সুকুমার সরকার, ঢাকা: ‘ধান ভানতে শিবের গাজন’ গাওয়ায় বাংলাদেশের এক শ্রেণির নেটিজেনদের জুড়ি মেলা ভার! আপনি হয়তো কোনও সিনেমা নিয়ে আলোচনা করলেন, তাঁরা বলবেন- “কই, অমুক ঘটনা নিয়ে তো কিছু বললেন না!” ভাবখানা এমন যেন আপনিই সব কিছুর দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন! আর তারকাদের তো প্রতিনিয়তই এসব ঘটনার শিকার হতে হয়! এবার এমনটাই ঘটল বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া আহসানের ক্ষেত্রে। তবে জয়াও প্রশ্ন শুনে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন, দিলেন পালটা মোক্ষম জবাব!
করোনা সংক্রমণের মাঝেই বুড়িগঙ্গায় একটি লঞ্চডুবির ঘটনা নিয়ে নিজের সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন জয়া আহসান (Jaya Ahsan)। যে ঘটনায় এখনও অবধি ৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। সেখানেই চাঁদ সুলতানা মিথিলা নামের একজন অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করে বসেন- ‘ভারত থেকে জল এসে দেশ ডুবিয়ে দিচ্ছে, সেটা নিয়ে কিছু বলুন! আপনার প্রাণপ্রিয় দেশের দাদাদের নিয়ে তো কিছু বলতে শুনলাম না! সারাদিন তাদের নামে এত ভাল ভাল পোস্ট দেন, এখন চুপ কেন?’ এছাড়াও বেশ কিছু ব্যক্তি কদর্য ভাষায় মন্তব্য করেন যে, “জয়া ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।” শোকাবহ একটি স্ট্যাটাসে এমন উদ্ভট মন্তব্য দেখে স্বাভাবিকবশতই চটে যান জয়া।
জয়া আহসানের মন্তব্য, “আচ্ছা!! ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টায় ছিলাম? তাই নাকি? আদৌ বাংলাদেশিরা নাগরিকত্ব পায় নাকি? আমি তো এত বছর সেখানে গিয়ে কাজ করছি, আবার চলে আসছি। আমি তো জানি ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ওখানে বাংলাদেশিরা (Bangladesgh) নাগরিকত্ব পায় না। আমি তো চেষ্টাও করিনি কোনও দিন। কারণ আমি বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত। তাই অন্য কোনও দেশের নাগরিক হওয়ার সেই চিন্তাটাও আমার মাথায় আসেনি। তবে আপনার লেখাটা দেখে মনে হল, আপনি মনে হয় ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাই না? কিন্তু আফশোস! হালে জল পাননি!”
এখানেই থামেননি অভিনেত্রী, তিনি এও বলেন যে, “আর আমফানে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বড় স্টেটাস ছিল? একটু পিছনে গিয়ে সেই পোস্টটা দেখে নিন তো, ঠিক ক’টা লাইন লিখেছিলাম। হিমালয় হিমু নামটা ব্যবহার করছেন। হুমায়ূন স্যার-এর লেখা এত প্রিয় একটা চরিত্র। তো সেই নাম ব্যবহার করে বাংলাতে এত কাঁচা হলে চলবে? একটু ভাল করে পড়াটা শিখতে হবে তো নাকি!”
চাঁদ সুলতানা মিথিলা, যিনি কদর্য মন্তব্য করেছিলেন, তাঁকেও ছেড়ে কথা বলেননি অভিনেত্রী। জয়া লেখেন, “আমার মনে হয় শেষ লাইনটা পড়ে দেখেননি আপনি। মানেটাও বোঝেননি। তাছাড়া আমার লেখা আপনাকে পড়ার জন্য কেউ মাথার দিব্যিও দেয়নি! তো সানন্দে এগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন। আর যদি এতই লেখার ইচ্ছা হয় তো নিজের টাইমলাইনে গিয়ে লিখুন না! আমাদের দেশের অসুবিধা নিয়ে, সমস্যা নিয়ে আমরা যত সোচ্চার হব, ততই তো ভাল নাকি!! আমাকে গালাগালি দিয়ে বা বাজে কথা লিখে অনেক সুখ হয়তো পাওয়া যায়। কিন্তু এই কষ্টটা একটু দেশের মঙ্গলের জন্য করলে ভালো হয় না? অন্তত ফেসবুকে লিখেও তো একজনের জন্য হলেও তো সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়।”
জয়ার এই চমৎকার বুদ্ধিদৃপ্ত জবাবেও কি সেই বোধবুদ্ধিহীন লোকদের বোধোদয় হবে? এটাই প্রশ্ন!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.