সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের কটাক্ষের শিকার নুসরত জাহান। ইনস্টাগ্রামে মসজিদে প্রার্থনার ভিডি পোস্ট করতেই নেটপাড়ায় শোরগোল। নেটিজেনদের একাংশ হঠাৎই কটাক্ষ করতে শুরু করল নুসরতকে। কেউ লিখলেন, ফ্ল্য়াট চোর। কেউ লিখলেন গরিবের টাকা লুট করে মসজিদে প্রার্থনা! আবার অনেকে লিখলেন, আল্লার কাছে ক্ষমা চাও। অনেকে আমার লিখলেন, কখনও মন্দিরে, কখনও মসজিদে। ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে নাকি!
প্রসঙ্গত,‘দুর্নীতির সঙ্গে আমি জড়িত নই’। ফ্ল্যাট দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দাবি তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানের (Nusrat Jahan)। যদি ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে যা বলবেন তাই করব’, পালটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন অভিনেত্রী। একই সুরে জানিয়ে দিলেন, “চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি দুর্নীতি করিনি।” এদিন হাসিমুখে সাংবাদিক বৈঠকে ঢুকলেও বেরনোর সময় মেজাজ হারান অভিনেত্রী। মাত্র ৭ মিনিটেই শেষ হয়ে যায় তাঁর সাংবাদিক বৈঠক।
ফ্ল্যাট দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল বসিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহানের। টলিউড নায়িকা তথা বসিরহাটের সাংসদের বিরুদ্ধে শঙ্কুদেব পণ্ডার অভিযোগ, কো-অপারেটিভ সিস্টেমের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কেনার জন্য মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার করে টাকা দেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ওই সময় ওই কোম্পানির একজন ডিরেক্টর ছিলেন বর্তমান তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। এই সংস্থাটি ওড়িশার বলে জানা গিয়েছে। প্রতারিতদের অভিযোগ, তাঁদের বলা হয়েছিল পরবর্তী চার বছরের মধ্যে ফ্ল্যাট তৈরি করে দেওয়া হবে। তবে ২০১৮ সালের পরও ফ্ল্যাট পাননি তাঁরা। এই অভিযোগের পর থেকে নুসরতের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। বুধবার সকালেই জানা যায়, কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে সমস্ত অভিযোগের জবাব দেবেন সাংসদ।
View this post on Instagram
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মামলা চলছে কলকাতা হাই কোর্টে। সেই যুক্তিকেই এদিন ঢাল করেন নুসরত। বলেন, “বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। অর্ধসত্য খুব খারাপ।” তাঁর দাবি, “সাফাই তাঁরা দেয় যারা দোষ করে। যখন অভিযোগ উঠেছে তখন আমি শুটিংয়ের কাজে বাইরে ছিলাম। কাল গভীর রাতে ফিরেছি। আজ এসেছি সাংবাদিক বৈঠকে। কিন্তু নিজের হয়ে ব্যাখ্যা দিতে এখানে আসিনি।” নুসরত তুলে ধরলেন অভিযোগ সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য। তবে লেনদেন সংক্রান্ত নথি সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেননি অভিনেত্রী। বরং কিছুটা উদ্ধতভাবেই নুসরত বললেন, “আপনার ব্যাংক ডিটেলস কি আমি দেখতে চেয়েছি? আমিও আমার ব্যাংক ডিটেলস আপনাদের দেখাব না।”
সংবাদমাধ্যমকেও একহাত নিয়েছেন নুসরত। সাংসদ-অভিনেত্রীর দাবি, তাঁকে নিয়ে একাধিক গল্প তৈরি করেছে মিডিয়া। বেশকিছু মিডিয়া নাকি দাবি করেছিলেন, দেখানো হয়েছে মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থাটি তাঁর মালিকানাধীন। প্রমাণ ছাড়া দেখানো এসমস্ত ‘বানানো গল্প’ দেখানো উচিত নয় বলেই মত সাংসদের। তবে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে টাকা নেওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন নুসরত। কিন্তু সেটা ঋণ হিসেবেই নিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।
এবিষয়ে তৃণমূল সাংসদের দাবি, “যে কোম্পানির সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম, কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে আমি সেই সংস্থা ছেড়ে দিয়েছি।” অভিযোগ উঠেছিল, তিনি সংস্থার টাকা নিয়ে বাড়ি কিনেছেন। অভিযোগ নস্যাৎ করে সাংসদ জানান, ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়েছিলেন। সুদ-সহ সেই ঋণ শোধ করে দিয়েছেন বলেও দাবি নুসরতের। সেই সংক্রান্ত সমস্ত নথি অভিনেত্রীর কাছে থাকলেও তা তিনি প্রকাশ্যে দেখাতে চাননি।
নিজের বক্তব্য তুলে ধরলেও কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি নুসরত। বরং লাগাতার প্রশ্নের মুখে মেজাজ হারান অভিনেত্রী-সাংসদ। কার্যত মাঝপথেই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, সাংসদ যদি কোনও দোষ না করেন, তাহলে কেন প্রশ্নের জবাব দিলেন না? কেন মাঝপথে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন? রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিযোগ, অভিনেত্রী-সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সরাসরি খন্ডন করলেন না তিনি। বরং মিডিয়ার ঘাড়েই দোষ চাপিয়ে দায় এড়ালেন নুসরত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.