তাঁর প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘অব্যক্ত’ ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে সাড়া ফেলেছে। অর্জুন দত্ত-র মুখোমুখি শম্পালী মৌলিক।
লেকটাউন কমপ্লেক্সের কাছাকাছি চত্বরে তাঁর নাম করতেই, লোকে একডাকে চিনে গেল। ‘ওই তো সেকেন্ড ফ্লোরে থাকেন, সিনেমার দাদা তো?’ সিকিউরিটি গার্ড দেখিয়ে দিলেন।
ঘরে ঢুকেই বোঝা গেল মিনিম্যালিজমে বিশ্বাস করেন এই ছেলে। ঘরে শোওয়ার খাট, আলমারি, ল্যাপটপ, লেখার টেবিল আর বুটসুডান ছাড়া কিচ্ছু নেই। ঈষৎ পৃথুল চেহারা। সারল্য মাখা মুখের হাসিখানি। হ্যাঁ, ছেলে বলাই ভাল অর্জুন দত্তকে। মাত্র ৩২ বছর বয়সে বানিয়ে ফেলেছেন দুটো শর্ট ফিল্ম। ‘দ্য সিক্সথ এলিমেন্ট’ এবং ‘মেড ফর ইচ আদার’।
‘দ্য সিক্সথ এলিমেন্ট’ বছরখানেক আগে জায়গা করে নিয়েছিল কান-এর শর্ট ফিল্ম কর্নারে। বাংলাদেশ থেকে নেটপ্যাকে নমিনেটেড হয়। ‘কাশিস কুইয়ার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-ও গিয়েছিল। অন্য ছোট ছবিটিও বহু ফেস্টিভ্যালে যায়। তার মধ্যে ‘দাদা সাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-ও রয়েছে। এই অর্জুন দত্তর প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘অব্যক্ত’ দেখানো হল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে, ১৪ ও ১৬ নভেম্বর। ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় ও আদিল হুসেন। ‘অব্যক্ত’ এবারের ‘ইফি’-তেও জায়গা করে নিয়েছে। ছবিটি গোয়ায় প্রদর্শিত হবে ২৩ নভেম্বর। ইফি-তে ‘সেন্টেনারি অ্যাওয়ার্ড ফর দ্য বেস্ট ডেবিউ ফিচার ফিল্ম অফ আ ডিরেক্টর’ ক্যাটেগরিতে অর্জুন নমিনেশন পেয়েছেন। যেখানে বিশ্বের অন্য সিনেমার সঙ্গে দু’টি মাত্র ভারতীয় ছবি জায়গা পেয়েছে। ‘অব্যক্ত’ আর তামিল ছবি ‘টু লেট’।
[ ডিজিটালে ফিরল ‘পথের পাঁচালী’-র স্মৃতি, নবজন্ম অপু-দুর্গার ]
তো কেমন ছিল অর্জুনের শুরুটা? অ্যাসেম্বলি অফ গড চার্চে তাঁর পড়াশোনা। তার পর মৌলানা আজাদ কলেজ থেকে সোশিওলজি নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন। আর মাস্টার্স প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। নিজেই বললেন, “ছোটবেলা থেকে সিনেমার প্রতি ঝোঁক ছিল। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রচুর ছবি দেখতাম। এক্কেবারে নন-ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড আমার। ছোট থেকে স্কুলে নাটক করেছি। ড্রামাটিক্স ক্লাবে ছিলাম। মশালা বলিউড থেকে বার্গম্যান, সত্যজিৎ রায়, ঋতুদা- সব রকমের ছবি দেখতে ভালবাসি। মাস্টার্স শেষ করে প্রথম শর্ট ফিল্ম ‘মেড ফর ইচ আদার’। তার এক-দু’বছর পর ‘দ্য সিক্সথ এলিমেন্ট’। যেখানে দেবযানী চট্টোপাধ্যায় আর ভেরিটি ড্যানবোল বলে এক বিদেশি অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন। আমার জীবনে ‘দ্য সিক্সথ এলিমেন্ট’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবি। আমার প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘অব্যক্ত’র থেকেও। এই শর্ট ফিল্মটা আমাকে এই বিশ্বাস দেয় যে, ছবি করতে পারব। ছোট ছবি থেকে বড় ছবি করা, ওই ট্রানজিশনটা ঘটে ‘সিক্সথ এলিমেন্ট’-এর জন্যই। আমি আগে কোনওদিন কাউকে অ্যাসিস্টও করিনি। নিজে লিখতাম। একে তো নন-ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড, তার উপর জিরো পি.আর। মায়ের গয়না বন্ধক রেখে ‘দ্য সিক্সথ এলিমেন্ট’ করেছিলাম। মা-বাবা খুব সাপোর্টিভ আমার।”
