সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সমাজে নারীদের অবস্থান, সম্মান প্রদর্শন নিয়ে দীর্ঘকাল ধরেই একটা ‘প্রহসন’ চলে আসছে। শুরুটা হয় বাড়ি থেকেই। যখন মা-বাবারা ছেলে আর মেয়ে সন্তানদের মধ্যে বিভেদ করেন। বাড়ির মহিলাদেরকেও যে কী পরিমাণ গার্হস্থ্য হিংসা কিংবা লালসার শিকার হতে হয়, তার উদাহরণ ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। যদিও চিত্রটা সর্বস্তরে কিংবা সবক্ষেত্রে সমান নয়, কিন্তু তবুও মাঝেমধ্যে শিউরে উঠতে হয় পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখলে। সম্প্রতি দিল্লির খ্যাতনামা স্কুলের তরুণদের সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ ‘বয়েস লকার রুম’-এ ছেলেদের কথোপকথন দেখেও হতবাক হয়েছে গোটা দেশ। যুব প্রজন্মের এমন চিন্তাধারা অনেকের কপালেই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল! কিন্তু মেয়েদের এই ‘ভোগ্যপণ্য’ হিসেবে দেখতে শেখানোর দায়টা কার? প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ঋদ্ধি সেন।
দিন কয়েক আগের কথা। ‘বয়েস লকার রুম’ নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল, তখন ঋদ্ধি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক দীর্ঘ পোস্ট করেছেন। তাঁর কথায়, “নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসি দিয়ে কিছু বদলে গেল কি? না, বদলায়নি কিছুই! আমাদের সমাজে এখনও অসংখ্য এমন লোক রয়েছেন যারা ‘সামাজিক মুখোশে’র পিছনে ধর্ষণ-গণধর্ষণের মতো চিন্তাধারা পোষণ করেন। এটা একপ্রকার রোগ! খুব শিগগিরিই এর নিষ্পত্তি প্রয়োজন। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে যেখানেই হোক না কেন, সবারই উচিত এর বিরুদ্ধে সরব হওয়া।”
সত্যিই তো, কোনও পণ্য বিক্রি করার জন্যেও মেয়েদের খোলামেলা চেহারার আশ্রয় নিতে হয়! মেয়েদের দেখলেই তার সঙ্গে একটা ‘হট’ কিংবা ‘সেক্সি’ তকমা জুড়ে দেওয়া হয়। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ তো বটেই, এমনকী কর্মস্থলেও ছাড় নেই! আজও ধর্ষণের জন্য যে দেশে মেয়েদের পোশাককে দায়ী করা হয়, সে দেশের সমাজে আর যাই হোক নারীদের অবস্থান কিংবা সম্মান কোনওটাই যে সুরক্ষিত নয়, তা বোধহয় আর আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না শিউড়ে ওঠা খবরের শিরোনামগুলোর দিকে চোখ রাখলে! আট মাসের খুদে থেকে আশি বছরের বৃদ্ধাকেও লালসার শিকার হতে হয়।
সমাজের সেই ঘুণ ধরা মানসিকতার দিকেই আঙুল তুলেছেন ঋদ্ধি সেন। “বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় অংশও এর জন্যে দায়ী! অনেক সিনেমা, ওয়েব সিরিজে অযৌক্তিকভাবে মহিলাদের আপত্তিকরভাবে দেখানো হয়। এমনকী, সিনেমাতেও নিদেনপক্ষে একটা আইটেম নম্বর বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে! বাদশার মতো লোকেরা মেয়েদের নিয়ে নির্বোধ-নির্লজ্জের মতো গান বাঁধছেন! সেই গানগুলো আবার লক্ষ লক্ষ শ্রোতারা দেখছেন। আর পছন্দও যে করছেন, তা কমেন্ট সেকশনে চোখ রাখলেই বোঝা যায়! সেখানেই লোকের মুখোশ খুলে যাচ্ছে। তাদের আসল মন-মানসিকতা ঠিকরে বেরিয়ে আসছে”, মন্তব্য ঋদ্ধির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.