সুকুমার সরকার, ঢাকা: মধুচক্র, মাদক কারবারে এবার নাম জড়াল বাংলাদেশের অভিনেত্রী পরীমণির (Pori Moni)। এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে আটক করা হয়েছে বলে খবর র্যাব সূত্রে। সূত্রের দাবি, পরীমণির বাড়ি থেকে প্রচুর এলএসডি জাতীয় মাদক এবং মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মধুচক্র চালানোরও। ইতিমধ্যে আরও দুই নামী অভিনেত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন, মাদক ব্যবসা, মধুচক্র আসর বসানো-সহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে সপ্তাহখানেক আগেই বাংলাদেশের কিছু নায়িকা এবং মডেলদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে দেশের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিয়াসা এবং মৌ নামে দুই অভিনেত্রীকে। তাদের হেফাজতে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এর মাঝেই বুধবার বিকেলে দেশের এলিটবাহিনী র্যাব পরীমণির বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু পরিমণি বাড়ির দরজা না খুলে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফোন করে তাঁকে রক্ষার আবেদন জানান। প্রায় আধ ঘণ্টা র্যাবকে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তিনি ফেসবুক লাইভও করেন।
লাইভে তিনি জানান, তাঁর দরজার বাইরে অজ্ঞাত কিছু লোক জড়ো হয়েছেন। তাঁরা ঢাকার অভিজাত বনানীর বাড়িতে ঢোকার জন্য দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন। এতে তিনি ভয় পাচ্ছেন। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। র্যাব বাড়িতে ঢুকলে ফেসবুক লাইভ বন্ধ করে দেন তিনি। RAB এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ জানান, এই নায়িকার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণে মদ এবং মাদক উদ্ধার হয়েছে। পরীমণিকে আটক করে র্যাবের সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও খবর। সেখানেই চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। র্যাবের লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মইন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে চিত্রনায়িকা পরীমণির বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে।” গত জুন মাসে রাজধানীর একটি ক্লাবে পরীমণিকে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে ব্যবসায়ী নাসির ইউ আহমেদ-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
পুলিশ সূত্রে খবর, পিয়াসা ও মৌ দুজনই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এদের অধীনে রয়েছে ১০০-১৫০ লাস্যময়ী। বিভিন্ন ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিশানা বানাত তারা। পরে তাঁদের থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। মান-সম্মানের ভয়ে ওই ব্যক্তিরা মুখ খোলেননি। পিয়াসা এবং মৌয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হবে বলে খবর। জানা গিয়েছে, পিয়াসা রাজধানীর বারিধারা, উত্তরা এবং গুলশানের কয়েকটি বাড়িতে মাঝেমধ্যেই পার্টির আয়োজন করতেন। প্রতিটি পার্টিতেই গোপন ক্যামেরা বসাতেন পিয়াসা। রাখা হতো মদ, ইয়াবা-সহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য। ‘টার্গেট’ ব্যক্তি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে কৌশলে তাকে গোপন একটি কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। পরবর্তী সময়ে তার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের দৃশ্য সামনে রেখেই তার কাছ থেকে নিয়মিতভাবে হাতিয়ে নেওয়া হত মোটা অঙ্কের টাকা। পিয়াসার ঘরের টেবিল থেকে যৌন উত্তেজক চার প্যাকেট ইয়াবা জব্দ করে ডিবি। পরে তার রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে ৯ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। অভিযানের একপর্যায়ে ফ্রিজ খুলে একটি আইসক্রিমের বাক্স থেকে সিসা তৈরির কাঁচামাল ও বেশ কয়েকটি ই-সিগারেট পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের মে মাসে ঢাকার বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে নাম ছিল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার। সেই মামলার আসামি তার প্রাক্তন স্বামী বলেও দাবি করেন পিয়াসা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.