এই প্রথমবার কেরিয়ার এবং জীবনের টানাপোড়েন নিয়ে মুখ খুললেন অর্জুন চক্রবর্তী (Arjun Chakrabarty)। কথোপকথনে বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
কেমন আছেন?
– ভালোই আছি, চলছে। আজকাল তো সেলিব্রিটিদের নিয়ে যে যা খুশি লিখে দিতে পারে, তো সেই সব নিজের মতো করে ডিল করছি!
আপনার ধারাবাহিকটাও তো বন্ধ হয়ে গিয়েছে?
– হ্যাঁ, আমার ট্র্যাকটা হঠাৎ করেই বন্ধ করে দিয়েছিল। ছয়মাস চলেছিল। আমার চরিত্রটা যেমন হঠাৎ করেই ঢুকেছিল, তেমন হঠাৎ করেই উধাও হল।
এতে আপনি নিজে অবাক হননি?
– খানিকটা তো হয়েছি। আগে থেকে জানতামও না, এখন হয়তো টেলিভিশনে এইভাবেই কাজ হয়। জানলে ভালো হত, সেই মতো প্ল্যান করা যায়। এবং অদ্ভুতভাবে সেই সময়েই সৃজিতদার ছবিটাও এল। ফলে যা হয় বোধহয় ভালোর জন্যই হয়।
‘দেবী চোধুরানী’ শুটিং করার সময় তো সিরিয়াল চলছিল?
– হ্যাঁ, খুব হেকটিক ছিল। তার মধ্যে ‘আবার রাজনীতি’-র কাজও ঢুকে পড়েছিল। বেশ চাপের সময় ছিল। তবে এমনিতে কাজকর্ম যা স্লো চলছে, হেকটিক হলে সেই চ্যালেঞ্জ ভালোই লাগে।
এই মুহূর্তে নিজের কেরিয়ার নিয়ে তৃপ্তি বা অতৃপ্তি কতটা?
– নিজের কাজ নিয়ে আমি কখনওই খুব একটা তৃপ্ত হতে পারি না। জানি একটা সময়ের যে ব্যস্ততা সেটা স্থায়ী নয়। এরপর এমন ছয় মাস আসবে যখন কোনও কাজই থাকবে না। তবে এই মুহূর্তে একদম বসে নেই। মানসী সিনহার ছবিটা করব। এটা ফ্যামিলি ড্রামা। ছবিতে অপাদি, খরাজদা রয়েছেন। অন্বেষার সঙ্গে কাজ করব। এটা ওর প্রথম ফিচার। ফ্রেশ পেয়ারিং আমাদের। আশা করছি ৩ তারিখ থেকে শুটিংটা শুরু হবে।
২০১০ সালে ‘গানের ওপারে’ দিয়ে আপনার আবির্ভাব। অল্প বয়সে ডেবিউ করে সাফল্য পেয়েছিলেন। চোদ্দো বছর পর কী মনে হয় সেটা ভালো না খারাপ?
– সাফল্য কখনওই খারাপ নয়, তবে এটা তো ঠিক সাফল্যের পর ব্যর্থতা আসে। সেটা সকলেরই হয়। লো-ফেজ সবার আসে। আমারও এসেছে। ভবিষ্যতে সবটাই হাই ফেজ হবেই, সেটা তো হতে পারে না। এখন যেটা শিখেছি সেটা হল নিজেকে আরও প্রস্তুত করতে হবে। খারাপ সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। সেটা হ্যান্ডেল করার ম্যাচিওরিটি এসেছে। যখন ফাইনাল ইয়ারে পড়তে পড়তে ‘গানের ওপারে’ করেছিলাম তখন এত সিরিয়াসলি কিছু ভাবিনি। এখন অনেক প্ল্যান থাকে। তাই চিন্তাও বেশি।
প্ল্যান বলতে কী রকম?
– মানে নিজেকে কীভাবে দেখতে চাই। বা ধরো, নেক্সট তিনমাস কাজ না থাকলে কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয়…
কাজ না থাকলে কী করা উচিত?
