‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। আর মাত্র একদিন। আর তার পরেই রঙের উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে উঠবে গোটা দেশ। আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠবে নানা রঙে। চৈত্রে গুটি গুটি পায়ে গ্রীষ্মের পদচারণার মধেই বাঙালির অতি প্রিয় বসন্ত উৎসব। এককথায় দোল, রঙে রঙে রাঙিয়ে ওঠার দিন। শহর তিলোত্তমার আকাশ-বাতাসও মেতে উঠবে রঙের ছোঁয়ায়। আপামর শহরবাসীর মতো টলিউডের সেলিব্রিটিরাও নিজেদের মতো করে রঙের উৎসবে মেতে ওঠার জন্য প্রস্তুত। রইল সেলেবদের রঙের উৎসবে মেতে ওঠার হাল-হকিকৎ। কথা বললেন সোমনাথ লাহা।
সৌরসেনী মৈত্র (অভিনেত্রী)
আমি ছোটবেলা থেকেই স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেই দোল খেলি। কারণ আমার স্কুলের বন্ধুরা আমার পাড়াতেই থাকে। আর আমার মামার বাড়ি যেহেতু কাছেই, তাই মামা-মাসিরা সকলে মিলে খুব সাংঘাতিক দোল খেলা হত। এখন সবাই বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় ওটা আর হয়ে ওঠে না। এখনও দোলের দিন পরম্পরা মেনে ঠাকুমা, মা, বাবার গায়ে আবির দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে রং খেলতে বেরোই। তবে এখন অর্গানিক/হার্বাল আবির দিয়েই দোল খেলি। ছোটবেলার সেই গুঁড়ো রং, জল দিয়ে ভূতের মতো দোল আর খেলি না। ওতে জলেরও খুব অপচয় হয়। আর বন্ধুরাও জানে বলে ওই আবির দিয়েই দোলটা খেলা হয়। এবারেও বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করেছি। তবে দোলের দিনের মেনু কী হবে সেটা ঠিক হয়ে ওঠেনি। হোম ডেলিভারি ও কোনও রেস্তরাঁ থেকে আনিয়ে নিতে পারি বা কোথাও গিয়েও খেতে পারি। দেখা যাক এবার মোগলাই নাকি কনটিনেন্টাল কোনটা খাওয়া হয়। বন্ধুরা মিলে সেটা ঠিক করব। তবে বন্ধুদের বাড়িতে ঠান্ডাই বানানো হয়। একদম ভাঙ ছাড়া। আমি সেটা ৫-৬ গ্লাস খেয়ে নিই। দোলের সময় ভাজা মিষ্টি, বিশেষ করে গোলাপজামুন খেতে ভীষণ ভাল লাগে আমার। এবারেও খাব। আমার দোলের প্রিয় রং হলুদ। এই সময় রবীন্দ্রসংগীত, বিশেষ করে বসন্তের গান ‘ওরে গৃহবাসী’, ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ শুনতে ভাল লাগে। তবে বেলা বাড়লে অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠে ওই ‘রং বরষে’ গানটার সঙ্গে আপনিই মনের আনন্দে নেচে উঠি। না হলে দোলটা ঠিক সম্পূর্ণ হয় না।
ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় (অভিনেতা)
আমার বাড়ি যেহেতু বেহালা সরশুনায়, আমাদের পুরো যাকে বলে একেবারে পাড়া কালচার। দোলে আমার প্ল্যান একটাই। সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাড়ার আর সকলের সঙ্গে মিলে প্রচণ্ড রং খেলি। একবছর আমি রং খেলতে পারিনি ‘পর্ণমোচী’ ছবিটার শুটিং থাকার কারণে। সেটা নিয়ে আমার মনে ভীষণ আক্ষেপ ছিল যে আমি দোল খেলতে পারিনি। আমাদের পাড়ায় একটা বিশাল বড় ইভেন্ট হচ্ছে দোল। সারাদিন দোল খেলে পাড়ার ঝিলে গিয়ে স্নান করা। সেটা অনবদ্য। দোলে আমাকে কেউ দেখলে চিনতে পর্যন্ত পারবে না। আমি এতটাই দোল খেলি, খুব আনন্দ করি। দুর্গাপুজোর পর যদি কোনও উৎসবে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দ করি সেটা হল দোল। প্রচণ্ড রং খেলি। প্রচণ্ড স্নান করি। খুবই ভাল লাগে। তবে