তপন বকসি, মুম্বই: সাংবাদিকের থেকে এখন শতহস্ত দূরে রাখা হয়েছে রানাঘাটের রানু মণ্ডলকে। কাজের সূত্রে এখন মুম্বইয়ে রয়েছেন তিনি। আর সেখানে তাঁকে রাখা হয়েছে গোপনে। লোকচক্ষুর আড়ালে। আপাতত যতদিন সাংবাদিক সম্মেলন না হয়, ততদিন। রানুর সর্বক্ষণের সঙ্গী অতীন্দ্র অবশ্য রয়েছেন তাঁর সঙ্গে।
রানাঘাটের রানু মণ্ডলকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সুরসাম্রাজ্ঞী’ করে তোলার নেপথ্য নায়ক এই অতীন্দ্র। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, “এই যে রানুদি ভুলবশত আপনাদের ‘ভগবানের চাকর’ বলে ফেলায় ইন্টারনেট বা ফেসবুকে নেটিজেনদের সমালোচনা হচ্ছে, তার উত্তরে কি বলবেন?” অতীন্দ্র বললেন, “তারপরেও আমরা রানুদির সঙ্গে রয়েছি। দিদিকে ছেড়ে তো যাইনি। আসলে মনের কথা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারেননি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, উনি সত্যি সত্যি আমাদের তাই বলতে চেয়েছেন।” আর ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর যে চাকরিটা করছিলেন? তার কী হবে? উত্তরে অতীন্দ্র বললেন, “ওটা ছোটখাটো একটা চাকরি। তেমন বড় কিছু একটা নয়।”
মুম্বইয়ের আন্ধেরিতে হিমেশ রেশমিয়ার স্টুডিওর সামনের রাস্তায় গণেশ ঠাকুর মণ্ডপে রওনা দিয়েছেন। বাজি আর ব্যান্ডের শব্দে কানের পর্দা ফাটার জোগাড়। রানু মণ্ডলের সর্বক্ষণের সঙ্গী অতীন্দ্র চক্রবর্তী আর তপন দাস মনের আনন্দে গণেশ ঠাকুরের প্যান্ডেলে যাওয়ার ছবি মোবাইলে তুলতে ব্যস্ত। এর মধ্যেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর মুম্বই প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা। জানা গেল, রানুদিকে দিয়ে শুধু ‘তেরি মেরি কহানি’ নয়, একই ছবিতে (হ্যাপি হার্ডি অ্যান্ড হির) আরও দু’টি গান গাওয়াচ্ছেন সংগীত পরিচালক হিমেশ। অতীন্দ্রের কথায়, “ওই দুটো গান আরও সুন্দর। আরও মেলোডিয়াস।” কিন্তু রানুদি কোথায়? অতীন্দ্র জানালেন, “স্টুডিওর দোতলায় শুটিং করছেন।”
হিমেশের স্টুডিওর দু-তিনজন স্টাফ বাইরে এসে পরিস্থিতি দেখে গেলেন। শোনা গেল, হয় ২ সেপ্টেম্বর, না হয় তার পরের সপ্তাহে হিমেশ সাংবাদিক সম্মেলন করে সবার সামনে অফিসিয়ালি রানু মণ্ডল আর নিজের গাওয়া গান নিয়ে মুখোমুখি হবেন। তার আগে রানুকে তাঁরা ভীষণ গোপনীয়তায় মুড়ে রাখতে চাইছেন। ২ সেপ্টেম্বর সোনি চ্যানেলের রিয়্যালিটি শো ‘সুপারস্টার সিঙ্গার’-এ রানুর আত্মপ্রকাশ করার কথা। গান রেকর্ডিং সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সেদিন অথবা অসম্পূর্ণ থাকলে তার পরের সপ্তাহে সাংবাদিক সম্মেলন করবেন হিমেশ। মোট কথা তার আগে রানু মণ্ডলকে কোনও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা বা বাইরের লোকের সামনে আসা বারণ। দুদিন আগে অতীন্দ্ররা রানুকে নিয়ে জুহু বিচে সেলফি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গে যে ছবি তুলেছেন, তাতে হিমেশের স্টুডিওর স্টাফদের অখুশি ধরা পড়ল।
দোতলার গান রেকর্ডিংয়ে রানু বোধহয় একটু ফাঁক পেয়েছেন, তাই নেমে এসেছেন নিচে। স্টুডিওর রিসেপশন পেরিয়ে মূল দরজা খুলে তপন দাস আর অতীন্দ্রকে খুঁজতে সটান রাস্তায়। তারপর বলতে লাগলেন, “আমার এই ব্যান্ডের আওয়াজ খুব ভাল লাগে।” আর যেই না রানুকে দেখা, রাস্তায় ভিড় করে গণেশ ঠাকুর দেখা মানুষ ঝাঁপিয়ে রানাঘাটের রানুদির পাশে। একটা সেলফি চাই-ই চাই। চোখের নিমেষে পঁচিশ, তিরিশ, চল্লিশজন ঘিরে ধরেছেন রানুকে। মনে রাখতে হবে এঁরা কেউই কিন্তু বাঙালি নন। বোঝা গেল, ইন্টারনেট মারফৎ রানু মণ্ডলের পরিচিতি কোথায় পৌঁছেছে। রানু আর অতীন্দ্রদের ভিড়ের মাঝখানে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে হৈ হৈ করে হিমেশের স্টুডিওর স্টাফেরা বাইরে বেরিয়ে এসে তড়িঘড়ি ওঁদের তিনজনকে স্টুডিওর ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন ততক্ষণে। কিন্তু মানুষদের আটকানো যাচ্ছে না। তাঁরাও স্টুডিওর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকবেন। তাড়াতাড়ি তাই তিনজনকে পত্রপাঠ ঢুকিয়ে দেওয়া হল আরও ভেতরে। সেই সময়কার মত হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন স্টুডিওর কর্মীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.