গৌতম ভট্টাচার্য: “কীসের এত তাড়া ছিল তোমার, নিজে কেন ফিল্ম প্রোডিউস করলে না? এই লড়াইয়ের তো একটা উত্তেজনা আছে। একটা মজা আছে। ভাই সেটা বুঝলে না তুমি?”, জন্মদিনেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কণ্ঠে আক্ষেপের সুর সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে।
বছর দুয়েক আগের কথা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস। উত্তর কলকাতার লাহা বাড়িতে এক বিজ্ঞাপনী শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ওদিকে তখন উদগ্রীব সুশান্ত সিং রাজপুত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, যে কখন মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন, কথা বলতে পারবেন! সৌরভ কিন্তু সবটাই জানতেন। আর তাই শুটিং শেষ হওয়ার আগেই সুশান্তকে সোজা ডেকে পাঠান লাহা বাড়িতে। কী প্রাণোচ্ছল ছেলে! সেই ছেলেই কীভাবে এরকম চরম একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে? এখনও ভাবিয়ে তুলছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Sourav Ganguly)।
আসলে কেরিয়ারের একটা সময়ে তিনি নিজেও তো বহু চড়াই-উতরাইয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। তবে, কঠিন সময়ে বিচলিত না হয়ে ধরে খেলেছেন। ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন। শত সমালোচনার যোগ্য জবাব দিয়েছেন। ভারতীয় টিমে সিলেকশনের কোট আঁকড়ে রেখেছিলেন যথা সময়ে পড়বেন বলে! সময়ও এল। বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ঠিক সেই কোটটা পড়ে বসেই যোগ্য জবাব ছুঁড়ে দিয়েছেন এই বঙ্গসন্তান। দেখিয়ে দিয়েছেন যে এভাবেও ফিরে আসা যায়! লক্ষ লক্ষ অনুরাগীদের কাছে প্রত্যাবর্তনের আরেক ‘সমার্থক’ হয়ে গিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাই তো নিজের ৪৮তম জন্মদিনেও ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর কাছে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আক্ষেপ করেছেন যে, সুশান্তও কি দাঁতে দাঁত চেপে বলিউডের ময়দানে লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারলেন না? পর্দার ‘মাহি’র আকস্মিক প্রয়াণে তিনি যে এখনও শোকাতুর, তাঁর কথাতেই স্পষ্ট!
আচ্ছা, বিষণ্ণ সুশান্ত সিং রাজপুত (Sushant Singh Rajput) তাঁর কাছে পরামর্শ চাইতে এলে কী বলতেন মহারাজ? এপ্রসঙ্গে সৌরভের উত্তর, “সুশান্তের ঘটনায় আমি একেবারে হতভম্ব! আজও ঘোর কাটেনি। এটা কী করল? কেন করল? লাহা বাড়িতে একবার আমি বিজ্ঞাপনের শুটিং করার সময় সুশান্ত দেখা করে গিয়েছিল। কী চমৎকার ছিল ছেলেটা! এত সাকসেসফুলও ছিল। আমি জানি না সত্যি কী ঘটেছে? আত্মহত্যা? না যা রটছে সেটা সত্যি? কিন্তু যদি আত্মহত্যা হয়, আমার চিরকালীন প্রশ্ন হবে কেন? কেন? কেন? সেই শকিং রবিবার দুপুরে শোনার পর থেকে আমি ভেবে পাচ্ছি না কেন করল? একবারও বাবার কথা ভাবল না? একবারও ভাবল না জীবনে কত সময় পড়ে আছে? এটা তো আমাদের স্পোর্টস লাইন না যে দু’-একবছর ক্ষতি মানেই অনেক ক্ষতি! এখানে বেশি বয়েসেও দিব্যি কাজ করা যায়। সত্তোরোর্দ্ধ মিস্টার বচ্চন নইলে কী করে আজও ‘বস’ থাকেন?”
চতুর্দিকে যখন ‘নেপোটিজম’, ‘ফেবারিটজম’ নিয়ে গেল গেল রব উঠেছে, সেই প্রসঙ্গও কিন্তু উঠে এল সৌরভের সঙ্গে কথোপকথনে। বললেন, “আমি বুঝি না এসব কথা। নেপোটিজম। গ্রুপিজম এসব। তুমি ওপরে উঠতে চাইছ। অন্যদের সরিয়ে জায়গা করতে চাইছ, তারা কী কখনও ছেড়ে দেবে? বড় প্রযোজক ছবি থেকে বাদ দিয়েছে তো সো হোয়াট? তোমার তো ইন্ডিয়ান টিমে সিলেকশন হচ্ছে না যে ওটায় বাদ তো দেশের হয়েই বাদ! বলিউডের ইকো-সিস্টেম আলাদা। তুমি তো নিজে ছবি প্রোডিউস করে নিজে হিরো হয়েও হিট দেওয়ার সুযোগ পেতে পারতে। শাহরুখ, আমির, সলমনরা কি বড় প্রোডিউসারের হাতে নিজেদের ভাগ্য পুরো গচ্ছিত রাখে? সবাই নিজের প্রোডাকশন কোম্পানি করে নিয়েছে। একটু সময় নিয়েও তুমিও না হয় করতে। আমার কাছে সুশান্ত এলে বলতাম, গুলি করছে তো তোমায়? গুলিটা খাও। খেয়ে ট্রেনিংয়ে যাও। আরও রগড়াও নিজেকে আরও বড় অ্যাক্টর করার জন্য। লড়াই বাড়াও। একটা হিট দাও। দেখবে দুনিয়া বদলে গিয়েছে। সব আবার পায়ে এসে পড়ছে। কেন ছেড়ে দেবে লড়াই এত তাড়াতাড়ি? তুমি তো একা এই সমস্যার সম্মুখীন হওনি, যুগ যুগ ধরে আরও অনেকেই ফেস করেছে। এই লড়াইয়ের তো একটা উত্তেজনাও আছে। একটা মজাও আছে। ভাই সেটা বুঝলে না তুমি?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.