আসছে অনুপম রায়ের (Anupam Roy) নতুন অ্যালবাম ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’। নতুন গান, সাফল্যের স্ট্রাইক রেট, প্রেম-বিচ্ছেদ সমস্ত কিছু নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে শম্পালী মৌলিকের মুখোমুখি শিল্পী।
বাংলাদেশে গিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। কেমন হল?
খুবই ভাল। অনেকদিন বাদে গেলাম, কোভিডের আগে শেষবার গিয়েছিলাম। তারপরে তো সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সেই উন্মাদনা ফিরে পাচ্ছেন তাহলে?
হ্যাঁ, পায়ের তলায় আবার জমি পাচ্ছি মনে হচ্ছে।
এর মাঝে আপনি বেশ কিছু সিঙ্গল বের করেছিলেন। এবারে অ্যালবামের পরিকল্পনা করছেন অনেকদিন পরে। ইচ্ছেটা কীভাবে দানা বাঁধল?
২০২০ সালের শুরু পর্যন্ত ছবির কাজ চলছিল। গত দু’-আড়াই বছরে সব এলোমেলো হয়ে গেল। গত বছর বেশ কিছু সিঙ্গল করলাম। কিন্তু এসবই কারও হয়ে, মানে কোনও সংস্থার জন্য করছিলাম। সেখানে কাজ করার কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। আমি যে ধরনের গান করতে চাইছিলাম সেগুলো রিলিজ করার কোনও জায়গা পাচ্ছিলাম না। আমরা আসলে একসঙ্গে অনেক গান রিলিজ করতে পছন্দ করি। এক্ষেত্রে শিল্পসত্তার বহিঃপ্রকাশ ঠিকমতো হয়।
বলছেন একটা গানের ক্ষেত্রে যেটা সম্ভব নয়…
সবরকম বক্তব্য রাখা সম্ভব নয় একটা গানে। আটটা-ন’টা গান আমার লাগে একটা অ্যালবামে। এটা বেশ এক্সপেরিমেন্টাল অ্যালবাম। এই গানগুলো হিট হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমি যেখানে মনে করছি, হিট অ্যালবাম নয়, আমার শিল্পীসত্তা পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ পাবে তেমন একটা কাজ করব, সেই দায়ভার আমি কেবল আমার উপরই নিতে পারি। সেই জন্যই নিজের মতো করে অ্যালবাম করা।
আগেই ধরে নিচ্ছেন কেন বাণিজ্যিক সাফল্য আসবে না? সফল হতেও তো পারে।
কারণ বিষয়বস্তু। সফল হলে সেটা উপরি পাওনা।
এখনও পর্যন্ত দুটো গান মুক্তি পেয়েছে। ‘অবশ’ গানটা শুনতে খুব ভাল লাগছে। আপনার সেই বিষাদ-ঘেঁষা ধরন।
এমন আমি বহুদিন ধরেই করতে চাইছি। কিন্তু যখনই এটা করতে চাইছি, কারও ছবিতেও প্রয়োজন হচ্ছে না। যখন কারও হয়ে সিঙ্গল করছি, তাদেরও এই ধরনের গান প্রয়োজন
নেই দেখেছি।
অ্যালবামের নাম ‘অদৃশ্য নাগরদোলার ট্রিপ’। নামকরণের নেপথ্যের ভাবনাটা কী?
জীবনের কথাই বলা হচ্ছে। যে আমরা নিজের অজান্তেই একটা অদৃশ্য নাগরদোলায় চেপে বসেছি। আমরা ঘুরছি, দুলছি এই ট্রিপে। আমরা তো বুঝতে পারি না, এই জীবনের কিছু মানে আছে, না নেই। এই আছে, না নেই? এমন বাইনারি নিয়ে অ্যালবামটা। আটটা গানে এই প্রশ্নটাই ধরা হয়েছে। যেমন, ‘অবশ’ গানে একটা মানুষ আমার জীবনে আছে, না নেই, হয়তো সে চলেই গেছে। সেই ভাবনাটা আছে। আমরা ডিনায়েল-এ থাকি, সে তো আছে আমার সঙ্গে। এই মনে হওয়ার দ্বন্দ্ব, পরের গানগুলোতে বিশদে থাকবে এটা। আশা করি, এপ্রিলের মধ্যে সবক’টা গান রিলিজ করব।
সমস্ত শিল্পীর জীবনেই প্রেম-বিচ্ছেদের ভূমিকা থাকে। আপনার জীবনে বিগত একবছরে সেটা কীভাবে এসেছে? বিশেষ করে বলব এই অ্যালবামে।
আসলে খুব নতুন গান এই অ্যালবামে নেই। বরং বেশ কিছু বছর আগে লেখা গানই আছে। আমার ইনস্ট্যান্ট রিঅ্যাকশনের থেকে কিছু লেখা হয়েছে কিন্তু সেগুলো পরে পাবে। কারণ, একটু ভিজতে সময় দিতে হয় (হাসি)। তবে হ্যাঁ, জীবনে প্রেম-বিচ্ছেদের প্রভাব তো পড়েই।
বাংলা সিনেমার গানে আপনি যবে থেকে এসেছেন, প্রচুর হিট দিয়েছেন। কিন্তু বিগত দু’-তিন বছরে ‘সোহাগে আদরে’ আর ‘তুমি আমার হিরো’ এই দু’টো ছাড়া সেরকম হিট নেই। এটা কি ভাবাচ্ছে?
