সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ প্রায় দেড় মাসের লড়াই শেষ করে পরলোকে পাড়ি দিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)। ইতি টানলেন তাঁর দীর্ঘ কর্মময় পথচলায়। তিনি তো শুধুই একজন মহাতারকা নন, ছবির জগতে তিনি একাই একাধিক প্রজন্মের মধ্যে সেতু বন্ধন করেছেন। সত্যজিতের অপু থেকে ‘বেলাশেষে’র বিশ্বনাথ মজুমদার- সব ক্ষেত্রেই মন জিতেছেন তিনি। তাই তো আজ ভারাক্রান্ত বাঙালির মন। কিন্তু দুঃখ না করে তাঁকে আদর্শ মেনে জীবনকে সেলিব্রেট করার বললেন মেয়ে পৌলমী বসু।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই বেলভিউ ক্লিনিকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন পৌলমী বসু। চিকিৎসক অরিন্দম করকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “তাঁর মতো চিকিৎসক আরও প্রয়োজন। হয়তো উনি হেরে গেলেন কিন্তু চিরকাল আমাদের মধ্যে থেকে যাবেন। সকলকে বলছি দুঃখ পাবেন না। কষ্ট পাবেন না। বাবাকে আদর্শ মেনে জীবনকে সেলিব্রেট করব।” একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানান রাজ্য সরকারকেও। “বাবাকে যেভাবে যত্ন ও সম্মান দেওয়া হয়েছে, তাতে কৃতজ্ঞ পরিবার।” বলতে বলতে গলা ধরে আসে তাঁর।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, বেলভিউ ক্লিনিক থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ গল্ফগ্রিনের বাড়িতে যাবে। সেখান থেকে টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে। তারপর ঘণ্টা দুয়েকের জন্য মরদেহ থাকবে রবীন্দ্র সদনে। সেখানেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ। বিকেল ঠিক সাড়ে ৫টায় পদযাত্রা করে কেওড়াতলা শ্মশানে যাবে তাঁর দেহ। গান স্যালুটে বিদায় জানানো হবে কিংবদন্তিকে।
ফেলুদার প্রয়াণে আজ যেন স্মৃতিরা ভিড় জমিয়েছে মনের কোণে। ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “সহজ, সরল, আড্ডাবাজ মানুষ আত্মদম্ভতার লেশ ছিল না।” গায়ক দীপঙ্করের কথায়, “খাতায় কবিতা লিখে দিয়েছিলেন, এখনও রেখে দিয়েছি। ব্যক্তিস্তরে সম্পর্কটা অনন্য ছিল। বাড়িতে আড্ডাও হত। বিরাট বড় শূন্যতা তৈরি হল।” শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর জুটি চিরনবীন। ‘বন্ধু’কে হারিয়ে শোকস্তব্ধ ‘অপুর সংসার’-এর অপর্ণা। “ভেবেছিলাম এই যুদ্ধে জিতে যাবেন। অত্যন্ত কাছের বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু হারালাম। অসাধারণ মানুষ ছিলেন। ভীষণ খারাপ লাগছে।”
রায় পরিবারের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক অন্যরকম। কখনও বন্ধু তো কখনও অভিভাবক হিসেবে পাশে থেকেছেন সর্বদা। “৬০ বছরেরও বেশি সময়ের চেনাশোনা। পরিবারের একজন সদস্যকেই হারালাম আজ। গভীরভাবে শোকাহত।” বলতে গিয়ে গলা ভারী হয়ে আসে সন্দীপ রায়ের। তাঁর এককালের নায়িকা অর্পণা সেন বলছেন, “উনি আমার প্রথম ছবির নায়ক। ১৪ বছর বয়সে প্রথম দেখা। তখন কাকা বলতাম। অনেক বছর পর সৌমিত্র বললেও মনের ভিতরে কাকার মতোই সম্মান ছিল। জুটি হিসেবে সাফল্য মাপার মানুষ নই। হাসতে হাসতে বলেছিলেন, তুমি পরিচালক হয়ে গিয়ে খুব মুশকিল হল, আমাদের জুটিটা ভেঙে গেল। খেপাতেন বড় পরিচালক হয়ে গেছো, আমায় নাও না। ‘পারমিতার একদিন’ ওঁর অন্যতম সেরা কাজ। বই কিনে দিয়েছিলাম। খুব খুশি হয়েছিলেন। একটা যেন ছাতা সরে গেল মাথার উপর থেকে। চেনা জগতা সব হারিয়ে যাচ্ছে।”
এদিকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় থেকে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়-সহ ছবির জগতের অনেকেই টুইট করে বর্ষীয়াণ অভিনেতাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.