সকলকে বলব দোলটা যেন প্রত্যেকে সেফ খেলেন। কারণ দোলে সবাই খুবই uncontrolled হয়ে পড়েন। দোলে প্রতিবছর আমার একটা রুটিন রয়েছে। বাড়িতে খাওয়া-দাওয়াটা সেইমতোই হয়। সকালবেলা রং খেলে স্নান করে দুপুরে বাড়িতে মটন আর ভাত। তারপর একটা লম্বা ঘুম দিয়ে বিকেলে আবার পাড়ায় বেরনো। দোলে বাবা ফুটকড়াই, মুড়কি এগুলো নিয়ে আসে। সেগুলো আনন্দ করে খাই। তবে দোলে কোনওদিনও ভাং খাইনি। কারণ পাড়ার প্রত্যেকেই অভিভাবক। তাই ওদের নজর এড়িয়ে ওসব খাওয়ার কথা কোনওদিন ভাবিনি। বরং রং খেলাটাই চুটিয়ে আনন্দ করেছি।
রুক্মিণী মৈত্র (অভিনেত্রী)
আমি ছোটবেলা থেকেই রং খেলতে খুব একটা ভালবাসতাম না। আমার মা আর দাদা রং খেলতে ভীষণ ভালবাসে। আমি আর বাবা একদমই রং খেলা পছন্দ করতাম না। তবে দাদার পাল্লায় পড়ে ছাদ থেকে রং বেলুন লোকের গায়ে ছুড়েছি। এমনকী নিজের মাস্টারমশাইয়ের গায়েও রং বেলুন ছু়ড়ে মেরেছি। তবে ছোট থেকেই দেখেছি বাড়িতে আমার বাবা-মা ওই অর্গানিক রং, আবির এগুলো নিয়ে আসতেন। ওগুলো দিয়েই দোল খেলতাম। এখনও হার্বাল/অর্গ্যানিক আবিরটাই খেলি। এবারে তো শুটিং রয়েছে। দোলের আগের দিন অবধি ‘পাসওয়ার্ড’-এর শুটিং থাকবে। হয়তো তারপরেও শুটিং থাকবে। তাই দোলে কী হবে জানি না। তবে দেব যে ইউনিটের সকলকে, এমনকী আমাকেও রং মাখানোর প্ল্যান করছে সেটা বুঝতে পারছি। তাই ও হয়তো রং মাখিয়েই ছাড়বে। দোলের দিন আমার দিদার বাড়িতে রাধা-কৃষ্ণের পুজো হয়। তো ওখানে যাবই। দোলের দিন পুরো নিরামিষ মেনু। তবে আমার পছন্দের হলুদ মিষ্টি পোলাও আর আলুর দমটা হবেই। সঙ্গে রসগোল্লা, দই এগুলো থাকবেই। দোলের পরদিন ওই পোলাও দিয়েই মটন কষা খাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। আর সেটা খাবই। আমার দোলের প্রিয় রং হলুদ। কারণ আমার মনে হয় হলুদ হল বসন্তের রং। আর দোলের প্রিয় গান ওই ‘ডু মি আ ফেভার লেটস প্লে হোলি’। আমার দারুণ লাগে এই গানটা। মনটাও নেচে ওঠে গানটা শুনলেই।
অমৃতা চট্টোপাধ্যায় (অভিনেত্রী)
ছোটবেলায় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে গুঁড়ো রং, বাদুড়ে রং দিয়ে খুব দোল খেলতাম। তারপর আস্তে আস্তে এখন দোল খেলাটা বদলে গিয়েছে। দোলের আগে কিংবা পরে শুটিং থাকায় গুঁড়ো রং দিয়ে দোল আর খেলি না। কারণ গায়ের থেকে রং না উঠলে শুটিংয়ে সমস্যা হয়ে যায়। এখন তাই আবিরটাই খেলি। আবির খেলাটা আমার চিরকালই বেশ প্রিয় ছিল। তবে হার্বাল আবিরটাই খেলি। এবছর দোলে আমাদের এক ফ্যামিলি ফ্রেন্ডের বাড়ি গিয়ে হইচই করার প্ল্যান রয়েছে। খাওয়া-দাওয়া সেখানে বেশ জম্পেশ হবে। খিচুড়ি হলে ভাজা, মাছ থাকবে। লুচি হলে সাদা আলুর তরকারি, মাংস, পায়েস, ফিরনি থাকবে। আমার বসন্তের প্রিয় রং হলুদ ও কমলা। দোল আসলে আমি ফুটকড়াই, মঠ, কদমা এগুলি খেতে পছন্দ করি। এবারেও খাব। এছাড়াও বিশেষ কিছু মিষ্টি রয়েছে। যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় একবার দোলে ভাঙের স্বাদ নিয়েছিলাম। তবে আমার সেভাবে কোনও আফটার এফেক্ট হয়নি। হয়তো কম খেয়েছিলাম বা মেপে খেয়েছিলাম বলে। বসন্ত এলেই আমার স্কুলের বসন্ত উৎসবের ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে’ গানটির কথাই মনে পড়ে যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.