্দায়।
ছবির কাহিনি লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং। ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, সৌমাল্য দত্ত, সৌমান বোস, সৌরভ সাহা, দত্তাত্রেয় চ্যাটার্জি, মনিকা দে-ও অন্য শিল্পীরা। সংগীত পরিচালনায় মেঘ ব্যানার্জি (যিনি ‘রেনবো জেলি’-তে সংগীত পরিচালনা করেছেন)। সিনেমাটোগ্রাফার অঙ্কিত সেনগুপ্ত। সম্পাদনায় জিষ্ণু সেন।
[ আরও পড়ুন: সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন নবনীতা দেবসেন ]
কলকাতা ও তার আশপাশে হয়েছে ছবির শুটিং। শুটিং শেষ হয়ে এখন চলছে ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। ছবি প্রসঙ্গে অভিরূপ জানান, “একসময় আমরা ঠাকুরমা-দিদিমাদের কাছ থেকে ব্রহ্মদৈত্য, শাকচুন্নীদের গল্প শুনে বড় হয়েছি। আমাদের সাহিত্যের একটা অংশ জুড়ে ছিল এইসব অশরীরীরা। কিন্তু এখনকার প্রজন্ম এদের কথা জানেই না। তাই তাদের কথা ভেবে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে ‘ব্রহ্মদৈত্য’-কে ফিরিয়ে এনেছি এই ছবিতে। তবে সাসপেন্স হরর থ্রিলারের পাশাপাশি এই ছবি আসলে একটি মেয়ের ইমোশনাল জার্নির গল্প। কীভাবে সে নিজের জীবনের সমস্যার সমাধান করছে, তাও দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।” সায়নী প্রসঙ্গে অভিরূপের মন্তব্য, “সায়নীকে এই ছবিতে অন্যভাবে দেখতে পাবেন দর্শকরা। এই চরিত্রটার জন্য ও নিজেকে অনেকটাই ভেঙেছে। আশা করি দর্শকদের অন্যরকম একটা ছবি উপহার দিতে পারব এই ভূত চতুর্দশীতে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.