Advertisement
Advertisement

Breaking News

‘ট্রানজিস্টর ভেঙে ম্যাগনেট আবিষ্কার করেছিলাম’, অকপট অক্ষয় কুমার

‘মিশন মঙ্গল’-এর নেপথ্য কাহিনিও শোনালেন অভিনেতা।

Actor Akshay Kumar opens up about his movie and childhood memory
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:August 23, 2019 9:13 pm
  • Updated:August 23, 2019 9:14 pm  

তপন বকসি: নির্দিষ্ট সময়ের অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে অক্ষয়কুমার ইন্টারভিউয়ে বসলেন। ওজন এতটাই ঝরিয়েছেন, বেশ চোখে পড়ছে। পরনে বেগুনি রঙের পাঠান ড্রেস। পায়ে স্লিপার। বেশ ক্লান্তও লাগছিল।

ওজন ঝরিয়েছেন দেখছি?

Advertisement

অক্ষয়: হুম। ‘সূর্যবংশী’ ছবির জন্য। এই যে এখন ইন্টারভিউ দিতে এলাম, সোজা সেট থেকে। গাড়িতে ঘুমোতে ঘুমোতে এলাম। তাও পুরো ঘুম হয়নি। (হাসি)

পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া বয়সে আপনার সেই আঠাশ বছরের ব্যস্ততা। কী মনে হয়, কীসের জন্য এসব?

অক্ষয়: আপনাদের ভালবাসা। দর্শকদের ভালবাসা। আমি অভিভূত। দর্শক আমাকে পছন্দ করছেন।

সেদিন শুনছিলাম ‘মিশন মঙ্গল’ ছবিটা আপনি মাত্র ৩২ দিনে শুটিং শেষ করে দিয়েছেন?

অক্ষয়: হুম। ঠিকই শুনেছেন। ৩২ দিনের বেশি দরকার ছিল না। তাই ৩২ দিনেই শেষ করে দিলাম।

কিন্তু এই ‘মিশন মঙ্গল’-এর মতো স্পেস মহাকাশ নিয়ে বেশি হিন্দি ছবি হয়নি। তাই না?

অক্ষয়: হয়নি। এই প্রথম এরকম ছবি হল। আমি সেই ছবির একজন অভিনেতা। প্রযোজকও।

শুনেছি রাত জেগে পার্টি না করা অক্ষয়ের এও এক শৃঙ্খলা। টাইট  শিডিউলে বাজে খরচ না করে ছবির শুটিং শেষ করে দেওয়া?

অক্ষয়: যেখানে বেশি সময় বা পয়সা খরচ করার দরকার নেই, সেখানে আমি তা করতে যাব কেন? আমার একটা শার্ট বানাতে তিন মিটার কাপড় লাগবে। আমি যদি একটা পুরো থান নিয়ে আসি তার জন্য তাতে যা হবে, এটাও তাই।

[ আরও পড়ুন: প্রিয়াঙ্কার ইচ্ছেপূরণ, নেটফ্লিক্সের সুপারহিরো ছবিতে এবার অভিনেত্রী ]

অথচ এই ইন্ডাস্ট্রিতেই এমন প্রযোজকও আছেন যিনি বেশ খরচ করে ছবি বানান?

অক্ষয়: আমার অনেক পয়সা আছে। তা বলে আমি কি সব একসঙ্গে এনে এই টেবিলে রেখে দিয়ে বলব নিন, এই নিন। এটা দিয়ে ছবি করুন। (হাসি) এটা সেন্সিবলি ইউজ উওর মানির ব্যাপার।

আপনার এই ‘মিশন মঙ্গল’ ছবি বানানোর সময়টা একেবারে পারফেক্ট। ভারত ‘চন্দ্রযান ২’ ছাড়ল। আর আপনার ‘মিশন মঙ্গল’-ও রিলিজ করল। গুড টাইমিং?

অক্ষয়: এটা অনেকদিন আগে থেকেই ভাবনায় ছিল। আর তার চেয়েও বড় কথা, এই ধরনের বিষয় নিয়ে হিন্দি ছবির কথা এর আগে সেভাবে কেউ ভাবেননি। আমি অভিনেতা হিসাবে ভাবলাম। প্রযোজক হিসাবে ভাবলাম।

akshay-kumar

ইদানীং তো সেটাই দেখছি। অক্ষয়কুমার সামাজিক বার্তা দেওয়া ছবি করছেন?