– সবার দোরে দোরে গিয়ে তো কাজ চাইতে পারব না। সেটা করা মুশকিল। বরং তার চেয়ে নিজেকে প্রস্তুত করা, অপেক্ষা করার জন্য কিংবা ধৈর্য ধরে রাখতে পারা। আসলে এটার কোনও একটা পথ নেই। কী করা উচিত এটা সত্যিই বলা মুশকিল। হয়তো মনের মতো কাজ আসছে না, তখন যে কাজ এল, ‘হ্যাঁ’ করে দিলাম, এমনও হয়েছে। সো ফার সো গুড– এটাই নিজেকে বারবার বলি। আইডিয়াল ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স চায় সবাই। কিন্তু এই পেশায় থেকে আইডিয়াল ব্যালান্স হওয়াটা ইমপসিবল। তবে এটাও ঠিক বাড়িতে মেয়ের সঙ্গে থাকতে ভালো লাগে। কোথা দিয়ে যেন সময় কেটেও যায়। স্যানিটি বজায় থাকে।
এই চোদ্দো বছরে সেলেবদের জীবন নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় চুলচেরা বিচার বেড়ে গিয়েছে।
– মারাত্মক বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণেই ওই প্রতি মুহূর্তে স্টোরি দেওয়া বা বেড়াতে গেলেই ছবি দেওয়া থেকে বিরত থাকি। চেষ্টা করি কাজ রিলেটেড পোস্ট বেশি করতে। আমাদের কাজটা দর্শকের চাহিদার জন্য, সে নিয়ে বিরোধ নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনটা দর্শকের খোরাক মেটানোর জন্য না হলেই ভালো।
অভিনেতারা তাঁদের জীবনের ব্যক্তিগত আনন্দের মুহূর্ত অনেক সময়ই আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই শেয়ার করে থাকেন। এবার তাঁদের জীবনে বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স হলেই সেই সব পুরনো ছবি বের করে আনা হয়। কী বলবেন?
– একটু উনিশ-বিশ হল, বা একটু ঝগড়া হল কি হল না বা ঝগড়া হয়তো হয়ওনি- লোকে ধরে নিচ্ছে ঝগড়া হয়েছে। ‘অমুক অভিনেতার জীবনে বিচ্ছেদ হচ্ছে আমরা জানি, তাহলে দেখে নিন আরও একজন আছে যার
বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে’– এইভাবে খবর হচ্ছে আজকাল। ক্লিকবেট-এর জন্যই হোক বা যে কারণেই হোক, এটা খুব ড্যামেজিং। মেন্টাল হেলথ এফেক্ট করছে শুধু সেই পাবলিক ফিগারের নয়, তার আশপাশের ভালোবাসার মানুষেরও। যা সব চলছে, তাতে মনে হচ্ছে যখন শুটিং থাকবে না, তখন পাহাড়ে গিয়ে বসে থাকতে হবে! সেটা তো সম্ভব নয়। আমাদের তো সোশালাইজও করতে হয়। নারী এবং পুরুষ একসঙ্গে থাকলেই মুশকিল। আশপাশে হয়তো কেউ ছিল, সে গিয়ে হয়তো বলে দিল তার সাংবাদিক বন্ধুকে। তা হলে এবার আশপাশ দেখে কথা বলতে হবে। যেন আমি আড্ডা মেরে অন্যায় করছি। এই সব ভেবে সারাক্ষণ চলতে হয়। এবং এখন মনে হচ্ছে আরও ভাবা উচিত।
শিকাগোতে বঙ্গ সম্মেলন থেকে ফেরার পর আপনার সঙ্গে একজন নায়িকার নাম জড়িয়ে যে খবর ছড়াল সেটা নিশ্চয়ই ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তি এনেছে?
