ধুতি পরে ব়্যাপ করছেন বক্সিবাবু। দেখে ব্যোমকেশ অনুরাগীদের চোখ উলটেছে। সোশ্যাল সাইটে বয়ে গিয়েছে তুমুল নিন্দার ঝড়। নিন্দুকদের কাছে তুলোধোনা হয়েছে গায়ক অনির্বাণ ভট্টাচার্যেরও। কারণ, ব়্যাপটা তারই গাওয়া। শুধু তাই নয় ধুতি-ব্লেজার গায়ে চাপিয়ে ব্যোমকেশকে ‘সোয়্যাগ’ মুডে দেখে শরদিন্দু-অনুরাগীরা গেল গেল রব তুলেছেন। এই বুঝি বাংলা সংস্কৃতি রসাতলে গিয়েছে। কিন্তু, এই প্রসঙ্গে অভিনেতা থুড়ি গায়ক অনির্বাণ কী বলছেন? কীভাবে হল এই গানের শুট বা ব্যোমকেশকে এভাবে উপস্থাপন করার নেপথ্যে কে, এই আইডিয়াটাই বা কার মস্তিষ্কপ্রসূত- সন্দীপ্তা ভঞ্জকে যাবতীয় প্রশ্নের অকপট উত্তর দিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
ছোট থেকেই গান গাওয়ার তালিম নিয়েছেন?
অনির্বাণ– না। সবাই যেরকম শখে গুনগুন করে, আমিও ঠিক তাই। অনেকটা ওই ‘বাথরুম সিঙ্গার’-এর মতোই।
কিন্তু আপনার গান শুনে ‘বাথরুম সিঙ্গার’ তো মোটেই মনে হয় না…
অনির্বাণ– গানের যা তালিম নেওয়ার সেগুলো সব থিয়েটার করতে করতেই। হারমোনিয়াম, তানপুরা নিয়ে ক্লাসিক্যাল গানের সাবেকি চর্চা আমি কোনওদিনই করিনি। কিন্তু কোনও গান গাওয়ার আগে সেটা অবশ্যই প্র্যাকটিস করি। গান শোনা এবং গাওয়াটা আমার রোজকার একটা অভ্যেসের মধ্যেই পড়ে। তাছাড়া, অভিনেতা হিসেবে গলার যত্ন করা বা রেওয়াজ তো করতেই হয়। তাই নিজেকে কখনোই প্রফেশনাল গায়ক বলব না। অ্যামেচারিস গায়ক হিসেবে দেখাটাই বোধহয় ঠিক হবে আমায়।
[আরও পড়ুন: জল্পনার অবসান, বড়পর্দায় ফের জুটি বাঁধছেন রণবীর-দীপিকা]
‘শাহজাহান রিজেন্সি’তেই গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন, গানটি বেশ মনেও ধরেছিল দর্শকদের। এবার ফের ব্যোমকেশবাবুর জন্য গান গাইলেন, অভিনেতা থেকে গায়ক হওয়ার যাত্রার সূত্রপাত হল কীভাবে?
অনির্বাণ– আমি গায়কটা ঠিক হয়ে উঠিনি। আমাকে সেভাবে গায়ক বলাটা ঠিক হবে না। আমি যখন থেকে থিয়েটার করি, তখন থেকেই গান গাই। থিয়েটারে আমি অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির পার্টও করেছি। সিনেমাতে প্রথম গান ‘শাহজাহান রিজেন্সি’তেই। সৃজিতদার বলাতেই হয়েছে। কারণ, উনি জানতেন আমি থিয়েটারে অভিনয়ের গোঁড়া থেকেই গান গাই।
গান তো গান তারপর আবার ব়্যাপ… ব়্যাপ করাটা চারটিখানি কথা নয়! প্রচুর রেওয়াজের দরকার হয়েছে নিশ্চয়?
অনির্বাণ– বলতে পারেন, আমি গান নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করি। বিদেশি-স্বদেশি ভিন্ন ধরনের গান শুনি। ওয়ের্স্টান ক্লাসিক্যাল, ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল, কনটেম্পরারি- সবই শুনি। আর ব়্যাপ অনেকদিনেরই একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলা ভাষায় ব়্যাপ সেরকম একটা হয় না। অনেকেই হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় ব়্যাপ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাছাড়া, সেরকম কোনও প্রতিষ্ঠিত ব়্যাপারও বাংলায় নেই।
এই তো বক্সিবাবু নিয়ে ব়্যাপ করলেন আপনি…
অনির্বাণ– তার জন্য কপালে অনেক গালাগালিও জুটেছে।
কীরকম?
অনির্বাণ– ব্যোমকেশের মতো একটা কনটেন্ট বা সেন্টিমেন্টকে নিয়ে ব়্যাপ করার জন্য গালিগালাজ খেতে হয়েছে আর কী!
সত্যান্বেষী ব্যোমকেশকে এরকম ‘সোয়্যাগ মোড’-এ উপস্থাপন করার আইডিয়াটা কার মস্তিষ্কপ্রসূত?
