কিশোর ঘোষ: ‘জি হাঁ বহেনো অউর ভাইয়ো, ম্যায় হুঁ আপকা দোস্ত আমিন সায়ানি, অউর আপ শুন রহে হ্যায় বিনাকা গীতমালা।’ ব্যারিটোন অথচ কাশ্মীরি আপেলের মতো মিষ্টি কণ্ঠ লোকটার। দরকার ছিল। খুব। কারণ ১৯৫২ তখন। কালমেঘ মার্কা গুচ্ছ তিতো ঘটনার পর দেশ স্বাধীন হয়েছে! দাঙ্গার ঘা শুকোয়নি। দেশভাগ তো হয়েছেই, সঙ্গে মা ভাগ, বাবা ভাগ, ভাই ভাগ, বোন ভাগ, স্বামী ও সন্তান ভাগ, এমনকী সন্তান ও মা ভাগ। কত পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে! ধর্ষণ-হত্যা-আত্মহত্যার লাইন লেগে গিয়েছিল। বিশেষত দেশের দুই প্রান্ত, মানে বাংলা ও পাঞ্জাব অর্ধেক শ্মশাণে পরিণত হয়েছিল। পাহাড়প্রমাণ সেই দুঃখের মধ্যে আকাশবাণী-“জি হাঁ বহেনো অউর ভাইয়ো…।
দেশ তখন ‘আত্মনির্ভর’ না, তবে দেশগঠনে আত্মবিশ্বাসী নেতা রয়েছেন একাধিক। তাঁদের নাম নেহরু, আম্বেদকর, শ্যাম মানিকশ, ধ্যানচাঁদ, গোষ্ঠপাল, সিনিয়র পিসি সরকার, সত্যজিৎ রায়, গোবর গুহ, ঋত্বিক ঘটক, এসডি বর্মন, দেবানন্দ, মধুবালা, এম এস স্বামীনাথন, বিধানচন্দ্র রায়, হোমি জাহাঙ্গির ভাবা প্রমুখ। আকাশবাণী কলকাতায় ততদিনে রাজ করছেন কাজী নজরুল ইসলাম, পঙ্কজকুমার মল্লিক, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্ররা। দেশভাগে, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায়, নেতাজি অন্তর্ধানে, গান্ধীর মৃত্যুতে দেশের আত্মার যে ক্ষতি হয়েছিল, যত্নে ও আদরে একটু একটু করে তা সারিয়ে তোলাই ছিল স্বাধীন ভারতের দেশনায়কদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রেডিওতে, সর্বভারতীয় পর্যায়ে সেই কাজটাই করেছিলেন বেতার উপস্থাপক আমিন সায়ানি।
১৯৩২ সালের ২১ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে জন্ম আমিনের। বেতার জগতে সফর শুরু হয় মূলত ইংরাজি ভাষার উপস্থাপক হিসেবে। এর মধ্যেই এসে পড়ে ১৯৪৭, ১৫ আগস্ট। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সরকারি ভাষা হিন্দিতে জোর দেয় ভারত সরকার। সেই সূত্রেই হিন্দিতে উপস্থাপনা শুরু করেন আমিন। ঈশ্বরদত্ত কাশ্মীরি আপেলের মতো মিষ্টি এবং ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর তো ছিলই। সঙ্গে আশ্চর্য নাটকীয় ভঙ্গির কথন শ্রোতাদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হয়। জনপ্রিয়তার সেই ফ্রিকোয়েন্সি কয়েক গুণ বেড়ে যায় ১৯৫২ সালে। ওই বছরেই শুরু হয় মিথ হয়ে যাওয়া বেতার সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘গীতমালা’।
Shri Ameen Sayani Ji’s golden voice on the airwaves had a charm and warmth that endeared him to people across generations. Through his work, he played an important role in revolutionising Indian broadcasting and nurtured a very special bond with his listeners. Saddened by his…
— Narendra Modi (@narendramodi) February 21, 2024
মঙ্গলবার রাতে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আমিন সায়ানির। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। কিংবদন্তি আমিনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। করাই উচিত। কারণ আমিন সায়ানি একটা সময়ের নাম। সেই সময় প্রয়াত হয়েছে। আমিনকে যাঁরা শুনতেন, তাঁদের বড় অংশও আজ নেই। তথাপি আজকের রেডিও জকি, এমনকী টিভি সঞ্চালকও আমিনের কাছে ঋণী। এমনকী খোদ অমিতাভ বচ্চনও। কীভাবে?
বর্ষীয়ান শিল্পীদের কাছ থেকে জানা যায়, গীতমালার উপস্থাপকের সোনায় বাঁধানো কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গির কারণেই রেডিও উপস্থাপক হিসেবে বাতিল হন অমিতাভ। ভাগ্যিস! নচেত বলিউড-মেগাস্টারের জন্মই হত না!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.