শম্পালী মৌলিক: কলকাতার পার্ক সার্কাসের মেয়ে। ছিল প্র্যাট মেমোরিয়ালের পড়ুয়া। এখন সে ওয়েব সিরিজের সেনসেশন। কথা হচ্ছে অনংশা বিশ্বাসের প্রসঙ্গে। আমাজন প্রাইমের ‘মিরজাপুর’ আর নেটফ্লিক্স—এ ‘অত্যাশ্চারিয়াচকিত’ তাকে নিয়ে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রে। সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিল সে। ধরা গেল তাকে।
তোমার নামটা খুব আনকমন। মানে কী?
অনংশা বিশ্বাস: মানে সম্পূর্ণ।
কলকাতায় কি ক্রিসমাসের ছুটিতে?
অনংশা বিশ্বাস: হ্যাঁ, বাড়ির সবার সঙ্গে ক্রিসমাস কাটাব। আর একটা শুট আছে।
অতি সম্প্রতি তোমাকে দেখলাম নেটফ্লিক্স-এ ‘অত্যাশ্চারিয়াচকিত’-এ। প্রিয়াংকা বোসের সঙ্গে। বেশকিছু সাহসী যৌনদৃশ্যে তোমাকে দেখা গিয়েছে। ‘লতিকা’-র চরিত্রে কোনও বাঙালি হয়তো চট করে অভিনয় করত না, কোনটা টানল?
অনংশা বিশ্বাস: অ্যাকচুয়ালি ‘লতিকা’ যেরকম আর আমি পার্সোনালি যেরকম, সেই দু’টো পোলস অ্যাপার্ট। তুমি যদি আমার বায়োগ্রাফি বা আইএমডিবি দেখে থাকো তাহলে জানবে কিছুটা। গত সাত বছর ধরে আমি মুম্বইয়ে। শুরু করেছি থিয়েটার দিয়ে। আকাশ খুরানার সঙ্গে থিয়েটার করতাম। তারপর অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাই। একবছর পড়াশোনা করেছি অভিনয় নিয়ে। আমার জীবনযাপনটা আর্ট ওরিয়েন্টেড। ‘বেণী অ্যান্ড বাবলু’ করেছি। ‘লাভ শুভ তে চিকেন খুরানা’ করেছি। আমার গ্রোথটা খুবই স্লো অ্যান্ড স্টেডি আর অভিনয় ওরিয়েন্টেড। কিন্তু আমি জানি অনেক মেয়েরাই বম্বেতে আসে, শর্টকাট নেয়। কেউ বা হয়তো লিংক আপস-এ জড়িয়ে পাবলিসিটি আদায় করে। আমি যেটা খুবই অপছন্দ করি। মনে করি ট্যালেন্টেড হলে ওসবের দরকার পড়ে না। যে কারণে হয়তো আমার সাত-আট বছর লেগে গেল ঠিকঠাক রোল পেতে। ‘লতিকা’ এক্কেবারে আমার অপোজিট। ঠিকই বলেছ বাঙালি কেন, অবাঙালিও হয়তো রাজি হবে না। ইট’স আ ভেরি ডিফিকাল্ট রোল। যা লোকে ভাবে, লাভমেকিং সিন মানে খুব সোজা, তা কিন্তু নয়।
[বিয়ে করলেন মাইলি সাইরাস, পাত্র কে জানেন?]
এখানে তো তোমার ফ্রন্টাল ন্যুডিটিও রয়েছে।
অনংশা বিশ্বাস: হ্যাঁ, এই ধরনের রোল করা কিন্তু সহজ নয় একেবারেই। অনস্ক্রিন লোকে দেখবে তোমাকে। অথচ তোমাকে এমন পারফর্ম করতে হবে যেটা সত্যি মনে হয়। বাট দেয়ার ইজ নো ট্রুথ। ক্যামেরাকে তো চিট করা যায় না। খুবই ওয়েল রেপুটেড ডিরেক্টর সমিত কক্কড় এবং ডিওপি সঞ্জয় স্যর। তাঁরা আগে ‘হাফ টিকিট’ এবং ‘আয়না কে বায়না’ বলে ছবি করেছেন। যেগুলো ফেস্টিভ্যালে গিয়েছে। তো ওঁদের কাজ সম্বন্ধে আমি পরিচিত ছিলাম। তাই রাজি হয়েছিলাম। কারণ পরিচালককে আগে থেকে চিনতাম। তারপরে অফার পাই। কিন্তু এর আগে আমি কোনওদিন অনস্ত্রিন চুমুও খাইনি, তো প্রথমে আমার বিশ্বাস হয়নি, আদৌ আমি চরিত্রটা ক্যারি করতে পারব কিনা। রোগা হও কি মোটা, আমরা তো কেউ পারফেক্ট না, ফলে অতটা খোলামেলা দৃশ্যে আমি কীভাবে অভিনয় করব! কেমন দেখাবে, এটা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু পরিচালক বিশ্বাস রেখেছিলেন। ন্যুডিটি নিয়ে আমরা আলোচনাও করিনি। একটা অডিশনের পরেই পরিচালক আস্থা রেখেছিলেন। এই ধরনের সিন নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে এবং বাইরে ট্যাবু আছে, যেটা থাকা উচিত নয়। কারণ অভিনেতার কাছে সব দৃশ্যই সমান। আমার চরিত্রটার জার্নিটা ভাল লেগেছিল, তাই করেছি।
কেমন ফিডব্যাক?