অক্ষয়: হুম। তা বলে আমি মেনস্ট্রিম মশালা ছবি থেকে নিজেকে সরাইনি। দুটোকে নিয়েই চলতে চাই। কথা হল প্রযোজক হিসাবে আমি দু’ধরনের ছবিই করতে চাই। আমার ভাগ্য ভাল যে, এই ধরনের ছবি আমার কাছে এসে পড়েছে। এর আগে আমার প্রযোজনায় আর অভিনয় করা ‘টয়লেট এক প্রেমকথা’-র কথাই ধরুন। চার বছর ধরে ছবিটা অন্য অনেকের কাছে ঘুরেছে। কেউ করেননি। অবশেষে আমার কাছে এল। ছবিতে আমি অভিনয় করলাম। প্রোডিউসও করলাম। এখন এই ছবিটা ভারতের বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে দেখানো হচ্ছে। ট্রাকে প্রজেক্টর মেশিন আর জায়ান্ট  স্ক্রিনে এই ছবি দেখানো হচ্ছে। কিংবা ধরুন ‘প্যাডম্যান’ ছবিটা। দেশের ইন্টিরিয়র জায়গায় দেখানো হচ্ছে।

এতদিনের কেরিয়ারে অক্ষয়কুমার আগে কেন এ ধরনের ছবি করেননি?

অক্ষয়: পর্যাপ্ত টাকা ছিল না তাই। এখন টাকাকে আমি এই ধরনের ছবি প্রোডিউস করে কাজে লাগাচ্ছি। কিন্তু সেন্সিবলভাবে। আমি এর পাশাপাশি ‘রাউডি রাঠোর’-এর মতো ছবিও করব।

‘মিশন মঙ্গল’ স্পেস রিলেটেড ছবি। মহাকাশ, গ্রহ, উপগ্রহ নিয়ে গল্প। ‘ইসরো’-র কাউকে দেখিয়েছেন ছবিটা?

অক্ষয়: হুম। দেখিয়েছি তো। আর একটা কথা, স্পেস সায়েন্স নিয়ে করা ছবি মানেই যে সেটার সবটাই বৈজ্ঞানিক কচকচানি তা কিন্তু নয়। সেটা ছবি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরাই বুঝতে পেরেছেন। লক্ষ্য করে দেখবেন আমার এই ছবিতে সায়েন্সের সঙ্গে হোম সায়েন্সও আছে। কী করে পুরিয়া বানাতে হয় আমার ছবিতে সেটাও দেখানো হয়েছে।

ছবিটাকে সাধারণ দর্শকদের উপযোগী করার চেষ্টা করেছেন? যাতে বৃহত্তর দর্শকের কাছে এর আবেদন পৌঁছতে পারে?

অক্ষয়: একদম তাই। তাও দেখুন ছবির কিছু সংলাপে ‘অফবিট’-এর হিন্দি রাখতে পারিনি। ‘আর্থ’-কে আমি ‘পৃথ্বী’ বলতে পারি। কিন্তু ‘পেলোড’ বা ‘থ্রাস্ট’-কে ওভাবেই রেখে দিতে হয়েছে। ‘থ্রাস্ট’ হল একরকমের ফোর্স। বিজ্ঞানের ছাত্ররা অবশ্যই জানেন। এগুলোকে ইংরেজিতেই ব্যবহার করা হয়েছে দেখবেন। শব্দের সঙ্গে এদের অর্থের যোগাযোগটাকে অথেনটিক রাখার জন্য। আর একটা দিক হল একটা বিজ্ঞান ভিত্তিক ছবি করছি মানেই সেটাকে সায়েন্স নির্ভর হয়েও কীভাবে গল্প করে তোলা যায় সাধারণ দর্শকদের কাছে সেটাই খেয়াল রেখেছি। তাই এই ছবিতে দর্শকরা কমেডি, রোমান্সের সঙ্গেই রিয়্যালিটি বা রিয়্যালিজমকে পাবেন। বস্তুত রিয়্যালিস্টিক জগৎটাকে আমি সব রসের মধ্যে দিয়ে একটা গল্প বানিয়ে বলতে চেয়েছি।

ছবির চিত্রনাট্যে নিশ্চয়ই কেনেও সায়েন্টিস্টদের সাহায্যের দরকার হয়েছে আপনাদের?

অক্ষয়: আমাদের পরিচালক জগন শক্তির বোন একজন বৈজ্ঞানিক। ওঁর অনেক সাহায্য আমাদের কাজে লেগেছে।

এই জগন শক্তি তো পরিচালক প্রযোজক  আর বালকির সহকারী ছিলেন তাই না?

অক্ষয়: হুম। বালকিজির সঙ্গে ‘পা’, ‘প্যাডম্যান’ এরকম অনেক ছবিতে সহকারী চিত্রনাট্যকার বা পরিচালনায় সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন।

akshay1

[ আরও পড়ুন: জন্মাষ্টমীতে কৃষ্ণ সেজে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের মুখে মীর ]

সায়েন্স ফিকশন বানানোর ইচ্ছে হওয়ার পিছনে আপনার মনে ঠিক কী ধরনের চিন্তাভাবনা কাজ করেছিল?