না, ছবিই তো নেই হবে কী করে। আমাকে তো ছবিটা, মানে খেলার মাঠটা দিতে হবে। গত বছর দু’টো মাত্র ছবিতে আমার গান ছিল। একটা ‘বেলা শুরু’, আরেকটা ‘প্রজাপতি’। তিনটে গানের মধ্যে দু’টো গান জনপ্রিয় হয়েছে। স্ট্রাইক রেট তো ঠিকই আছে। দেখতে হবে, এ বছর ক’টা ছবি পাচ্ছি। কোভিড কিন্তু সব তছনছ করে দিয়েছে। সবকিছু আগের জায়গায় ফিরতে সময় লাগবে।
সাম্প্রতিক কালে বাংলা ছবির জগতে দুটো মিউজিক্যাল হয়েছে। একটা কিছুদিন আগে এসেছিল, আরেকটা মুক্তি পাচ্ছে আজ। বাংলা মিউজিক্যাল কিন্তু সেখানে অনুপমের গান নেই। শ্রোতা-দর্শকের তো একটা চাহিদা আছে, মনে হতে পারে কেন নেই? কী বলবেন?
এটা পুরোপুরি প্রযোজক এবং পরিচালকদের ইচ্ছে। তাঁরা যদি না মনে করেন, যে আমার প্রয়োজন আছে, তাহলে আমার কিছু করার নেই। পরিচালক-প্রযোজকের যখন মনে হবে, আমার গান দরকার, তাঁরা ব্যবহার করবেন। যাঁদের প্রয়োজন নেই, করবেন না। আমার কোনও সমস্যা নেই।
আপনার পারিশ্রমিক অন্যদের তুলনায় কিছুটা বেশি বলে কি অনেকে আপনার বিকল্প খোঁজেন?
হ্যাঁ, পারিশ্রমিকের প্রসঙ্গ আসতেই পারে। এবং বাংলা ছবির রিটার্ন নেই। সেক্ষেত্রে অতটা পয়সা খরচ করতে কেউ কেউ হয়তো দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন।
আপনি নিশ্চয়ই এক্ষেত্রে কমপ্রোমাইজ করতে রাজি নন?
পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে আপস করতে রাজি নই। কারণ এই জায়গাটায় পৌঁছতে আমাকে বারো বছর দিতে হয়েছে।
এর পরে তো আপনার হিন্দি গান আসবে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের হিন্দি ছবিতে (‘শাস্ত্রী ভার্সেস শাস্ত্রী’)।
হ্যাঁ, দু’টো গান আছে। তবে কবে ছবিটা আসছে ঠিক জানি না।
‘পিকু’-র মতো আবার হিন্দি কাজ হবে না?
আমার হাতে তো নেই। একটা হিন্দি ছবির কাজ করছি কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডের, গান নয়। বাংলায় উলটোটা হয়, গান বানাতে দেয়, ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজ হয় না (হাসি)।
নতুন কোনও বাংলা ছবিতে গানের কথা চলছে?
পুরনো ছবিই তো আটকে আছে। ‘অর্ধাঙ্গিনী’ রিলিজের অপেক্ষায় আছি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনা। আসলে রিলিজ তো আমার হাতে নেই। ২০১৯-এ কাজের ঠেলায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম, পাঁচ-ছ’টা করে ছবি রিলিজ হচ্ছিল। এখন জানি-ই না কবে কী
আসবে (হাসি)।
এখন নতুন প্রজন্মের অনেক সুরকার কাজ করছেন। যেমন– রণজয় ভট্টাচার্য, অমিত-ঈশান, সপ্তক সানাই, সৌম্য ঋত প্রমুখ। এঁদের কাজ আপনার কেমন লাগে?
আমার খুবই ভাল লাগে। প্রত্যেকেই গুণী শিল্পী এবং প্রত্যেকেরই ক্ষমতা আছে।
একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন। পিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে আপনার বিচ্ছেদ খুবই ডিগনিফায়েড ভাবে হয়েছে। যার তুলনায় আসে আমির-কিরণের বিচ্ছেদ। এক বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে। সেটা কি আপনি ওভারকাম করতে পেরেছেন মনে হয়?
বিচ্ছেদ তো ওভারকাম করা যায় না। একটা গভীর বিষাদ, মন ভেঙে যাওয়া, মনে হয়েছিল, জীবনে বিশাল অন্ধকার নেমে আসছে। সেই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। এখন তুলনামূলক ভাবে বলতে পারি, এক বছর আগে যেমন ছিলাম তার থেকে ভাল আছি। কতদিন যে সময় লাগে এইরকম ক্ষত শুকোতে কেউ জানে না। এর থেকে জীবন সম্বন্ধে মানুষের ধারণা পালটে যায়, প্রত্যাশা বদলে যায়। ভবিষ্যতে কী করবে, সেই সব দুশ্চিন্তা চলে আসে। আমি যথেষ্ট স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি বলে মনে হয়। হয়তো সময় গেলে বুঝতে পারব, আরও স্বাভাবিক হওয়া যায়।
নতুন প্রেম কি ডাকছে না?
প্রেম-ভালবাসা এসবের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাতে চাই না এই মুহূর্তে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.