বিশ্বদীপ দে: ‘ইফ দেয়ার ওয়াজ আ মার্ডার, দেন, দেয়ার ওয়াজ আ মার্ডারার।’ উক্তিটি আগাথা ক্রিস্টির জগদ্বিখ্যাত গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারোর। যে কোনও রহস্যকাহিনির উত্তেজনার পারদ বোধহয় সবচেয়ে উঁচু বিন্দু স্পর্শ করে কাহিনিতে কোনও খুনের ঘটনা থাকলে। আসলে বাস্তব জীবনে খুন যতই নৃশংস এক কাজ হোক, সিনেমা-সাহিত্যে তা যেন ধাঁধার মতো। যিনি তা পড়ছেন বা দেখছেন, তিনিও চেষ্টা করেন জটটা ছাড়াতে।
পরিচালক অনিমেষ বসুর নতুন ছবি ‘তৃতীয়’ ছবিরও আসল আকর্ষণ বোধহয় এটাই। অ্যাড এজেন্সির উচ্চপদস্থ কর্মী সন্দীপ দত্ত (জয় সেনগুপ্ত) খুন হয় পুরুলিয়ার এক হোটেলের ঘরে। ডাক্তারের প্রাথমিক অনুমান ছিল, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকেই প্রাণ গিয়েছে তার। কিন্তু থানার ওসির সন্দেহ হতে থাকে। শেষে ময়নাতদন্তে পরিষ্কার হয়ে যায় সন্দীপের মৃত্যু অস্বাভাবিকই। তার মৃত্যু হয়েছে বিষপ্রয়োগে। তাহলে? কে খুন করল? কেনই বা করল? এককথায় এটাই ছবির চুম্বক।
কিন্তু ‘তৃতীয়’ কি কেবলই এক মার্ডার মিস্ট্রি? নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, না। একটি খুনকে কেন্দ্র করে গল্প দানা বাঁধলেও দাম্পত্যের ফাটল, পরকীয়ার মতো বহুচর্চিত বিষয়গুলিকেও সঙ্গে নিয়ে এগিয়েছেন পরিচালক। এই ছবির জোরের জায়গাটা হল যে, বিষয়গুলি চেনা। চরিত্রগুলির সংকটও এমন কিছু অভূতপূর্ব নয়। তবু চিত্রনাট্যের নিটোল বুনন ও চমৎকার সম্পাদনা শেষ পর্যন্ত দর্শককে ধরে রাখে। প্রায় দু’ঘণ্টা কোথা দিয়ে কেটে যায় ধরা যায় না।
ছবির গল্পটি সংক্ষেপে এরকম। সন্দীপ দত্ত কার্যতই এক লম্পট পুরুষ। নিত্যনতুন নারীসঙ্গ না পেলে তার চলে না। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি স্ত্রী শর্মিলা (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) জানতে পারার পর তাদের দাম্পত্য একেবারে বরফ হয়ে গিয়েছে। সন্দীপের বর্তমান প্রেমিকা নন্দিনী (সম্পূর্ণা লাহিড়ী)। স্বামীহারা মেয়েটির বড় দায় মেয়ে রিঙ্কিকে বড় করা। সন্দীপ ও নন্দিনী সহকর্মী। ক্রমে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। তবে সন্দীপের কাছে এ নিখাদই ‘শরীর, শরীর’ খেলা। এই পরিস্থিতিতে আচমকাই খুন হয়ে যায় সন্দীপ। গল্পের উপরে ঘন হতে থাকে রহস্যের ছায়া।
হাল আমলে, হাল আমলই বা কেন, বিগত বেশ দীর্ঘ সময় ধরেই বাংলা ছবিতে গোয়েন্দাদের দাপাদাপি। সেই তালিকায় কি নয়া সংযোজন বীরেন্দ্রপ্রতাপ হাজরা? বাঘমুন্ডি থানার এই দুঁদে ওসিকে আবারও কোনও ছবিতে দেখা যাবে কিনা তা সময় বলবে। তবে রজতাভ দত্ত অভিনীত এই চরিত্রটি যে এই ছবির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, তা অনস্বীকার্য। তাঁর রাশভারী গলার পাশাপাশি স্রেফ তাকানোর ভঙ্গিমাতেই বাজিমাত করেছেন অভিনেতা।
রজতাভ ছাড়াও সুদীপ্তা চক্রবর্তীর অভিনয় বরাবরের মতোই মনে দাগ কেটে যায়। কিন্তু সম্পূর্ণার অভিনয় কয়েকটি দৃশ্যে বেশ চড়া দাগের মনে হয়। সন্দীপের চরিত্রে জয় চলনসই। কিন্তু পরিচালক অনিমেষ ও সম্পাদক অর্ঘ্যকমল মিত্র ছবিটিকে এমন জায়গায় পৌঁছে দেন যে শেষ হওয়ার পরেও রেশ রেখে যায়। তবে এই ছবির শুরুটা বেশ ধীরগতির। এই ধরনের ছবির শুরুতে যে চমক থাকে সেটা অদৃশ্য। এটুকু বাদ দিলে ছবির নির্মাণ মেদহীন, স্মার্ট। যা বজায় থাকে শেষ পর্যন্ত। ছবিটিকে ঘিরে তেমন প্রচার এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। এই ধরনের সযত্নে বানানো ছবি যদি সেজন্য দর্শকের কাছে পৌঁছতে না পারে তা নেহাতই দুর্ভাগ্যজনক হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.