সুপর্ণা মজুমদার: ভালবাসার সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন। আবার ভাল-মন্দের বিচার করতে যাওয়াও মূর্খামি। সম্পর্কের প্রতিটি ভাঁজে লুকিয়ে থাকে নতুনত্ব। তা যত বিচিত্রই হোক না কেন গল্পকারদের বরাবর আকর্ষণ করে। সাধারণ জীবনের প্রেক্ষাপটে বলা গল্পগুলোই যেন জীবনকে চ্যালেঞ্জ জানায়। এমনই চার ভিন্ন স্বাদের গল্প বলে নেটফ্লিক্সের (Netflix) অ্যান্থোলজি ফিল্ম ‘অজীব দাস্তানস’ (Ajeeb Daastaans)।
প্রথমে শশাঙ্ক খৈতান (Shashank Khaitan) পরিচালিত ‘মজনু’ গল্পের কথাই বলা যাক। একদিকে জয়দীপ অহল্বাত (Jaideep Ahlawat), অন্যদিকে ফতিমা সানা শেখ (Fatima Sana Shaikh)। জুটি হিসেবে বেমানান। সেই বিষয়টিকেই ব্যবহার করেছেন পরিচালক। প্রথমেই বাবলু ও তাঁর স্ত্রী লিপাক্ষীর সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছেন। তাতে রাজকে (আর্মান রালহান) ফ্যান্টাসির মতোই নিয়ে এসেছেন। শেষে বাবলুর (জয়দীপ) সমকামিতার রহস্য ফাঁস করে গল্প আবার নতুন দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। আর ভাঙা রাস্তা জুড়ে দিয়ে সম্পর্ক জোড়া লাগিয়েছেন।
ইন্ডিয়ার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভারতবর্ষ। যেখানে থাকে ধনী ও দরিদ্রের তফাৎ। ক্ষমতার আস্ফালন। কিন্তু দম্ভের কাঁচ যখন অসহায় দারিদ্রের চিৎকারে ভেঙে যায়, তখন রক্তাক্ত হয় সমাজ। ‘খিলনা’ গল্পে যেন এই বার্তাই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক রাজ মেহতা। যে বোনকে পড়াশোনা শেখাতে কামাতুর বিনোদ আগরওয়ালের বাড়িতে কাজ নেয় মীনল (নুসরত ভারুচা), সেই নাবালিকা বোনের সামনেই আবার মালকিনের টাকা চুরি করে। বোন ঘুমিয়ে আছে ভেবে আবার লন্ড্রির দোকানে কাজ করা সুশীলের (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে যৌনতায় মাতে। এ গল্প একটু ধীর গতির। তবে প্রেশার কুকার থেকে রক্ত বের হওয়ার দৃশ্যটি সাংঘাতিক। আর ছোট্ট বিনি সত্যি যখন সামনে আসবে, দর্শকরা চমকে যেতে বাধ্য হবেন। তবে কাজের মেয়ের চরিত্রে নুসরত ভারুচাকে (Nushrratt Bharuccha) একটু বেশিই গ্ল্যামারাস লেগেছে। তীক্ষ্ণতার অভাব বোধ হয়েছে।
চার গল্পের ছবিতে সম্ভবত সবচেয়ে স্ট্রং ইমোশন চলমান চিত্রের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক নীরজ ঘেওয়ান (Neeraj Ghaywan)। ‘গিলি পুচ্চি’ অর্থাৎ সিক্ত চুম্বন। গাঢ় অথচ অস্বস্তিকর এক অনুভূতি। শুধুমাত্র সমকামিতার কাহিনি এটি নয়। ভালবাসার প্রতিশোধের মতো কড়া আবেগ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে শ্রেণি বিভাজনের মতো বাস্তব সমস্যা। জায়েন্ট কিলার কঙ্কনা সেনশর্মা (Konkona Sen Sharma)। প্রথম থেকেই অদিতি রাও হায়দরির (Aditi Rao Hydari) চেহারার নরমভাবকে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। কিন্তু শেষের দিকে দুই অভিনেত্রীর শান্ত ঘৃণার চাহনি গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো।
শেষের ‘আনকহি’ গল্পটি টেনেছেন শুধুমাত্র শেফালি শাহ (Shefali Shah) এবং মানব কউল (Manav Kaul)। পরিচালনায় বোমন ইরানির ছেলে কায়োজে ইরানির বিশেষ কিছু করার ছিল না। টোটা রায়চৌধুরী (Tota Roy Chowdhury) শুধুমাত্র নিজের ভূমিকা পালন করে গিয়েছে। কিন্তু স্বল্প সংলাপেই ভালবাসার অব্যক্ত যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলেছেন মানব-শেফালি জুটি।
চারটি গল্পেই সফট লাইটের ব্যবহার করা হয়েছে। বাস্তবের কথা মাথায় রেখেই সিনেম্যাটোগ্রাফি করা হয়েছে। কোথাও বাড়তি কোনও কিছু করার চেষ্টা করা হয়নি। সময় অল্প হওয়ার কারণে গল্পে মেদ জমার সুযোগও ছিল না। উইকএন্ডের অবসরে একবার সম্পর্কের এই ভিন্ন গাথা দেখে নিতেই পারেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.