প্রেম, বিয়ে, ট্রোলিং থেকে পরিচালনা। সবকিছুর স্পষ্ট জবাবে সদ্য বিবাহিত অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya)। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
১) তাহলে শেষ পর্যন্ত অনির্বাণ ভট্টাচার্য নন-কনফর্মিস্ট নয়, তাই তো!
(হা হা হা) বিয়ে দিয়ে যদি সেটার প্যারামিটার হয় তাহলে নয়, বা বলতে গেলে বিয়েটাই যদি নিক্তি হয়, তাহলে আমি নন-কনফর্মিস্ট নই।
২) আপনার আর মধুরিমার মতো আধুনিকমনস্ক মানুষের কেন মনে হয়েছে বিয়ে ইনস্টিটিউশনটা এখনও গুরুত্বপূর্ণ বা প্রাসঙ্গিক?
আমি মধুরিমার ভাবনাটা জানি, কিন্তু সেটা ওর নিজের বলাই ভাল। আমারটা বলতে পারি। আমার কাছে এই সোশ্যাল গ্যাদারিংটা আসলে পরিবারের কথা ভেবে। আমার মধুরিমার সঙ্গে থাকতে চাওয়া বা থাকার জন্য বিয়ের প্রয়োজনীয়তা আমি দেখতে পাইনি কখনও। কিন্তু আমরা তো শুধুই আমরা নই, আমাদের যাঁরা জন্ম দিয়েছেন তাঁদেরও একটা ইচ্ছে আছে। ফলে উৎসব ঠিক নয়, কিন্তু তাঁরা আমাদের নতুন জীবনের সূচনা একটা আয়োজন বা সামাজিক উৎসবের মাধ্যমে দেখতে চেয়েছিলেন। যেটা থেকে তাঁরা আনন্দও করতে পারেন আবার আশ্বস্তও হতে পারেন। মেদিনীপুর থেকে এসে এখানে কাজ করতে গিয়ে আমার একটা জীবনবোধ তৈরি হয়েছে। এই সব সোশ্যাল উপাচার নিয়ে একধরনের বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। কিন্তু সারাক্ষণ আমার নিজের ভাবনাকে প্রাধান্য দিতেই হবে, আমি এরকম– এটা ফলাও করে না দেখালেও চলে। বিশেষ করে আমার যত বয়স হচ্ছে, তত আমি পরিবারের গুরুত্ব বুঝতে পারছি। যত চারপাশের ক্যাওসের সম্মুখীন হচ্ছি, তত পরিবারের কাছের মানুষদের সংস্পর্শে থাকতে ইচ্ছে করছে। ওই যে, ভবঘুরে একটা ব্যাপার থাকে, বা দুনিয়া দেখার ইচ্ছে, সেটা ভাল। দেখছিও, না হলে কাজ করব কী করে– কিন্তু চারপাশের যে অবস্থা দাঁড়াচ্ছে সেইটা থেকে বেরিয়ে এসে প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য ফ্যামিলিকে খুব দরকার। তো এটা একটা পরিবারকেন্দ্রিক ব্যাপার।
৩) মধুরিমা আর আপনাকে একসঙ্গে দেখলে মনে হয় দারুণ বন্ধু। প্রেমিক-প্রেমিকার গদগদ ব্যাপারটা নেই! আপনি কি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিয়ে করেছেন?
না না, এরকম ব্যাপার নয়। মধু তো আমার জুনিয়র। ‘সঙ্ঘারাম’, আমাদের নাটকের যে দল, সেটাই আমাদের অ্যাটাচমেন্টের জায়গা মূলত। অনেকদিন পর্যন্ত, এমনকী এখনও– আমি হচ্ছি ওর ইউনিভার্সিটির সিনিয়র। সেই অর্থে বলতে গেলে তোমাকে বলতে পারি, খুব যে প্রেমও আমরা করেছি, তাও নয়। আমি মধুকে বেশ অনেকদিন আগে প্রোপোজাল দিয়েছিলাম যে আমি বিয়ে করতে চাই। তারপরে আমরা একসঙ্গে থেকেছি, প্র্যাকটিস করেছি, নানা ঝগড়া-ঝাঁটি হয়েছে, অমুক-তমুক হয়েছে। মানে অনেকটা সময় পার হয়েছে। আসলে মধুকে মানুষ হিসাবে খুব পছন্দ করি। মধুর প্রতি আমার এখনও একটা সন্তান-সম স্নেহও কাজ করে। ডেফিনিটলি বন্ধুত্ব আছে। কিন্তু প্রথমে বন্ধুত্ব সেখান থেকে প্রেম– এরকম একটা ওয়েল ক্রাফটেড ন্যারেটিভ আছে, তেমন ঠিক নয় ব্যাপারটা। একটা মানুষের সঙ্গে জীবন কাটানোর জন্য, দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য– মানে বলতে চাইছি, মধুর মধ্যে যে হিউম্যান কোয়ালিটি, সেটা খুব টেনেছিল আমাকে। সেই টানটা থেকে যে খুব ডেফিনিট প্রেমের চেহারা নিয়েছে সবসময় এমনটা নয়, তবে হ্যাঁ, প্রেম নিশ্চয়ই আছে– না হলে বিয়ে করব কেন! আসলে সব মিলেমিশে আছে। অপত্য স্নেহ, ভালবাসা, দুর্বলতা, নির্ভরতা…। সেখান থেকে প্রেমকে আলাদা করা যায় না, কিন্তু প্রেম নেই সেটাও বলতে পারব না।
৪) ভেবেছিলেন কি বিয়েটা নিয়ে এমন হাইপ হবে?
