শম্পালী মৌলিক: অপরাজিতা আঢ্যকে (Aparajita Adhya) অভিনয় জগতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন নাকি অপরাজিতা আর তাঁর খোঁজ নেন না। এমনই অভিযোগ করেছিলেন অনামিকা সাহা (Anamika Saha)। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের জবাব দিলেন অপরাজিতা। একান্তে বললেন মনের কথা।
বাংলা সিনেমার জাঁদরেল খলনায়িকা ও স্নেহময়ী মা অনামিকা সাহা। এদিকে টেলিভিশন ও সিনেমা সবেতেই জনপ্রিয় অপরাজিতা আঢ্য। দু’জনেই রয়েছেন পাভেলের নতুন ছবি ‘কলকাতা চলন্তিকা’য়। অনামিকা সাহার মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রথমেই অপরাজিতা বলেন, “উনি আমার মায়ের মতো কি আর বলব।”
তারপর শান্তভাবে বলেন, “আমি ক’দিন আগে শুনেছি অনামিকাদি বলেছেন, আমি তাঁর খোঁজ নিই না। এবং উনি আমাকে স্বপন সাহার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা আমি কাউকে বলি না। একথা সত্যি যে, আমাকে স্বপন সাহার কাছে উনি নিয়ে গিয়েছিলেন। ‘তৃষ্ণা’ বলে একটা সিরিয়ালে উনি আমার মা হয়েছিলেন। সেই সময় স্বপন সাহার সব ছবিতে অনামিকাদি কাজ করতেন। আমি অনামিকাদিকে বারবার বলতাম, স্বপন সাহার সঙ্গে একটু আলাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য। একদিন উনি আমাকে নিয়ে গেলেন। তারপর স্বপন সাহা আমাকে একটা ছবির জন্য সিলেক্ট করেন, সেটাই ‘শিমুল পারুল’।”
অপরাজিতার কথায়, “যেদিন স্বপন সাহার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম সেদিন বুম্বাদা স্টুডিওতে ছিলেন। এবং আমার সামনে বুম্বাদা অনামিকাদিকে বলেন, ‘তুমি আজকাল মেম নিয়ে ঘুরছ’? তার কিছুদিন পরেই বুম্বাদা আমাকে ডেকেছিলেন নিজের পরিচালনায় একটা ছবি করবেন বলে। আমার লুক টেস্টও হয়েছিল। ‘শিমুল পারুল’-এর ক্ষেত্রে বুম্বাদা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন বলে আমার জানা নেই। যেটা অনামিকাদি বলেছেন।”
অভিনেত্রী জানান, ‘শিমুল পারুল’ যেদিন শেষ হওয়ার দু’দিন পরেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ি চলে আসার পর বন্ধ হয়ে যায় কাজ। ফলে কয়েকটা ছবি করার পর তাঁর দীর্ঘদিনের গ্যাপ ছিল। কারণ বিয়ে এবং পড়াশোনা করছিলেন অপরাজিতা। ঠিক করেছিলেন অভিনয় আর করবেন না। “ততদিনে আমি মোটা হয়ে গিয়েছি। ইন্ডাস্ট্রিতে মোটা হয়ে যাওয়ার বিরাট সমস্যা আছে। দু’বছর ইন্ডাস্ট্রির দিকে পা বাড়াইনি”, বলেন অভিনেত্রী।
সেই সময় চ্যানেল এইটে অপরাজিতা আঢ্যর স্বামী সাউন্ড রেকর্ডিস্ট। তাঁকে খাবার দিতে যেতেন। তখন হয়তো কারও কারও সঙ্গে দেখা হত। এর বাইরে আর স্টুডিওর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। সাতানব্বইয়ে বিয়ে আর আটানব্বন-নিরানব্বই এভাবেই কেটেছে অভিনেত্রীর। তিনি বলেন, “অনামিকাদির সঙ্গে ‘শিমুল পারুল’-এর পর আর একসঙ্গে কাজ হয়নি। ওঁর সঙ্গে যখন আমার পরিচয় ওঁর বাড়িতে ল্যান্ডলাইন ছিল। আমার তাও নয়। অনামিকাদির ল্যান্ডলাইন নম্বরটা আমার কাছে ছিল। পরবর্তীকালে সবারই নম্বর চেঞ্জ হয়। ওঁর মোবাইল হয়েছে ততদিনে, আমারও। উনি আমাকে যোগাযোগ করেননি, আমিও করিনি। এবং আমার সাংসারিক ব্যস্ততার মধ্যে আমি শুটিংয়ে ফিরব কিনা ঠিক ছিল না।”
