সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি কুয়াশাবৃতা। রহস্যময়ী। তিনি সেই মোহময়ী, যৌনতা আর আভিজাত্যের মিশেলে যিনি তৈরি করতে পারেন অপূর্ব মাদকতা। অথচ সে মৌতাতে কোথাও পাপ লেগে থাকে না। থাকে না গর্হিত হয়ে ওঠার আখ্যান। ভানুরেখা গণেশন ওরফে বলিউডের এনিগমা, এলিগ্যান্ট রেখাকে এরকম বহু ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। অন্তত ব্যাখ্যার চেষ্টা করা যায়। অথচ আসলে তিনি যেন হিন্দি সিনেমার দুনিয়ায় প্রথাভাঙা সাহসের সেলিব্রেশন।
যে সময় সিনেমার দুনিয়ায় তিনি পা রেখেছিলেন, সে সময়টা ভারতীয় নারীদের জন্য একটা পরিবর্তিত সময়ের উন্মেষকাল। একদিকে স্বামী-সংসার-সন্ততি সামলানো নারীর চিরকালীন প্রোটোটাইপ। অন্যদিকে কেরিয়ার ও স্বাধিকার অর্জনের রাস্তা বেছে নেওয়া। এ দুয়ের দ্বন্দ্ব থেকে নতুন রাস্তার খোঁজ চলছে। রেখার আগে যে কেউ এ পথে খুঁজে পাননি তা নয়। তবে যে পরিবেশ ও পরিবার থেকে রেখা স্বাধিকারপ্রমত্ত হয়ে উঠেছিলেন তা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের তারিফ পাবে ও পাচ্ছে। উপরন্তু তিনি ডানাকাটা সুন্দরী ছিলেন না। বরং, কালো, মোটা ও কুৎসিত এরকমই চোখা চোখা বিশেষণ তাঁর জন্য প্রয়োগ করেছিলে সেই সময়কার সিনে দুনিয়ার কেষ্টবিষ্টুরা। শশী কাপুর তো রীতিমতো সন্দেহ করেছিলেন, এ মেয়ে আদৌ কিছু করে উঠতে পারবে তো! সেই পেরে ওঠার নামই রেখা।
শুধু চেহারা ও অভিনয়ে নয়, একের পর এক স্টিরিওটাইপ ভেঙেছেন রেখা। কেরিয়ার হিসেবে অভিনয়কে বাছা যদি এই ছকভাঙার প্রথম মাইলস্টোন হয়, তবে ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা নেওয়া সহজ ছিল না। রূপোলি পর্দায় নিজেকে ভেঙে তছনছ করেছেন, তারপর গড়ে তুলেছেন নিজের সাম্রাজ্য। আর হাতে গড়া সে রাজত্বের তিনিই অধিশ্বরী। সুতরাং তাঁর সামনে নতজানু হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই সময়ের।
একদা কালো-মোটা মহিলা বলে যাঁকে তাচ্ছিল্য শুনতে হয়েছিল, তিনিই হিন্দি সিনেমার নারীকেন্দ্রিক সিনেমার অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন। তাও বাণিজ্যিক ছবির ক্ষেত্রে। তথাকথিত আর্টহাউস সিনেমার যে নীরিক্ষার সুযোগ থাকে, তা সেই অর্থে পাননি রেখা। তবু ‘উমরাও জান’-এ যদি তাঁর চাহনিতেই তাবত পুরুষকুল খুঁজে পেয়ে থাকে রূপবহ্নিতে আত্মসমর্পণের আহ্বান, তবে ‘খুন ভরি মাংগ’-এ তিনিই হয়ে উঠেছেন আধুনিক সংহারকারী। আবার উৎসব-এর মতো ছবিতে শরীরী আবেদনে, লাস্যে ও ক্যামেরার সামনে খোলামেলা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রেও উদাহরণস্বরূপ। সে সবের ভিতর মাদকতা খুঁজেছে সময়, তাঁর শরীরী বিভঙ্গ যেন হয়ে উঠেছে বাসনার ভুর্জপত্র, কিন্তু আসলে তো লেখা হয়েছে ইতিহাস। এক এক অধ্যায়ে এক একটি নমুনা রেখে এগিয়ে গিয়েছেন রেখা।
এবং ব্যক্তিগত জীবনেও সেই ছক ভাঙা অব্যাহত। প্রেমে ও প্রত্যাখানে তিনি একাকী। বিবাহে ও বিরহেও সেই একা। সুতরাং তাঁকে ঘিরে গড়ে উঠেছে রটনার গল্পগাছা। খরচ হয়েছে নিউজপ্রিন্ট। আর তিনি হয়ে উঠেছেন এনিগমা। বস্তুত রেখা কিন্তু গ্রেটা গার্বো বা সুচিত্রা সেন নন। এই সেদিনও ‘সুপার নানি’ হয়ে ধরা দিয়েছেন পর্দায়। তবু এই প্রকাশের মাঝেই তিনি যেন সযত্নে লালন করেছেন এক অন্তরালকে। যে অন্তরাল তাঁকে আভিজাত্য দিয়েছে। দিয়েছে ছক ভাঙার সাহস।
সুভাষ ঘাইয়ের মতো পরিচালক একদা বলেছিলেন, রেখা ইন্ডাস্ট্রির মুখে এত কালি ছিটিয়েছেন যে, এরপর ভদ্রঘরের কেউ আর কোনও অভিনেত্রীকে বউ বলে মেনে নিতে চাইবে না। অথচ সময় পেরিয়ে আজ দেখা যাচ্ছে, রেখার দেখানো পথেই হেঁটে চলেছেন কঙ্গনা রানাউতরা। সেই বশ্যতা না মানা, সেই নিজের সাম্রাজ্য নিজে তৈরি করার জেদ। এই বোধহয় ইতিহাসের শিক্ষা। দূর থেকে, তাঁর স্বরচিত অন্তরাল থেকে তিনি তা প্রতক্ষ্য করেন। হ্যাঁ, শুরুর দিনে তিনি ডানাকাট পরী ছিলেন না। বহু ঝড় ঝাপটা পেরলেও আজও তিনি ডানাভাঙা পরী নন।
৬৩ তম জন্মদিনে, ভাল থাকুন রেখা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.