অনংশা বিশ্বাস: আপাতত খুবই ভাল ফিডব্যাক পাচ্ছি। এটাতে শারীরিক সৌন্দর্য নয়, পারফরম্যান্সটাই আসল ছিল।
‘মিরজাপুর’-এও তো ছিলে।
অনংশা বিশ্বাস: হ্যাঁ, ‘জারিনা’-র চরিত্রে। ওরা ফার্স্ট সিজনে আমাকে জাস্ট ইন্ট্রোডিউস করেছে। সেকেন্ড সিজনে ‘ওরা আবার ‘জারিনা’-কে এক্সপ্লোর করবে। অ্যাকচুয়ালি এই বছরটা আমার কেরিয়ারের জন্য ভাল গেল। প্রথমে কৃষ্ণা ভাটের সঙ্গে ‘মায়া টু’ ভিবি ওয়েবের জন্য কাজ করেছি। ‘বীণা ঝা’ ছিল চরিত্রের নাম, খুবই অন্যরকম রোল। জার্নালিস্টের চরিত্র। পারফরম্যান্স ওরিয়েন্টেড। অ্যান্ড মাই নেক্সট ইজ উইথ প্রকাশ ঝা। ওঁর প্রযোজিত ছবি ‘ফ্রড সাইয়াঁ’—তে আছি (পরিচালনা সৌরভ শ্রীবাস্তব)। আরশাদ ওয়ার্সির বউয়ের চরিত্রে আমি। এরপর সুধীর মিশ্রর সঙ্গে একটা কাজের রিলিজ আছে। যেটার নাম ‘হস্টেজেস’। নেটফ্লিক্স—এর ওয়েব সিরিজ। অসমিয়া মিলিট্যান্ট ধরনের চরিত্রে আছি। যেটা ভাল হল, নিজেকে রিপিট করছি না, বিভিন্ন ধরনের চরিত্র পাচ্ছি এখন। আসলে অনেকদিনের অপেক্ষার ফল হয়তো। আমি মনে করি জিতেছি, যখন দর্শক আমাকে অনংশা হিসেবে নয়, বরং চরিত্রটা হিসেবেই দ্যাখে। যত যাই হোক, আমরা তো উত্তম—সুচিত্রার স্বর্ণযুগের বাংলা থেকেই এসেছি (হাসি)।
[এ কী করলেন জাহ্নবী! ভাইরাল স্মৃতি ‘আন্টি’-র ইনস্টাগ্রাম পোস্ট]
এখানে মা-বাবার কী রিঅ্যাকশন ‘অত্যাশ্চারিয়াচকিত’ দেখে?
অনংশা বিশ্বাস: এই স্ক্রিপ্টটা ‘হ্যাঁ’ করার আগে আমি মা—বাবার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওরা বলেছিল-‘তোমার ভাল লাগলে এগিয়ে যাও।’ তো তখন আমি পরিচালক, ডিওপি সম্বন্ধে জানিয়েছিলাম। ডিওপি হলেন অস্কার নমিনেটেড। সেটা বিরাট ব্যাপার। একটা মারাঠি ছবির জন্য সঞ্জয় স্যর নমিনেটেড হয়েছিলেন। তো আমি জানতাম ওঁরা শেডি কিছু করবেন না। এটা নিশ্চয়ই খুব সাহসী প্রোজেক্ট ছিল, আমি জানি। আমাদের গোটা জাতির কিছু ট্যাবু আছে। কিন্তু গ্লোবাল এক্সপোজারের কারণে সবকিছুই কিছুটা বদলাচ্ছে। নেটফ্লিক্স আর আমাজন আসায় ট্যাবুগুলো কাটছে। মানুষ অনেক ধরনের ছবি দেখছে। ইন্ডাস্ট্রি পাল্টাচ্ছে। এখন সবকিছুই অনেক বাস্তবঘেঁষা। ‘অত্যাশ্চারিয়াচকিত’—এর স্ক্রিপ্ট মান্টো বেসড। যাঁর আমি বড় অনুরাগী। আই রিড আ লট।
অ্যাডিউলেশন আর ট্রোলিং কীভাবে হ্যান্ডেল কর? তোমাকে অ্যাফেক্ট করে না?
অনংশা বিশ্বাস: আমি আমার কো—অ্যাক্টর বা বন্ধুদেরও এই কথাটাই বলি, অ্যাডিউলেশন মাথায় চড়িও না। ট্রোলিংয়ে অ্যাফেক্টেডও হয়ে যেও না। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রি, আমাদের পেশার অঙ্গ। আসলে যারা অ্যাডমায়ার করে, তারা ওই চরিত্রটাকে অ্যাডমায়ার করে। তেমন ভাবেই নিন্দেটাও করে। সিনেমার পুরোটাই জয়েন্ট এফর্ট। টিম ওয়ার্ক। কোনওটাকেই ব্যক্তিগত ভাবে সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত নয়। দর্শকের একাংশ বুদ্ধিমান। তারা বোঝে, অ্যাপ্রিশিয়েট করে। অন্য একটা অংশ ক্লোজ মাইন্ডেড। তারও স্বাগত।
বাংলায় কাজ করবে না?
অনংশা বিশ্বাস: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। বাংলায় কাজ করার খুব ইচ্ছে আছে। কয়েকজন পরিচালককে মিটও করছি। খুব শর্ট টাইমের জন্য আসি তো, দেখা যাক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.