চিকিৎসা পরিষেবার অন্ধকার দিক নিয়ে নতুন দ্বিভাষিক ওয়েব সিরিজ ‘কর্কটরোগ’। লিখছেন সোমনাথ লাহা৷
বাংলায় মৌলিক ওয়েব সিরিজের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেই জন্যই নিত্যনতুন গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে সিরিজ। এবার সেই তালিকায় লেখক ইন্দ্রনীল সান্যালের উপন্যাস ‘কর্কটক্রান্তি’। একদা একটি জনপ্রিয় পুজোসংখ্যায় প্রকাশিত এই উপন্যাস থেকে তৈরি হচ্ছে দ্বিভাষিক ওয়েব সিরিজ। সিরিজটির নাম ‘কর্কটরোগ’।
প্রসঙ্গত, এই প্রথমবার একই সঙ্গে বাংলা-হিন্দি দু’ভাষাতেই তৈরি হচ্ছে কোনও ওয়েব সিরিজ। মেডিক্যাল মিস্ট্রি থ্রিলার এই সিরিজটির পরিচালক উৎসব মুখোপাধ্যায়। যিনি ইতিপূর্বে ‘ভীতু’ ও ‘হাফ সিরিয়াস’-এর মতো ছবি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। এছাড়াও সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’-র চিত্রনাট্যকারও তিনি। এটি উৎসবের প্রথম পরিচালিত ওয়েব সিরিজ।
মূলত চিকিৎসা পরিষেবার দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে আবর্তিত এই ওয়েব সিরিজটির নেপথ্যে রয়েছে মারণ ব্যাধি ক্যানসার। চিকিৎসা জগতের অন্ধকার চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে এই সিরিজটির মধ্যে দিয়ে। ফ্যাটফিশ এন্টারটেনমেন্টের ব্যানারে নির্মিত এই ওয়েব সিরিজটির প্রযোজক প্রীতম চৌধুরি। আট পর্বের এই ওয়েব সিরিজটি দেখা যাবে জি-র ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভে।
এই সিরিজটিতে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী। সম্পর্কে যিনি পরিচালক শতরূপা স্যান্যালের কন্যা ও অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীর দিদি। ইতিমধ্যেই ‘আহারে মন’, ‘টিকলি অ্যান্ড লক্ষ্মী বম্ব’-এর মতো ছবিতে নিজের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন চিত্রাঙ্গদা। এটি তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ। কাহিনি আবর্তিত হয়েছে সৎ, আদর্শবাদী , কর্তব্যনিষ্ঠ অটোপ্সি সার্জন বিয়াস বন্দ্যোপাধ্যায় (চিত্রাঙ্গদা)-কে কেন্দ্র করে। সে নিজে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত। ঘটনাচক্রে দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যায় মারা যাওয়া বেশ কিছু শবদেহের পোস্টমর্টেমের দায়িত্ব এসে পড়ে বিয়াসের কাঁধে। পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে প্রতিটি মৃতদেহে একটি বিশেষ উপাদানের সন্ধান পায় বিয়াস। তার বিশ্বাস হয় যে এটা নেহাতই কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে না, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অ্যান্টি ক্যানসার ড্রাগ ট্রায়াল। ঘটনার সত্যতা খুঁজে বার করতে গিয়ে বিয়াস জড়িয়ে পড়ে চিকিৎসা পরিষেবার অন্ধকার দিকের সঙ্গে। ফলে প্রাণসংশয়ও হয় তার। এমতাবস্থায় বিয়াস স্মরণাপন্ন হয় পুলিশ অফিসার বরুণ সরকারের (ইন্দ্রনীল)। বরুণ সরকারকে নিয়ে সঙ্গে বিয়াস কি পারবে প্রদীপের আড়ালে লুকানো চিকিৎসা জগতের এইসব চক্রান্তকারীদের মুখোশ খুলে দিতে? উত্তর মিলবে ওয়েব সিরিজটির প্রতিটি পর্বজুড়ে।
এই সিরিজে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, রাজেশ শর্মা, জয়ন্ত কৃপালনী, সুদীপ সরকার, প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, আর্য দাশগুপ্ত, জুন মালিয়া, চান্দ্রেয়ী ঘোষ প্রমুখ। সিনেমাটোগ্রাফার প্রসেনজিৎ চৌধুরি। প্রোডাকশন ডিজাইনার সুব্রত বারিক। যিনি ইতিপূর্বে ‘কাহিনি ২’, ‘প্রজাপতি বিস্কুট’, ‘জাতিস্মর’, ‘বুনোহাঁস’-এর মতো ছবির প্রোডাকশন ডিজাইনিংয়ের দায়িত্বভার সামলেছেন। ৫৭ দিনের শিডিউলের এই ওয়েব সিরিজটির শুটিং চলছে জোরকদমে। কলকাতা ছাড়াও এটির শুটিং হবে তাজপুরে। বাংলা, হিন্দি দু’ভাষাতে হওয়ার জন্য একই দৃশ্য দু’বার ধরে টেক করতে হচ্ছে পরিচালককে। সম্প্রতি রবীন্দ্র সরণিস্থিত লোহিয়া মাতৃসেবা সদন হাসপাতালে এই ওয়েব সিরিজটির শুটিংয়ে পৌঁছে দেখা গেল বাইক দুর্ঘটনায় আহত বিয়াসের (চিত্রাঙ্গদা) বয়ফ্রেন্ড সৈকত (সুদীপ) বিছানায় শুয়ে। তাকে দেখতে ডাক্তার এসেছেন। ঘরের দরজার সামনে উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিয়াস। দৃশ্যটি এক টেকেই ওকে করলেন পরিচালক।
পরের দৃশ্য হাসপাতাল করিডরের বারান্দা। সেখানে বিয়াসের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে এসেছেন ব্যবসায়ী রবিকান্ত আগরওয়াল (রাজেশ)। রয়েছেন বেশকিছু জুনিয়র আর্টিস্ট। হাসপাতালের দৃশে্যর কারণেই তাঁদের অবতারণা। সেই দৃশ্যটিও সুন্দরভাবে টেক করলেন পরিচালক। ‘ভীতু’-র পরে দীর্ঘসময় কাটিয়ে শুটিং ফ্লোরে ফেরা প্রসঙ্গে পরিচালক উৎসব মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “আমি যে ধরনের ছবি করতে চাইছিলাম তার জন্য প্রযোজক পাচ্ছিলাম না। আর প্রযোজকরা যে ধরনের ছবি আমায় অফার করেছিলেন সেগুলো আমার পছন্দ হয়নি। এই ওয়েব সিরিজের বিষয় ভাবনাটা শুনে আমার ভাল সেগেছিল, তাই এটা করছি। তবে বাংলা-হিন্দি দু’ভাষাতে হওয়ার এক দৃশ্য দু’বার ধরে টেক করতে হচ্ছে। এটা একদম নতুন অভিজ্ঞতা আমার কাছে।” জয়ন্ত জানান, “উৎসব যেভাবে আমাকে গল্পটা বলল সেটা শুনেই আমি কাজটা করতে রাজি হয়েছি। চরিত্রটার জন্য একপ্রস্থ হোমওয়ার্কও করেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.