সন্দীপ্তা ভঞ্জ: শুধু কথায় নয়, আদতে কাজেও করে দেখাচ্ছেন রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh)। দিন দুয়েক আগেই এক ফেসবুক পোস্টে বেসরকারি হাসপাতালগুলির লাগামছাড়া বিল নিয়ে তুলোধোনা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। যার জেরে ক্ষেপে উঠেছেন চিকিৎসকমহল। অনেকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন যে, “ঠাণ্ডাঘরে বসে এমন মন্তব্য করা অতি সহজ! তবে কাজে?” কিন্তু সেসব বিতর্ককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি ময়দানে মানবসেবায় নেমে পড়েছেন অভিনেতা। কোভিড সুরক্ষায় রুদ্রনীলের নতুন উদ্যোগ ‘জননী: স্বাস্থ্যের স্বাধীনতা’। শহরের বিভিন্ন বসতিতে ঘুরে ঘুরে দুস্থ মানুষদের হাতে তুলে দেবেন প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল কিট। যাতে মাস্ক, স্যানিটাইজারের পাশাপাশি থাকছে ভিটামিন ওষুধ, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ব্লিচিং পাউডার অবধি। আর অভিনেতার এই উদ্যোগকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে।
খাস কলকাতার (Kolkata) বুকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বসতি রয়েছে। সমীক্ষা বলছে, যাতে কিনা বাস প্রায় ৫ লক্ষ পরিবারের। সবমিলিয়ে ১৮ লক্ষ মানুষ থাকেন শহরের বিভিন্ন বসতিতে। নিরুপায় হয়েই পকেটের টানে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় এই বসতির মানুষদের। যাঁদের কিনা আমাদের সমাজের কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর বললেও অত্যুক্তি হয় না! কেউ বা সবজি বিক্রেতা, কেউ দারোয়ান, কেউ বা আবার আমাদেরই বাড়ির রান্নার দিদি, কাজেই মানুষগুলিরও যে সুরক্ষার প্রয়োজন, তা অনুভব করেছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ। সেই ভাবনা থেকেই ‘জননী’ নামের এই উদ্যোগ। নাম রাখা হয়েছে কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই। অভিনেতার কথায়, “মায়ের মতোই কিটগুলো ওঁদের সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।”
সত্যিই তো এমন দুর্দিনে, যেখানে মধ্যবিত্তদেরও স্যানিটাইজার, মাস্ক কিংবা সুরক্ষার্থে অত্যাবশকীয় জিনিস কিনতে গেলে বেগ পেতে হচ্ছে, সেখানে সেই মানুষগুলোই বা যায় কোথায়, যাদের লকডাউনে কাজ হারিয়েছে। ফাঁকা পকেটে দু’বেলার দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে! প্রকৃত নাগরিক হিসেবে তাই সেসব সাধারণ মানুষদের জন্যই ভেবেছেন অভিনেতা।
সংবাদ প্রতিদিন-এর তরফে যোগাযোগ করা হলে রুদ্রনীল জানান, “আজকের দিনটাকে বেছে নেওয়ার মূল কারণ, দেশে স্বাস্থ্যের স্বাধীনতা এই মুহূর্তে খুব জরুরী। একটা মারণ ভাইরাস আমাদের সব তছনছ করে দিচ্ছে। প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে। যদিও চিকিৎসকেরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটাও যথাযথ নয়। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি দায়িত্বশীল নাগরিকদের মতো আমাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের যুবপ্রজন্ম কিন্তু ইতিমধ্যেই এগিয়ে এসেছে। কলকাতার তরুণ প্রজন্মও একাধিকবার ছুটে গিয়েছে সাহায্যের জন্য। এখনও করে চলেছে।”
আজ শুক্রবার, ১৪ আগস্ট থেকেই গল্ফগ্রিনের রংকল বস্তি থেকে এই কর্মযজ্ঞের শুরুয়াৎ করলেন রুদ্রনীল। তবে অভিনেতার এই অভিনব উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওহো এক্সপ্রেস নামে একটি সংস্থা এবং সঞ্জীবনী হাসাপাতাল। ওহো এক্সপ্রেসের তরফে যাবতীয় কিট দেওয়ার ভার নেওয়া হয়েছে। এবং তার পাশাপাশি সঞ্জীবনী হাসপাতাল, জননী কর্মসূচির অন্তর্গত যেসব বসতি পড়ছে, সেই এলাকার থেকে ২০ জন কোভিড রোগীকে প্রত্যেক মাসে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেবে বলে জানান রুদ্রনীল।
সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোও যেন জনসাধারণের হিতার্থে এই উদ্যোগে শামিল হন, সেই আহ্বানও জানিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। তাঁর কথায়, “আমরা একা কতটাই বা করতে পারি, এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকটি মানুষেরই উচিত তাঁদের আশেপাশের মানুষের সাহায্যে হাত বাড়ানো। শহরে এই কর্মসূচী সাফল্য পেলে ভবিষ্যতে গ্রাম বাংলার মানুষদেরও জননীর তরফে মেডিক্যাল কিট সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.