শম্পালী মৌলিক: পুনর্মিলন। শব্দটার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে একরাশ নস্টালজিয়া। খুলে যায় স্মৃতির অজস্র পাতা। যে পাতাগুলো দীর্ঘদিন উলটে দেখা হয়নি, রিইউনিয়নের সময় সেগুলোই যেন জীবন্ত জলছবি হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।
নিজের প্রথম ফিচার ফিল্মের জন্য এমনই একটি বিষয় বেছে নিয়েছেন শ্রীমন্ত সেনগুপ্ত। ছবির নাম ‘আবার বছর কুড়ি পরে’। নামেই বোঝা যায় পুনর্মিলনের কাহিনি। আর মনে পড়ে যায় ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র সেই বিখ্যাত অ্যালবামের কথা। না, ছবির সঙ্গে সেই অ্যালবামের কোনও যোগ নেই, নামটুকু ছাড়া। এই ছবির প্রধান চারটি চরিত্রে থাকছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, তনুশ্রী চক্রবর্তী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অভিষেককে ‘বালা’, ‘স্ত্রী’ ইত্যাদি ছবিতে এবং ‘মির্জাপুর’, ‘টাইপরাইটার’-এর মতো ওয়েবসিরিজে আগে দেখা গিয়েছে। যাঁর টলিউডে ডেবিউ হচ্ছে এই ছবির মাধ্যমে।
কে এই পরিচালক শ্রীমন্ত সেনগুপ্ত? যাঁর প্রথম ছবিতেই এমন হেভিওয়েট কাস্ট! শ্রীমন্ত আদতে কলকাতার ছেলে হলেও, বিগত পনেরো বছর ধরে মুম্বই নিবাসী। কনটেন্ট ডিভিশন হেড করেছেন অনেক সংস্থার জন্যই, ফিকশন-ননফিকশন উভয়ক্ষেত্রেই। টেলিভিশন শো ডিরেক্ট করেছেন, তবে এটাই তাঁর প্রথম সিনেমা হতে চলেছে। বছর চারেক ধরেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিলেন। শ্রীমন্ত এবং মোনালি সেন চৌধুরি দু’জনে মিলে ছবির গল্পটা লেখেন। চিত্রনাট্যও তাঁদের দু’জনের। সংলাপ পরিচালক শ্রীমন্তর নিজের লেখা। রিইউনিয়ন নিয়ে সিনেমা আগে যে হয়নি এমনটা নয়, তবে এই ছবিটি আদ্যন্ত বাঙালিয়ানায় ভরপুর একটা ছবি হতে চলেছে। এই ছবির ক্ষেত্রে স্কুলের বন্ধুদের কুড়ি বছর পরে আবার দেখা হচ্ছে। এই বন্ধুদের সকলেই যে যার জীবনে ব্যস্ত। একজন কর্পোরেট চাকুরে, একজন ডাক্তার, একজন গৃহবধূ, সবাই বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে। একজনই কলকাতায় থাকে, তার উদ্যোগেই ঘটছে পুনর্মিলন। ‘রিইউনিয়ন আমার মতো প্রায় সকলেরই একটা পছন্দের বিষয়। যত বয়স বাড়তে থাকে রিইউনিয়নের প্রয়োজন যেন বাড়তে থাকে। প্রায় বছর দশেক ধরেই আমি এটা ভাবছিলাম। একেবারেই মধ্যবিত্ত বাঙালির একটা গল্প বলতে চাইছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যেটা সবচেয়ে জরুরি- দ্য প্রসেস অফ পিপল কামিং ব্যাক টুগেদার। ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় বন্ধুদের দেখা হয় না। এখন তো হোয়াটসঅ্যাপেই বন্ধুদের গ্রুপ আছে। কিন্তু দেখাটা হয় না, আলাদা শহরে থাকে বলে। এদের ক্ষেত্রেও তেমনই। একটা পাহাড়ি জায়গায় এদের আবার দেখা হচ্ছে। তাগদায় এই পুনর্মিলন ঘটছে। প্রধান চারটি চরিত্র ছাড়া, আরও অনেক মুখ থাকবে যেমন সুমন্ত মুখোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনু মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য (সাংবাদিক) প্রমুখ। যেহেতু এখানে কুড়ি বছর আগের গল্পও থাকবে, এই বন্ধুদের স্কুলজীবন যখন দেখানো হবে, সম্পূর্ণ নতুন-ইয়াং ছেলেমেয়েরা সেই চরিত্রে অভিনয় করবে। নয়ের দশকে এদের স্কুলজীবন, তারপর কেটে গিয়েছে কুড়ি বছর। এইভাবে ছবিটা এগোবে।’ জানালেন পরিচালক।
ক্যামেরার দায়িত্বে প্রতীপ মুখোপাধ্যায়। মিউজিক করছেন ‘সোয়েটার’-খ্যাত রণজয় ভট্টাচার্য। নিজের প্রথম ছবিতে এতজন তারকাকে একত্রিত করার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য পরিচালক ধন্যবাদ দিতে ভুললেন না প্রযোজক অনিমেষ গাঙ্গুলি, সৌম্য সরকার ও প্রতীক চক্রবর্তীকে। আর প্রত্যেকেরই গল্পটা ভাল লেগেছে, কানেক্ট করতে পেরেছেন শুনে, সেটাও অভিনেতাদের রাজি হওয়ার আরেকটা কারণ। ‘আমি ভাগ্যবান এত বড় সব অভিনেতারা আমার মতো একজন ডেবিউট্যান্ট ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করতে রাজি রাজি হয়েছে,’ হেসে বললেন শ্রীমন্ত। জানা গেল আবিরের কম বয়সের চরিত্রে করছেন আর্য দাশগুপ্ত, অর্পিতার ছোটবেলাটা করছেন দিব্যাশা দাস, তনুশ্রীর টিনএজে পাওয়া যাবে তানিকা বসুকে আর অভিষেকের স্কুলবেলার চরিত্রে পূষণ দাশগুপ্ত। এছাড়া রাজর্ষি নাগ, অরিত্র দত্ত বণিক থাকছেন অন্যান্য চরিত্রে। মার্চের ১৭-১৮ তারিখ নাগাদ পাহাড়ে শুটিং শুরু হওয়ার কথা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.