অক্ষয়: আমার কাছে অনেক ছবির চিত্রনাট্যই তো আসে। এর মধ্যে থেকে আমি ভাললাগা চিত্রনাট্যকে খুঁজে নিই। বিজ্ঞাননির্ভর ছবি বলে এই ছবিতে ‘স্লিং শট থিয়োরি’-কে কাজে লাগানো হয়েছে। এরকম অনেক থিয়োরিকে এখানে কাজে লাগানো হয়েছে। আমাদের দেশের যে সায়েন্টিস্টরা আছেন, আমি মনে করি তাঁরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ। আমেরিকার ‘নাসা’-তে শতকরা সাতাশ থেকে তিরিশ ভাগ সায়েন্টিস্ট ভারতীয়। ইন্ডিয়ান সায়েন্টিস্টদের মাথা পৃথিবীর মধ্যে সুপিরিয়র।

আপনি নিজে এতদিনকার জীবনে বৈজ্ঞানিক কোনও কিছু নিয়ে রিসার্চ করেছেন? বা আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন?

অক্ষয়: আমার চার-পাঁচ বছর বয়সে বাবা আমাকে একটা ১৭৫ টাকা দিয়ে ট্রানজিস্টর কিনে দিয়েছিলেন। সেটাকে নিয়ে আমি কমেন্ট্রি শুনতাম। সারা পৃথিবীর অনেক খবর শুনতাম। একদিন একটা ছোট্ট, চৌকো জিনিস আমি আমাদের ঘরের লোহার আলমারির গায়ে ছুড়ে দিলাম। সেটা আলমারির গায়ে আটকে গেল। বাবাকে ডেকে বললাম বাবা, দেখো এটা কী? বাবা বললেন ‘দেখলাম’। এটা তো ম্যাগনেট। আমি বললাম, হুম। ম্যাগনেট। আমি আবিষ্কার করেছি। বাবা বললেন, কীভাবে? আমি ভাঙা ট্রানজিস্টরটা বাবার সামনে এনে বললাম, এটা থেকে। বাবা বললেন, সেকী! তুই ট্রানজিস্টরটাকে ভেঙে দিলি? তা এই হল আমার আবিষ্কার। আমি বললাম, বাবা দেখো আমার আবিষ্কার (হাসি)।

বাবা এবং মা আপনার জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছেন? বাবা তো এখন বেঁচে নেই। তাহলে মায়ের প্রভাব কতটা আপনার জীবনে এখন?

অক্ষয়: বাবা, মা দু’জনের মিলিত প্রভাব আমার মধ্যে আছে। আর বাবা মারা গিয়েছেন বাইরের পৃথিবীর কাছে। কিন্তু আমি জানি বাবা আমার সঙ্গেই আছেন। এই যে এখানে বসে আমি কথা বলছি আমার পাশেই বসে রয়েছেন বাবা। আমার বলা কথা শুনছেন। এই দেখুন আমার মোবাইলের ওয়ালপেপারে বাবার ছবি।

আমার সামনে বসা অক্ষয়কুমার তাঁর সায়েন্স নির্ভর সামাজিক ছবি নিয়ে কথা বলছেন। অথচ তিনি ফিরছেন রাতজাগা ‘সূর্যবংশী’-র শুটিং থেকে যে ‘সূর্যবংশী’ একজন ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ। যে চরিত্র ‘সিংহম’, ‘সিম্বা’-র ছায়া হয়ে এসেছে। এই ট্রান্সফরমেশন বা দিক বদলাই এখনকার অক্ষয়কুমারের স্ট্যাটেজি?

অক্ষয়: স্ট্র্যাটেজি বলব কি না জানি না। তবে এটাই আমি চেয়েছিলাম। যদি কোনওদিন আরও বেশি করে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে যেতে পারি তাহলে সব ধরনের ছবিতেই চেষ্টা করব। ‘মিশন মঙ্গল’-এ আমি চেয়েছি দেশের যুবসমাজ যাতে বিজ্ঞানে আগ্রহী হয় আরও বেশি করে। ‘প্যাডম্যান’-এ চেয়েছি বিশেষত গ্রামীণ মেয়েদের এতদিনকার চলে আসা বদ্ধমূল কুসংস্কারাচ্ছন্ন সীমাবদ্ধতাকে ভাঙতে। তেমনই ‘টয়লেট এক প্রেমকথা’-এ চেয়েছি গ্রামের মানুষদের সেই অন্ধকারকে ঘোচাতে। সেই ছবি দেখতে দর্শক সিনেমাহলে তখনই ভিড় করবে যদি তাতে কোনও জনপ্রিয় সিনেমার অভিনেতাই সেখানে অভিনয় করেন। তাই না?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement