শম্পালী মৌলিক: নিজের প্রথম ফিচার ফিল্মটি বানিয়ে ফেললেন অপরাজিতা ঘোষ। এতদিন দর্শক অভিনেতা-উপস্থাপক অপরাজিতাকে ক্যামেরার সামনে দেখতেই অভ্যস্ত ছিলেন। এবার তিনি ক্যামেরার পিছনে পরিচালকের আসনে। ছবির নাম ‘মিস্টিক মেমোয়্যার’। আর এই ছবিতেই আরও এক বাংলাদেশি শিল্পীর এপার বাংলার ছবিতে ডেবিউ হল। বাংলাদেশের জনপ্রিয় উপস্থাপক-অভিনেতা জুলহাজ্জ জুবায়ের এই ছবির প্রধান চরিত্রাভিনেতা।
অতি সম্প্রতি অপরাজিতা শেষ করেছেন ছবির শুটিং। দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্যাফেতে বসে কথা হচ্ছিল পরিচালক আর প্রধান অভিনেতা জুলহাজ্জের সঙ্গে। এর আগে অপরাজিতা ‘ডান্স অফ জয়’ তথ্যচিত্র এবং ‘হ্যাশট্যাগ লাইফ’-এর মতো ‘ইন্টিমেট থিয়েটার’ পরিচালনা করেছেন। তারপরে ভাবছিলেন, একটা শর্ট ফিল্ম করবেন। কাজ এগিয়েও ফেলেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকেই বড় আকারে ছবিটা দেখতে পান। ব্যস, সেই শুরু। ফুললেন্থ ছবি বানানোর আর্থিক জোগান না থাকলেও, ইচ্ছেশক্তিকে পুঁজি করে ঝাঁপিয়ে পড়েন ‘মিস্টিক মেমোয়্যার’-এর জন্য।
[ আরও পড়ুন: মৃত্যুর ব্যাকরণ গাথা ‘বর্ণপরিচয়’ নিয়ে আসছেন মৈনাক ভৌমিক ]
পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের গল্প আধার করে প্রাথমিক শুরুটা হলেও, এখন গল্প বদলে গিয়েছে। মূলত, জীবন আর পরিবেশের গল্প। শহরের গল্প। অপরাজিতাও রয়েছেন একটি চরিত্রে। “আজকে যখন আমরা থামতে ভুলে গেছি, দু’দণ্ড ভাবার সময় নেই, সেখানেই আমার ছবির দুটি চরিত্র মিট করছে। বাড়ি থেকে পালিয়েছে একটি বাচ্চা ছেলে (দিব্যাংশু দাস)। নাম তার রিশু। স্কুলের চাপ, বাড়ির চাপে সে দিশাহারা। কিন্তু তার মন আছে ভারচুয়াল মিডিয়ায়। বাকি জগৎ সম্বন্ধে সে অজ্ঞ। এমন সময়ে তার সঙ্গে দেখা হচ্ছে জ্যোতি দাদার (জুলহাজ্জ)। যার কাছে পার্থিব জিনিসের মূল্য তেমন নেই। মানুষটার পাঞ্জাবিতে পকেট নেই, মোবাইল ব্যবহার করে না। দিব্যাংশুকে অন্য জার্নিতে নিয়ে যাচ্ছে জুলহাজ্জ। এইখানেই আসবে পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের কাহিনি। দিশা দেখাতে গিয়ে জ্যোতি এক একটা গল্পের মাধ্যমে বদলের কথা বলে। মূলত ফেস্টিভ্যাল টার্গেট করেই ছবিটা করেছি। পরে রিলিজের কথা ভাবা যেতে পারে। মিউজিক করছে নবারুণ বোস, ডিওপি অমিত মজুমদার আর কিছুটা অংশ তুলেছেন জয়দীপ দে। এডিটিংয়ে শৌভিক দাশগুপ্ত। জুলহাজ্জ জুবায়ের মুখ্য ভূমিকায়। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন শোভন চক্রবর্তী, সায়ন্তনী রায়চৌধুরি, অঙ্কিত বাগচি, আরজে রয় প্রমুখ।” বলেছেন অপরাজিতা।
এদেশে প্রায় দিন দশেক থেকে ‘মিস্টিক মেমোয়্যার’-এ কাজ করে গেলেন জুলহাজ্জ। এই ছবিটাতে কী তাঁকে আকর্ষণ করল জিজ্ঞেস করাতে বললেন, ‘‘বাংলাদেশে আমার একটা স্টেবল কেরিয়ার আছে। কিন্তু মনে হচ্ছিল স্যাচুরেশন পয়েন্ট চলে এসেছে। স্ক্রিনের প্রায় সব ধরনের কাজ আমার করা হয়ে গিয়েছে। বিষয়টা শুনেই আমার ভাল লেগে গিয়েছিল। আর শহর সম্বন্ধে আমার একটা দুর্বলতা আছে। মানুষের আবেগ, অনুভূতি নিয়ে কাজ করার একটা সুযোগ এটা আমার কাছে। প্রত্যেকটা মানুষ এখন ছুটছে। সোশ্যাল মিডিয়া কানেকশনের বাইরে কিছু চিন্তা করে না। জীবন হয়ে গেছে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম কেন্দ্রিক। আমাদের দেশে ব্যাক টু ব্যাক দু’-তিনটে ফায়ার ইনসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিল, সেটা আমাকে নড়িয়ে দিয়েছে। তখন দেখেছি আবেগ থেকে এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করার থেকেও সোশ্যাল মিডিয়ার কারণেই মানুষ ভিডিও করতে, ছবি তুলতে বেশি আগ্রহী। সেখানে অপরাজিতা ঘোষের গল্পটা মানুষের জানা উচিত মনে হয়েছিল। এই ছবিটা দেখতে দেখতে গন্ধও পাবেন! আমার-আপনার প্রত্যেকের মধ্যে ‘জ্যোতি দাদা’ আছে। এই জ্যোতি অবৈষয়িক জীবন চায়। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব আমাদের এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যে, আমরা দেখাতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। শো অফ করি। যেহেতু জ্যোতি মানুষের মনে বিচরণ করে, তাই মনের রূপ ধারণ করার ইচ্ছেটা ছিল (হাসি)। খুব চ্যালেঞ্জিং কাজ। প্রত্যেকের ভিতরের মানুষটা তো প্রতে্যকের মতো, ওই মানুষটার সার্বজনীন রূপ দেওয়াটা কঠিন। আমি চেষ্টা করেছি সবার মনের মানুষ হয়ে ওঠার। আর খুব ভাল লেগেছে কাজটা করতে গিয়ে। কলকাতা তো ঢাকার মতোই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। শুধু খুঁজতে ভুলে গেছি আমরা।’’ বোঝাই যাচ্ছে অপরাজিতা নিজের প্রথম ছবিতে গড়পড়তা ভাবনার বাইরে গিয়ে কিছু করতে চলেছেন।
[ আরও পড়ুন: ‘দেশ বাঁচাতে বাম প্রার্থীদের ভোট দিন’, সোশ্যাল মিডিয়ায় আরজি সব্যসাচীর ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.