দু’বছর পরে ‘আলফা বাংলা’-য় কামব্যাক করেন অপরাজিতা। ‘তারা’-য় একটি শো শুরু করেন। তখন থেকে পরিচিতি হয়। অভিনেত্রীর বলেন, “এর আগে আমার অভিনীত স্বপন সাহা বা হরনাথ চক্রবর্তীর ছবি নিয়ে তেমন আলোচনাই হয়নি। আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে আমাদের মতো চুনোপুঁটিদের ইন্টারভিউ নেওয়া হত না। ‘এক আকাশের নীচে’-র পর আমার পরিচিতি হয়। ‘আলফা বাংলা’য় কাজের পর পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। তখন আর ওই আগের ছবিগুলোর কথা কেউ জিজ্ঞেস করেনি বা বলাও হয়নি, যে অনামিকাদি আমাকে এই সুযোগটা দিয়েছিলেন বা স্বপন সাহার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন।”
এই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অপরাজিতা বলেন, “এগজ্যাক্টলি, উনি আমার মাতৃসম এখনও তাই, ওঁকে খুবই ভালবাসি। শুনলাম একটা ইন্টারভিউয়ে বলেছেন, উনি আমাকে অনুপ সেনগুপ্ত বা প্রভাত রায়ের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি কোনওদিন অনুপ সেনগুপ্ত বা প্রভাত রায়ের ছবি করিনি। আর একটা কথা উনি বলেছেন যে, স্বপন সাহার ওখানে আমার বর সাউন্ড রেকর্ডিস্ট ছিলেন। ওই ‘শিমুল পারুল’ করতে গিয়েই আমাদের বিয়ে হয়। তেমনটা কিন্তু নয়। আমার বরের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল রণজিৎ রায়ের সিরিয়ালে। সেটা স্বপন সাহার ছবি করার আগে। আমার বর স্বপনদার সাউন্ড রেকর্ডিস্ট ছিলেন না।”
দেখা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি অপরাজিতা আঢ্য, এমনই অভিযোগ ছিল অনামিকা সাহার। অপরাজিতা বলছেন, “না এটা ঘটনা নয়। আসলে মাঝে দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে অনামিকাদির কাজ হয়নি। মানে ফ্রেম শেয়ার করিনি। হয়তো রানিংয়ে দেখা হয়েছে। অনামিকাদিকে চিনতে পারিনি এমন হয়নি।” শেষবার ওঁর সঙ্গে কবে দেখা হয়েছিল? প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী জানান, গত মাসে নেতাজি ইন্ডোরে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। কেমন আছেন জানতে চাওয়ার পর বলেছিলেন, “তুমি পাভেলের ছবি করলে তোমার সঙ্গে তো আমার দেখাই হল না।” উত্তরে অনামিকা বলেছিলেন, “হ্যাঁ, পাভেলের ছবি করলাম। ছোট রোল কিন্তু সুন্দর। তোমার সেদিন পোস্টার শুটে যাওয়ার কথা ছিল, এলে না।” সেদিন কস্টিউম ঠিক না আসায় যেতে পারেননি বলেই জানিয়েছিলেন অপরাজিতা।
“এতকথা কিন্তু হয়েছিল। তারপরও ওঁর কেন মনে হল আমি ওঁকে রেকগনাইজ করি না বা পাত্তা দিই না আমি জানি না।” বর্ষীয়ান অভিনেত্রী অনামিকার এমন চাহিদা নয় যে, অপরাজিতা শুধু তাঁর প্রশংসা করুন বরং একবার তিনি যদি খোঁজ নেন মাম্মাম কেমন আছে, তা হলেই তাঁর ভাল লাগবে বলে জানান। সে কথা শুনে হেসে অপরাজিতা বলেন, “উনি আমার মাতৃসম আবারও বলছি, মায়েরা সবসময়ই বেশি অভিমানী হয়। ওঁর ও হয়তো সেরকম কিছু মনে হয়েছে। যদি আমার কারণে অভিমান হয়ে থাকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করিনি। আমার খারাপ লেগেছে উনি আমাকে ভুল বুঝেছেন বলেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.