আকাশ মিশ্র: শিল্পীদের কোনও সীমানা বা গণ্ডিতে বাঁধা যায় না। তাঁদের উপস্থিতি গোটা বিশ্বজুড়ে। সুরের মূর্চ্ছনায়, তুলির টানে বা শব্দের জাদুতে তাঁরা গোটা দুনিয়াকে এক করে রেখেছেন। সেই কারণেই এদেশে যখন কিংবদন্তির প্রয়াণ হয়, তখন মন কেঁদে ওঠে প্রতিবেশি দেশেরও। এপার বাংলা যখন প্রিয় শিল্পীকে হারিয়ে মর্মাহত, তখন ওপার বাংলাতেও মন খারাপের দিন। ঠিক যেমনটি জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রুনা লায়লার। এপারের শোকে আচ্ছন্ন ওপারের জনপ্রিয় শিল্পীও।
মঙ্গলবার সন্ধে নাগাদ হঠাৎই বাংলাদেশে বসেই রুনা লায়লা জানতে পারেন, তাঁর প্রিয় সন্ধ্যাদি আর নেই। খবরটা পেয়ে থমকে গিয়েছিলেন কিছুক্ষণের জন্য। পরে সম্বিৎ ফিরে পান। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যে গুরুতর অসুস্থ তা তিনি জানতেন, কিন্তু হঠাৎ এভাবে চলে যাবেন, তা মেনে নিতে এখনও কষ্ট হচ্ছে রুনা লায়লার। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের তরফ থেকে শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ”খুব মন খারাপের খবর। বাংলা গানের অন্যতম সেরা শিল্পী তিনি। সন্ধ্যাদি তো বহু শিল্পীর কাছে অনুপ্রেরণা ছিলেন। খুব ভাল মনের মানুষও ছিলেন সন্ধ্যাদি।”
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কথা বলতে গিয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ভেসে যাচ্ছেন রুনা লায়লা। সুরের দুই জাদুকরীর সাক্ষাৎও হয়েছিল বহুবার। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে রুনা লায়লা জানান, ”একটা রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারক হয়ে ভারতে গিয়েছিলাম। সেখানে গজল গেয়েছিলাম। সেই এপিসোড দেখেছিলেন সন্ধ্যাদি। পরে আমার সঙ্গে দেখা হলে, তিনি আমার গানের প্রশংসা করে বলেছিলেন, তোমার ফোন নাম্বার আমার কাছে থাকলে, আমি শো দেখেই ফোন করতাম। কী ভাল গেয়েছো তুমি! সন্ধ্যাদির চলে যাওয়া সংগীত জগতে খুব বড় শূন্যতা। ”
মঙ্গলবার পেরিয়ে বুধবার। গোটা বিশ্বের ঘুম ভাঙল ‘ডিস্কো কিং’ বাপি লাহিড়ীর মৃত্যু সংবাদে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের শোক সামলানোর আগেই আরেক কিংবদন্তির প্রয়াণ। বাংলাদেশেও দারুণ জনপ্রিয় বাপি লাহিড়ীর গান। আর রুনা লায়লা ও বাপিদা মানেই সুপারহিট জুটি।
বাপি লাহিড়ীর সুরে বহু সিনেমায় গান গেয়েছেন রুনা। ‘জানে বাহার’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে বাপি লাহিড়ীর সুরে মহম্মদ রফির সঙ্গে ডুয়েট করেছিলেন বাংলাদেশের শিল্পী। তবে শুধু সিনেমার গান নয়, বাপি লাহিড়ীর সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘সুপার রুনা’ নামে একটি অ্যালবামেও গান গেয়েছিলেন তিনি। সেই অ্যালবামের ‘দে দে প্যায়ার দে’ গানটি সুপারহিট হয়। বাপি লাহিড়ীর সঙ্গে দেশে, বিদেশে প্রচুর স্টেজ শোও করেছেন রুনা লায়লা। তাই বাপি লাহিড়ীর প্রয়াণের খবর পেয়ে রুনার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সে সব সময়ের ছবি। শিল্পী জানালেন, ”প্রথমে লতাদি, তারপর সন্ধ্যাদি, এবার বাপিদা। একদম মেনে নিতে পারছি না। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই মানুষগুলো তো আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছিলেন। বাপিদার সঙ্গে কত স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। কত গান গেয়েছি একসঙ্গে, কত আড্ডা। ওরকম হাসিখুশি মানুষ খুব কম দেখেছি। আমরা দু’ জনে মিলে কত হিট দিয়েছি। এই শোক সামলানো খুব কঠিন। খুব বড় ক্ষতি হয়ে গেল সংগীত জগতের! একটা সোনালি যুগের অবসান হল। ‘
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.