চারুবাক: এখনকার জেনারেশনের সহযোগিতার অ্যাটিটিউডটা সত্যিই ভাল! আগেও হয়নি, তেমন নয়। নিত্যানন্দ দত্তর জন্য সত্যজিৎ রায় চিত্রনাট্য লিখে দিয়েছেন(বাক্সবদল)। কিংবা তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্ত’র চিত্রনাট্য রাজেন তরফদারের কলমে। এবার মৈনাক চিত্রনাট্য লিখলেন বন্ধু পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তর জন্য। এমন কোলাবরেশন যথার্থই কমরেড সুলভ। এমনটা যত বেশি হয়, ততই ফিল্ম জগতের পক্ষে শুভ।
[মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কেমন হল ‘ভুবন মাঝি’র যাত্রা?]
এবার দেখা যাক সেই শুভ কর্মটির মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও শুভেচ্ছা থাকলেও কোলাবরেশনটি ঠিক কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর লেখাকে মৈনাক-বিরসা জুটি একদিনের সময়সীমায় কম্প্রেস করে দেওয়ায় পাঁচ নারী এবং একটি পুরুষ চরিত্র সময়ের খাঁচায় হাঁসফাঁস করছে। নিঃশ্বাস ফেলার যেন অবসরই পেল না। অনেকটাই হালফিলের ফেসবুক বন্ধুত্বের মতো। বাস্তব নয়, ভারচুয়াল। প্রায় সমবয়সী পাঁচ তরুণী এখনকার ‘নিউ এজ উইমেন’। সকলের জীবনই সমস্যাদীর্ণ। একের সঙ্গে অন্যের পরিচয় আছে সেটাও কেমন যেন হোয়াটসঅ্যাপের মতো মোবাইলের পর্দায় অস্তিত্ব। কোনওভাবেই আত্মিক নয়। দর্শক রূপা (সোহিনী), মেহের(নুসরৎ), সুজি(প্রিয়াঙ্কা) বা ইরার (মিমি) সঙ্গে, তাদের সমস্যা ও জীবনের দ্বন্দ্বের সঙ্গে হয়তো অনেকটাই সঙ্গী হতে পারবে। কিন্তু উপলব্ধিতে একাত্ম হতে পারবে না।
চিত্রনাট্যে হৃদয় অর্থাৎ হার্ট রয়েছে। কিন্তু হৃদস্পন্দন নেই যে! সমস্যা, দুঃখ, কান্না, যন্ত্রণা- সবই যেন প্লাস্টিক ফুলের মতো। যদি বিরসা-মৈনাক দু’জনে মিলে একটু ধুকপুকুনি আনার চেষ্টাও করতেন! না, সেই কারণে এঁদের প্রচেষ্টাকে একবারে অগ্রাহ্যও করছি না। আসলে প্রথম প্রজন্মের (হরিসাধন দাশগুপ্ত) সঙ্গে তৃতীয় প্রজন্মের এখানেই সংঘাত ও দ্বন্দ্ব। তাঁরা জানতেন দৃশ্যবিন্যাসের কোন মোচড়ে দর্শকের হৃদয় গলানো যায়। এই প্রজন্ম যান্ত্রিক ও কলাকৌশলের খুঁটিনাটি রপ্ত করেছে বটে, কিন্তু হৃদয়ের তারে টংকার তোলার আঙুলটা নেই। পাঁচপাঁচটা নারীর রোজনামচা নিয়ে এমন একটি কোলাজ বানানোর সাহস তো দেখালেন দু’জন! বাস্তব আর অবাস্তব এবং ভারচুয়াল রিয়ালিটির মিক্সচারটি সত্যিই ‘ক্রিসক্রস’-এর মতোই দেখতে সুন্দর।
[মাটির সোঁদা গন্ধ মেখে কতটা মন কাড়তে পারল ‘উড়নচণ্ডী’?]
এজন্য অবশ্য বিরসা-মৈনাককে ধন্যবাদ দেবো। উপযুক্ত শিল্পী নির্বাচন করেছেন তাঁরা। চিত্রনাট্যে মিমি ও নুসরত একটু বেশিই জায়গা পেয়ে দর্শকদের নজর বেশি কাড়ছেন ঠিকই, কিন্তু প্রিয়াঙ্কা, জয়া আহসান, সোহিনী অভিনয়ের দাঁড়িপাল্লায় একইরকম ওজনদার। তবুও জয়াকে যেন একটু বেশিই সফিস্টিকেটেড লেগেছে। ছবির শেষ দৃশ্যটি উপসংহার ও মুখরোচক। কিন্তু ওই যে বললাম সবটাই মেকি, সাজানো আর ভারচুয়াল!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.