– অবশ্যই এফেক্ট করেছে। এটা খুব ডিফিকাল্ট। এর থেকে কঠিন সময় আর কিছু হতে পারে না। এই রকম মানসিক অশান্তি যদি চলে তা হলে কাজ করা মুশকিল। নতুন কাজের সেটে গিয়ে ভাবছি এরা সবাই খবরটা পড়েছে, তাহলে এরা কি আমাকে নিয়ে ভাবছে! আমাকে নিয়ে কে কী ভাবল সেটা তো আমার ভাবার কথা নয়। কিন্তু অনুমান করে নিয়ে, সোশাল মিডিয়া-নির্ভর করে যা নয় তাই খবর হচ্ছে। আমার আর সৃজার ছবি একসঙ্গে নিয়ে হেডলাইন হচ্ছে। ‘ডিভোর্স’ শব্দ ব্যবহার করে লিখে দিচ্ছে। কম পোস্ট করলেও আমরা তো নিজেদের ছবিও একসঙ্গে দিয়েছি।
সেটা নিয়ে বলা হয়েছে এটা ড্যামেজ কন্ট্রোল!
– হ্যাঁ, আমরা একসঙ্গে আছি এটা প্রমাণ করার জন্য নাকি ছবি দিয়েছি। কোনও কিছু প্রমাণ করার জন্য আমি সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করিনি কোনওদিন। ড্যামেজ কন্ট্রোল করার জন্য ছবি দেব কেন!
আপনি এবং সৃজা এটা কীভাবে সামলেছেন?
– আমরা সব কিছু নিয়েই নিজেদের মধ্যে কথা বলি, ডিসকাস করি। তাছাড়া এটাই প্রথমবার নয়, এর আগেও গসিপ হয়েছে আমাকে নিয়ে। আগেও খবর বেরিয়েছে, সেটা আমাকে আমার চেনা লোকজন দেখিয়েছে। বাইরের সংবাদ মাধ্যমকে কন্ট্রোল করা আমার কাজ নয়। আমি আমার পরিবারের কাছে, কাছের মানুষের কাছে স্বচ্ছ থাকতে পারি। লোকের নানাবিধ মত থাকবে, সেটা নিয়ে আমার কিছু করার নেই। দুর্ভাগ্যবশত পাবলিক ফিগার হওয়ার এটা একটা প্রফেশনাল হ্যাজার্ড। এটা নিয়েই চলতে হবে।
একজন অভিনেতা, পরিচিত মুখ হওয়ার সুবাদে জানতে চাইব, সোশাল মিডিয়া কীভাবে হ্যান্ডল করা উচিত বলে মনে হয়?
– কাউকে উপদেশ দেওয়ার আমি কেউ নই। তবে হ্যাঁ, আমার মতো প্রাইভেট পার্সন যদি কেউ হয় তাহলে বলব ব্যক্তিগত মুহূর্ত, ব্যক্তিগত রাখাই ভালো। হ্যাভিং সেড দ্যাট, এটাও তো ঠিক আনন্দের মুহূর্ত শেয়ার করতে ইচ্ছে করতেই পারে। সত্যিই তো তাতে অন্যায় নেই। বাট ওই আর কী, এসবের জন্য প্রস্তুত থাকা, যে নেগেটিভ কমেন্ট, ট্রোল আসতেই পারে।
যে প্রসঙ্গে এত কথা, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে এই সবের পর?
– না, আমার কারও সঙ্গে কথা হয়নি। দাদা, বউদি, সৃজার সঙ্গে কথা হয়েছে। এটা তো সবাইকেই এফেক্ট করার কথা। ড্যামেজিং আর্টিকলে যাদের উল্লেখ রয়েছে তাদের এফেক্ট তো করবেই। খুবই কঠিন পরিস্থিতি। ভবিষ্যতে ছবির প্রোমোশনে যাব, তখন কী হবে ভাবছি! সৃজিতদার ছবিটাই তো মুক্তি পাবে…
এগজ্যাক্টলি, ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’-তে সহ-অভিনেতা হিসাবে থাকছেন…।
– প্রোমোশন তো আমার প্রফেশনাল ডিউটি। এগুলো কীভাবে ডিল করা উচিত আমি সত্যিই জানি না। এই মুহূর্তে আমার কাছে সলিউশন নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.