তারপর ‘অব্যক্ত’ ঘটে কীভাবে? এবং প্রথম ছবিতেই এমন হাই ভোল্টেজ স্টারকাস্ট! জায়গা পেয়েছে এতগুলো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও। “আমার প্রথম ফিচার ফিল্মের প্রযোজক, তরুণ দাস। হি কেম অ্যাজ আ বুদ্ধ ইন মাই লাইফ। প্রথম দিনই গল্প শুনে উনি ‘হ্যাঁ’ বলেন। আমাকে একসময় প্রচুর লোক ঝুলিয়েছে। অনেক প্রোডাকশন হাউস ঘুরিয়েছে, কিন্তু ‘অব্যক্ত’ আর কাউকে শোনাইনি। একেবারে ম্যাজিকের মতো এই প্রযোজক রাজি হয়ে যান। আরেকজনের কথাও বলব- আমার বন্ধু সুদীপ। ‘অব্যক্ত’ টাইটেল ওর দেওয়া। সুদীপ না থাকলে ছবিটা হয়তো হতই না। এটুকু বলতে পারি, সেফ খেলিনি। ডেবিউ ফিল্ম হিসেবে এটা খুব আনকনভেনশনাল গল্প। মা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে। অ্যাক্টরদের মধ্যে প্রথমেই বলব, অর্পিতাদির কথা। এমন একজনকে চেয়েছিলাম যাকে পঞ্চাশ বছরের লুকেও মানাবে, আবার আর্লি থার্টিতেও। আর অবশ্যই চেয়েছিলাম ওই অভিনয়টাও। অর্পিতাদির থেকে কেরিয়ারের সেরা অভিনয় বের করে এনেছি গর্ব করে বলতে পারি। অনবদ্য কাজ করেছে। বলব অনুভব কাঞ্জিলালের কথাও। অর্পিতাদি, আদিল স্যরের সঙ্গে এক ফ্রেমে অভিনয় করা অত সহজ নয়। যেটা অনুভব পেরেছে। খেয়াও দারুণ করেছে। ওকে আপনারা ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এ দেখেছেন। রয়েছেন দেবযানীদি, লিলি চক্রবর্তী, অনির্বাণ ঘোষ। এঁদের ছবির পোস্টার হয়তো প্রতি শুক্রবার পড়ে না, কিন্তু এঁরা যখন ফিল্ম করেন লোকে সিরিয়াসলি দেখে। আর অর্পিতাদি শেষ চার পাঁচ বছরে যে সব ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, যেমন ‘শব’, ‘চৌরঙ্গা’, ‘চিত্রকর’, ‘বোধন’, প্রত্যেকটাই খুব অন্য ধরনের। ফলে অর্পিতাদিকে চেয়েছিলাম। আর আদিল স্যর তো ফোনে প্রথমবার গল্পটা শুনেই ‘হ্যাঁ’ বলেন। আমি যেটা সত্যিই ভাবিনি। আর হ্যাঁ, একটা কথা বলব, দেবযানীদি আমার লাকি চার্ম। পারলে ওঁকে আমার সব ছবিতে রাখতে চাই। উল্লেখ করতে চাই আমার ছবির ডিওপি সুপ্রতিম ভোলের কথাও। যিনি আগে ‘সহজপাঠের গপ্পো’-র সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন। উনি আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন ছবি তৈরির সময়।”
যাঁরা অর্জুনের কাজ আগে দেখেছেন তাঁরা জানেন, নিজের মিনিম্যালিস্ট জীবনযাপনের মতো ছবি তৈরির ক্ষেত্রেও অর্জুন বাহুল্যবর্জিত। ‘অব্যক্ত’ ইমোশনাল গল্প কিন্তু শুধু নিশ ছবি নয়। সকলের দেখার ছবি। প্রথম ছবি নিয়ে তরুণ পরিচালকের প্রত্যাশা-উত্তেজনা আছে। কিন্তু প্যানিক নেই। হ্যাঁ, বুদ্ধিজম তাঁকে বদলে দিয়েছে। নিজেই বললেন, “আমি নিচিরেন বুদ্ধিজম প্র্যাকটিস করি। চান্ট করি। আগে প্যানিক করতাম। কিন্তু বুদ্ধিজম আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। বিশ্বাস করি, যেমন কর্ম, তেমন ফল।”
[ ইতালিতেই কেন গাঁটছড়া বাঁধছেন রণবীর-দীপিকা? এই ১০টি কারণই নেপথ্যে ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.