সুকুমার সরকার, ঢাকা: মাদক মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশের (Bangladesh) আদালত। তা শুনেও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেন বাংলাদেশের বহু আলোচিত অভিনেত্রী তথা মডেল পরীমনি (Porimoni)। বললেন, ”আমি নির্দোষ।” পরীমণি-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। শুরু হল এই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ। বুধবার ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি। পরীমনি ছাড়াও এই মামলার অপর দুই আসামি হলেন- আশরাফুল ইসলাম দীপু ও কবীর হোসেন।
বুধবার ঢাকা মহানগরের সরকারি আইনজীবী আবদুল্লা আবু পরীমণি-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি করেন। পরীমণির আইনজীবী নীলঞ্জনা রিফাত সুরভী মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাকি দু’জনের জামিন চেয়েও করা হয় আবেদন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পরীমণি-সহ তিনজনের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। তবে অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জ গঠন করেন। চার্জ গঠনের সময় পরীমণিকে বিচারক প্রশ্ন করেন, ”আপনার বিরুদ্ধে মাদক আইনে অভিযোগ গঠন করা হচ্ছে। আপনি দোষী না নির্দোষ?” তাতে অভিনেত্রী জবাব দেন, ”আমি নির্দোষ।” এরপর বিচারক পরীমণিকে প্রশ্ন করেন, ”আপনার গাড়ি দিয়ে মাদক সরবরাহ করা হয়েছে, এতে আপনার বক্তব্য কী?” পরীমণি বলেন, ”এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
২০২১ সালের ৪ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক কাজী মোস্তফা কামাল আদালতে পরীমণি-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।এর আগে একই বছরের ৪ আগস্ট অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে তার ঢাকার অভিজাত পল্লি বনানীর বাসা থেকে আটক করে বাংলাদেশের এলিট ফোরস র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ওইদিনই রাত ৮টা ১০ মিনিটে পরীমনিকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে র্যাব সদরদপ্তরে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব।পরদিন ৫ আগস্ট বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে পরীমনি, চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ এবং তাদের দুই সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপু ও সবুজ আলীকে বনানী থানায় নেওয়া হয়। এরপর র্যাব বাদী হয়ে বনানী থানায় পরীমনি ও তার সহযোগী দীপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। পৃথক মামলা হয় রাজ ও তার সহযোগী সবুজ আলির বিরুদ্ধেও।
র্যাবের (RAB) করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সেই মামলায় পরীমনিকে ওইদিনই আদালতে হাজির করা হলে প্রথমে চারদিনের রিমান্ড ও পরে আরও দু’দফায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।এরপর গত বছরের ৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ শুনানি শেষে প্রতিবেদন দাখিল হওয়া পর্যন্ত পরীমনির জামিন মঞ্জুর করেন। মাদক মামলায় গ্রেফতার হওয়ার প্রায় এক মাস পর ওই বছরের গত ১ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান নায়িকা।
পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদকসেবন করতেন। নিজের বাসায় একটি মিনিবার তৈরি করেন। সেখানে নিয়মিত করতেন মদের পার্টি। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের সরবরাহ করতেন ও পার্টিতে অংশ নিতেন। ২০২১ সালে তারকা অঙ্গনের বেশ কিছু মডেল-অভিনেত্রীর নানা কর্মকাণ্ড ছিল আলোচনার তুঙ্গে। ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত বছর প্রথম আলোচনায় নাম আসে পরীমনির। গত ৮ জুন রাতে বোট ক্লাবের ওই ঘটনায় ১৪ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির নাম উল্লেখ করে এবং চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে সাভার থানায় মামলা করেন পরীমনি। এ মামলায় নাসির ও অমিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর দুই মাস যেতে না যেতেই মাদক মামলায় খোদ পরীমনিকেই আটক করে র্যাব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.