শম্পালী মৌলিক: সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালির কাছে ‘শবরমাতা’ বললেই যে নামটি মনে আসে তিনি হলেন মহাশ্বেতা দেবী। আর এক ধাক্কায় মনে পড়ে যায় ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘রুদালি’ কিংবা ‘অরণ্যের অধিকার’-এর মতো কালজয়ী সব সৃষ্টি। জ্ঞানপীঠ, ম্যাগসাইসাই, পদ্মবিভূষণ, বঙ্গবিভূষণ আরও অজস্র সম্মান তিনি অর্জন করেছেন কিন্তু কেবলমাত্র পুরস্কারের নিরিখে তাঁর মতো বড়মাপের মানুষকে ধরা যায় না! বরং মনে থেকে যায় শবরদের অধিকারের জন্য তাঁর আজীবন সংগ্রামের কথা। মনে রয়ে যায় প্রান্তিক মানুষদের পাশে নিরবচ্ছিন্নভাবে তাঁর দাঁড়ানোর কথা। সেই মহাশ্বেতা দেবীর জীবন ও কাজের অনুপ্রেরণায় নতুন ছবি করতে চলেছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। এ ছবি লেখিকার জীবনচিত্র নয়, বরং তাঁরই আদলে তৈরি ‘মহানন্দা’ চরিত্রটি এ ছবির প্রাণভোমরা।
কী বলছেন পরিচালক অরিন্দম? “আমি সবসময়ই একটু অন্য ধরনের কাজ করতে চেয়েছি। ডিটেক্টিভ থ্রিলার ঘরানার বাইরেও জীবন নিয়ে ছবি করার ইচ্ছে ছিল। যদিও সেটা থ্রিলারের মধ্যেও ব্যবহার করেছি। কিন্তু শুধুই জীবন নিয়ে ছবি করার তাগিদ থেকে অনেকদিন ধরেই কাজ করছিলাম। শেষপর্যন্ত হাসান বলল, ‘এটা ঘোষণা করে দেওয়া ভাল।’ যদিও আমার সামনে ‘খেলা যখন’-এর শুট আছে এখন, এটার শেডিউল এক্ষুনি বলতে পারব না। পুরো চিত্রনাট্য তৈরি হবে, গল্পটায় যতক্ষণ না পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে পারব না। কারণ এটা এমন একটা প্রোজেক্ট, যা আমার ড্রিম প্রোজেক্ট। বলা চলে আমাদের সকলেরই মনের খুব কাছের। কারণ, এটা মহাশ্বেতা দেবীকে নিয়ে। তাঁর ভাবনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে এই ছবিটি। বায়োপিক বলব না। কারণ, ছবিটাকে শুধু তাঁর জন্ম-মৃত্যুর মধ্যে আবদ্ধ করতে চাই না। মহাশ্বেতা দেবী যেমন বহমান, যে কারণে ওঁকে বলা যায় একটা কনসেপ্ট। উনি একটা আন্দোলন। আমার ছবির গল্পটা অনেকটা সেই ধারায়।”
মানে একজন লেখিকার জীবন নিয়ে? “হ্যাঁ, আমার গল্পের কেন্দ্রচরিত্র একজন লেখিকা, যার নাম ‘মহানন্দা’। যে ওইরকমই বহমান। এই মহানন্দার মধ্যে কোথাও একটা মহাশ্বেতা দেবীর ছায়া আছে। এই মহানন্দার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় তার পরের প্রজন্ম। এইভাবে জীবনটা এগিয়ে চলে। বামপন্থী আন্দোলন, আইপিটিএ সব থাকবে, কিন্তু সবকিছুর চেয়ে বেশি থাকবে ‘মহাশ্বেতা দেবী’র সেই কনসেপ্ট। তাঁর আদর্শ, জীবন, কাজ জুড়ে থাকবে এই ছবিতে ওতপ্রোতভাবে। এটা বোধহয় আমার সবচেয়ে রাজনৈতিক ছবি হতে চলেছে। এত কাজ করতে করতে মনে হয়েছে কোথাও গিয়ে আমার রাজনৈতিক মতামতটা বলা দরকার,’’ বলছেন পরিচালক।
মূল কনসেপ্ট অরিন্দমের হলেও, ছবির চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখছেন শুভেন্দু দাশমুন্সী আর অরিন্দম শীল যৌথভাবে। আপাতত প্রধান তিনটি চরিত্রের নাম জানালেন পরিচালক। ‘মহানন্দা’ অর্থাৎ কেন্দ্রচরিত্রে গার্গী রায়চৌধুরি। আর নতুন প্রজন্মের যে মেয়েটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী একটি পরিবার থেকে এসেছে, সেও মহানন্দার কাজ এবং মতাদর্শে আকৃষ্ট হয়, সেই চরিত্রটিতে অভিনয় করছেন ইশা সাহা। আর ইশার প্রেমিকের চরিত্রে থাকছেন গৌরব চক্রবর্তী। ছবির মিউজিক করছেন বিক্রম ঘোষ। ‘খেলা যখন’-এর পাশাপাশি এই বড় প্রোজেক্টটি নিয়ে অরিন্দম শীল যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন, তা বোঝা গেল এই চটজলদি ঘোষণায়। তিনিই জানালেন মহাশ্বেতা দেবীর বাড়ির লোকজনের সম্মতি নিয়েই কাজ হচ্ছে। ‘মহানন্দা’-র প্রযোজনায় ফিরদৌসুল হাসান ও প্রবাল হালদার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.