এতটাও হয়েছে কি?
৫) এখনও তো ফেসবুকে আপনাদের বিয়ে নিয়ে চর্চা চলছে…
আসলে আমি আমার কাছের বন্ধু এবং পরিবারকে নিয়ে একটা ইন্টিমেট অনুষ্ঠান চেয়েছিলাম। তবে হ্যাঁ, খুব যে উৎপাত হয়েছে এমন নয়। কিছু মিডিয়া এসে পড়েছিল নিজে থেকেই, কেউ কেউ ফোনও করেছে। আমি দেখলাম দু’টো খবর খুব হতে হয়– এক, কোন ডিজাইনারের পোশাক পরেছে বর-কনে, দুই নম্বর হল, কী মেনু! মজার ব্যাপার!
৬) অনির্বাণ ভট্টাচার্য সব সময়ই চর্চার শিরোনামে। আপনি এটাতে অভ্যস্ত। কিন্তু এরপর মধুরিমাকেও এই সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রুটিনিতে চলে আসতে হবে। ইতিমধ্যেই ট্রোলিং হয়েছে। এটা আপনারা দু’জনে কীভাবে সামলাচ্ছেন?
ট্রোলিংটা যখন হচ্ছিল তখন আমরা ব্যস্ত ছিলাম, কিছুই জানতে পারিনি। আমার তো ফেসবুক প্রোফাইল নেই (পেজ রয়েছে)। মধুও ফেসবুক খোলার সময় পায়নি। পরে শুনলাম নানা বিষয় নিয়ে চর্চা হয়েছে। সিঁদুর কীভাবে দেওয়া হয়েছে, আর আমাদের তো খুব ‘আধুনিক দেশ’ তাই প্রশ্ন উঠেছে, কনে এত মোটা কেন! মানে মডার্ন কান্ট্রিতে যে ইস্যুগুলোতে প্রশ্ন করা হয় আর কী! ইগনোর করাই ট্রোলিংয়ের জবাব হতে পারে বলে আমি মনে করি। মানুষ একরকমভাবে কথা বলছে, সিঁদুর পরানো, রোগা-মোটা কিংবা কীভাবে শাড়ি পরা হয়েছে এই সব নিয়ে –কিন্তু যে সব মিডিয়া আমাদের কাছে জবাব চাইছে এটা নিয়ে তারা অনেক বেশি অ্যাকাউন্টেবল বলে আমার মনে হয়। তাদের হাত-পা বাঁধা। আসলে সবটাই নিউজ-ফিড, ট্রেন্ডিং, নাম্বার অফ ভিউজ-এর ব্যাপার। পুরো জিনিসটা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। গোটাটাই আন্ডার দ্য বেল্ট এবং আন্ডার বিজনেস চলে এসেছে। ট্রোলিং কিন্তু এখন অবৈতনিক প্রফেশনের একটা জায়গা।
৭) এরপর তো ওয়েব সিরিজ পরিচালনার কাজে হাত দেবেন?
হ্যাঁ, ‘হইচই’য়ের (Hoichoi) জন্য ‘মন্দার’-এর শুটিং শুরু হবে জানুয়ারিতে। এটা ‘ম্যাকবেথ’-এর অ্যাডাপ্টেশন। মূলত আমি আর প্রতীক দত্ত এটা লিখেছি। রুদ্ররূপের খানিক অবদান রয়েছে গোড়ার দিকে।
8) আপনি নিজে অভিনয় করবেন?
এখনও সেটা স্থির হয়নি। করতে পারি আবার নাও পারি।
৯) শুনেছি মন্দারমণিতে শুটিং হবে!
হ্যাঁ, মন্দারমণির আশপাশে শুটিং করব।
১০) শেক্সপিয়রের অ্যাডাপ্টেশনে আপনার প্রিয় পরিচালক কে?
নিঃসন্দেহে বিশাল ভরদ্বাজ। ‘মকবুল’, ‘ওমকারা’, ‘হায়দর’ তিনটেই আমার খুব প্রিয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.