সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ এক অন্য বিসর্জন৷ এ এক অন্যরকম আক্ষেপের গল্প৷ যেখানে দক্ষিণী সিনেমার দাপটে পিছু হটতে হচ্ছে বাংলা মৌলিক ছবিকে৷ সম্প্রতি সেই আক্ষেপই ধরা পড়ল পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের টুইটে৷ নিজের রাজ্যেই অন্য ভাষার সিনেমার কারণে কমছে তাঁর বিসর্জন-এর শো৷ সে দুঃখের কথাই ভাগ করে নিয়েছেন পরিচালক৷
[ বাতাসে ভাসছে কালিকাপ্রসাদের ‘বিসর্জন’-এর সুর, চোখে জল বাঙালির ]
বাংলা সিনেমায় মৌলিক কাহিনির খরা চলছে বলে আক্ষেপ শোনা যায় টলিপাড়ার আনাচে কানাচে৷ গল্পে দক্ষিণী দাপট যে বাংলা সিনেমাকে আছন্ন করেছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই৷ কিন্তু নকলনবীশের জোয়ারেও মৌলিকত্বের ফল্গুধারা প্রবহমান৷ কেউ কেউ নিজের সৃষ্টিশীলতায় তা আজও জারি রেখেছেন৷ সে তালিকায় সাম্প্রতিক সময়ে নিঃসন্দেহে সবথেকে উজ্জ্বল নামটি হল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়৷ বরাবরই ভাবনার অভিনবত্বে তিনি বাঙালি দর্শককে চমকে দিয়েছেন৷ বাংলা ছবির ‘শূন্য এ বুকে’ ‘সিনেমাওয়ালা’ কৌশিক বুনে দিয়েছেন নিটোল মৌলিক কাহিনীর নকশা৷ ‘খাদ’ থেকে টেনে তুলে জানিয়ে দিয়েছেন আঞ্চলিক হলেও সৃষ্টিশীলতায় কোনওভাবেই বাংলা সিনেমা ‘ছোটদের ছবি’ নয়৷ তাঁর সৃষ্টির ‘শব্দ’ তাই আলোড়ন তুলেছে জাতীয় স্তর তো বটেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও৷ সেই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক ছবি ‘বিসর্জন’ও হারাচ্ছে হল এবং শো৷ সৌজন্যে অবশ্যই দক্ষিণী ছবি ‘বাহুবলী’৷ এখনও তা সিনেমা হলে থাকলেও হাতে গোনা দু’একটা মাল্টিপ্লেক্স ছাড়া প্রায় প্রতেক হলেরই শো-এর সংখ্যা কমেছে ব্যাপকহারে৷
[ পদ্মার মায়া, ভালবাসার চোরাকারবার আর বাঙালির ‘বিসর্জন’ ]
‘বিসর্জন’ বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক উজ্জল মুক্তো৷ সিনে সমালোচকরা দরাজ হাতে সে সার্টিফিকেট দিয়েছে বিসর্জন-কে৷ সেরা বাংলা ছবির জাতীয় পুরস্কার তো এসেইছে, এমনকী অনেকে বলছেন, কৌশিক গঙ্গোপধ্যায়ের এ পর্যন্ত সেরা কাজ বোধহয় এটাই৷ সে ছবি বাঙালি দর্শকের ভাবনার পরতে পরতে ছড়িয়েছে পদ্মার মায়া৷ সেই নির্মলেন্দু চৌধুরী তাঁর গানে দরদভরা কণ্ঠে এককালে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পদ্মার মায়া৷ সে অবশ্য নদী পদ্মা৷ আর কৌশিকের পদ্মা রক্তমাংসের, জীবন্ত৷ ভালবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী, পূর্ণেন্দু পত্রীর এ পংক্তিই যেন ভাস্বর হয়ে উঠেছে কৌশিকের পদ্মার মধ্যে দিয়ে৷ চাপা বাসনা, জীবনের অতৃপ্তি, ভালবাসার বিসর্জন তবু শেষমেশ জীবনের চোখেই লেগে থাকা মায়াকাজল৷ কৌশিকের বিসর্জন সেই মায়াতেই বেঁধে রেখেছিল বাঙালি দর্শককে৷ যে ক’জন দেখেছেন ইতিমধ্যে সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, কোথায় যেন বেজে ওঠে মনকেমনের বাজনা৷ কিন্তু সে বাজনা বোধহয় আর বেশ বাঙালির বুকে বাজার সুযোগ থাকল না৷ কেননা কমছে হল৷ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে শো-এর সংখ্যা৷ এই সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে আরও একটি বাংলা ছবি৷ দুই বাংলা ছবির সহাবস্থানে কোনও সমস্যা নেই৷ কিন্তু বিসর্জন-কে পিছু হটতে হচ্ছে দক্ষিণী ছবি ‘বাহুবলী’র দাপটে৷ জানা যাচ্ছে, প্রায় নব্বই শতাংশ হলেই চলছে কাটাপ্পার কালোয়াতি৷ বুকিং প্রায় শেষ৷ ফলে বিশেষ সময়ে শো সরে যাচ্ছে৷ কোনও কোনও হলে এমন শো-এর এমন সময় দেওয়া হচ্ছে, যখন বিসর্জন-এর ব্যবসা মার খেতে বাধ্য৷ এই পরিস্থিতিতে আক্ষেপ ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না পরিচালকের হাতে৷ কেননা মৌলিকত্ব দিয়ে লড়াই করা যায়, কিন্তু বিশাল বাজার অর্থনীতির সঙ্গে আঞ্চলিক ছবির লড়াইটা অসম৷ আর তাই পরিচালকের অসহায় স্বীকারোক্তি, ‘ওরা বাহুবলী৷ আমরা বাঙালি৷ ওরা শাসন করে, আর আমরা আত্মসমর্পণ করি৷’
They are Bahubalis & we are Bengalis. They rule & we surrender! But for how long? Bishorjon losing theatres and shows in its own state! SAD
— Kaushik Ganguly (@KGunedited) April 25, 2017
যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় কৌশিকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন একাধিক পরিচালক৷ অনিকেত চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বাংলা ছবি অন্তত ৫০ শতাংশ শো পাবে না? তাঁর দাবি, এর বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত৷ পরিচালক অতনু ঘোষ জানিয়েছেন, তিনিও একাধিকবার এরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন৷ দক্ষিণের রাজ্যে বা মহারাষ্ট্রে এ ব্যাপারে যেমন সরকারি নিয়ম আছে, তা এ রাজ্যেও লাগু করার দাবি তুলেছেন কেউ কেউ৷
They are Bahubalis & we are Bengalis. They rule & we surrender! But for how long? Bishorjon losing theatres and shows in its own state! SAD
— Kaushik Ganguly (@KGunedited) April 25, 2017
I hope, programming team tried their best to protect us but it’s an order from BB2 HQ to capture most of Bengal. @SuvonkarB https://t.co/0D7AM0eKgZ
— Kaushik Ganguly (@KGunedited) April 25, 2017
দক্ষিণী ‘বাহুবলী’র পেশীর দাপটে বাংলা সিনেমার অকাল ‘বিসর্জন’! বাঙালী সর্বংসহা কিন্তু আর কতদিন এই গা-জোয়ারী? #Bishorjon #ProtectBanglaCinema
— Shibaji Panja (@ShibajiP) April 25, 2017
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.