অনির্বাণ– গানের আইডিয়াটা আমার। লিখেছিও আমি। তবে, ভিডিও শুটের আইডিয়াটা হইচই অরিজিন্যালস-এর। জেনওয়াইয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যোমকেশ-এটা থেকেই গানের আইডিয়াটা এসেছিল আমার। শুভদীপ গুহ কম্পোজ করেছে। আমার মনে হয়েছিল, ব্যোমকেশকে নিয়ে সবই হয়েছে কিন্তু কোনও গান হয়নি। যদিও ব্যোমকেশ গান হওয়ার মতো কোনও বিষয়ও নয়। তো সেখানে যদি একটা এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করা যায়। ব্যোমকেশের কথা আর নস্ট্যালজিয়াটাকে ধরে সেরকমই টুকরো টুকরো শব্দগুলোজুড়ে এই গান লেখা। চেষ্টা করেছি, নিউ-এজ মিউজিক জনার-এর দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যোমকেশকে দেখতে কেমন লাগে, সেটা ধরার। এখান থেকেই এই ব়্যাপের আইডিয়াটা আমার মাথায় আসে।
এই অভিজ্ঞতাটা কেমন?
অনির্বাণ– শিল্পী হিসেবে বরাবরই আমি নতুন কিছু করার চেষ্টা করি। এই গানটা লেখার তাগিদ আমি অনুভব করি
ব্যোমকেশ করতে করতে। একই চরিত্রে অভিনয় করতে করতে ব্যোমকেশকে একটু অন্যভাবে দেখার সাধ হয়েছিল আর কী! দেখলাম স্যোশাল মিডিয়াতে খুব তিরস্কৃত হয়েছে ব্যাপারটা। স্যোশাল মিডিয়ায় কটা গোষ্ঠী রয়েছে। এক, যাদের ভাল লাগে। যাদের ভীষণ ভাল লাগে তারা স্তূতি করে। দ্বিতীয়ত, অন্ধস্তূতির পর্যায়ে চলে যাওয়া-এগুলো ভালর দুটো ভাগ। আর বাকি দুটো খারাপের পর্যায়ে পড়ছে। তৃতীয়ত, একদল জানায় এটা ভাল নয়। চতুর্থত, আরেক দল তাদের যে কোনও খারাপ লাগাকে পাপ বা ফাঁসিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করেন। সেরকমই অনেকের কাছেই হইচইকে শুনতে হয়েছে- এ কী হল! ‘এটা কী পাপ হল’ গোছের কথাবার্তা।
[আরও পড়ুন: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিতে ফের প্রসেনজিৎ, নজর কাড়ছে ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’র পোস্টার]
রিঅ্যাকশন কীরকম?
অনির্বাণ– ব্যোমকেশের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াটা ৬০:৪০ -এর অনুপাতে রয়েছে।
কীরকম?
অনির্বাণ– ৪০ শতাংশ লোক এই এক্সপেরিমেন্টটাকে স্বাগত জানিয়েছে। বাকি ৬০ শতাংশ মানুষের মতে ‘এটা নিপাত যাক!’ গালাগাল, খিস্তি-খেউর করেছেন। যখনই ক্লাসিক নিয়ে কাজ হয়েছে, তখনই গেল গেল রব ওঠে। এই পয়েন্টটাই আমি বুঝি না যে কেন এই রব? সমস্যাটাই বা কোথায়?
নিবার্চনী গান গেয়েছেন দেখলাম.. সেটাও কি আপনারই লেখা?
অনির্বাণ– গেয়েছি, তবে এটা আমার লেখা না। কী আশ্চর্য! সবাই এটা আমার লেখা বলে ধরে নিচ্ছে! গানটা রাজীব বলে একজনের লেখা। এই গানটি গাওয়ার জন্য এক বেসরকারি সংবাদ চ্যানেল থেকে যোগাযোগ করেছিল আমায়। এই গানটি গাওয়ার এবং এর ভিডিওতে ফিচার হওয়ার প্রস্তাব আমি ওদের কাছ থেকেই পাই। এর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ, রাজ্যের অবস্থা, দেশের অবস্থার কোনও মিল নেই। আমি টাকার বিনিময়ে এই কাজটা করেছি। আর এটা সবাইকে বলা খুব জরুরি।
এতকিছুর মাঝে গান গাওয়া এবং লেখাটা ম্যানেজ করেন কী করে?
অনির্বাণ– সময় করে নিই!
‘বিবাহ অভিযান’-এর শুট সদ্য শুরু হয়েছে… পরবর্তী আর কী কাজ রয়েছে হাতে?
অনির্বাণ– এবছর আমি দুটো থিয়েটার করছি। সেগুলোর রিহার্সাল শুরু হয়েছে মাত্র! একটা জয়রাজ ভট্টাচার্যের পরিচালনায় তিতুমীর, উৎপল দত্তের নাটক। আরেকটা আমাদের নিজেদের একটা দল রয়েছে- হাতিবাগান সংঘারাম বলে। সেখানে ব্রেখট-এর একটা নাটক করব। সেই নাটকটার নাম ‘পন্তুলাহা ২.০’। একটা নাটক জুলাইতে হবে। আরেকটা সেপ্টেম্বরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.