সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। আজও এনিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেযেছে। এই একটি ইস্যু বাঙালির চিরন্তন রহস্যের খাসমহল। বিশেষত নেতাজির সঙ্গে যখন জড়িয়ে যায় গুমনামি বাবার নাম, তখন আগুনে যেন ঘৃতাহুতি হয়। নেতাজি ও গুমনামি বাবার এই রহস্য সমাধানে হাতে আতস কাচ নিয়ে একাধিকবার সত্যান্বেষণে নেমেছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তার মধ্যে অনুজ ধর অন্যতম। তাঁর ও চন্দ্রচূড় ঘোষের CONUNDRUM বইটি নেতাজিপ্রেমী অনেকেই পড়ে ফেলেছেন। এবার ফেসবুকে এই বইটিই চর্চার বিষয় হয়েছে পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের।
[ আরও পড়ুন: ‘যতদিন ইন্ডাস্ট্রি থাকবে,ততদিন সমস্যাও থাকবে’, শিল্পীদের বকেয়া নিয়ে মন্তব্য শাশ্বতর ]
নেতাজির অন্তর্ধান মন থেকে মেনে নিতে পারেনি বাঙালি। কয়েক দশক আগে যখন হঠাৎই মাটি ফুঁড়ে উঠে এসেছিলেন গুমনামি বাবা, অবাক হয়েছিল আসমুদ্র হিমাচল। ঠিক যেন নেতাজির প্রতিমূর্তি। এই গুমনামি বাবাকে ‘নেতাজি’ প্রমাণ করতে যেমন উঠেপড়ে লেগেছিলেন নেতাজি ভক্তরা, তেমনি সিঁদুরে মেঘ দেখেছিল কংগ্রেস সরকার। তিনিই যে নেতাজি, তা সন্দেহ ছিল তাবড় তাবড় রাজনীতিবিদদেরও। তাই তাঁর উপর অনেক সময় অনেক রকম চাপ আসত। তবে গুমনামি বাবা কখনও নিজেকে নেতাজি বলে পরিচয় দেননি। কিন্তু তাতে টানাপোড়েন কাটেনি একবিন্দুও।
পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি সেই ইস্যু পুনরুত্থান করেছেন। CONUNDRUM বইয়ের দুই লেখককে একহাত নিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “একটা পুরোদস্তুর জোচ্চর, হামবাগ নিম্নস্তরের ফেরেব্বাজকে ‘নেতাজি’ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা। প্রমাণ কোথায়? ইনি বলেছেন, উনি বলেছেন, তিনি বলেছেন। মানে কিছু লোকজন কী বলেছেন তার ওপর ভিত্তি করে ইতিহাস লেখা। ডিএনএ টেস্ট হয়েছে? হ্যাঁ। ফল কী? দু জায়গাতেই নেগেটিভ। হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্টরা কী বলেছেন? সরকারি দপ্তর (আদালতে গেলে যাঁদের ভাষ্য মানা হবে), তাঁরা বলেছেন মিলছে না। এমন একটা material proof নেই যা প্রমাণ করে যে এই দুটো মানুষ এক। এবং এই জোচ্চরটি নিজে যা বলেছেন সেগুলো সামনে রাখলে বুঝতে অসুবিধে হয়না যে অত্যন্ত নিম্ন স্তরের ফেরেব্বাজ ছিলেন এই লোকটি।”
পরিচালকের এই পোস্টের উত্তর দিয়েছেন আরও এক পরিচালক। তিনি সৃজিত মুখোপাধ্যায়। যিনি গুমনামি বাবাকে নিয়ে পরবর্তী ছবিটি বানাতে চলেছেন। প্রকাশ্যে এসেছে ছবির পোস্টারও। CONUNDRUM-এর লেখকের বক্তব্য তুলে পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়কে তিনি ‘চিনি না’ বলেছেন। বলেছেন, “কয়েকদিন আগে পর্যন্ত ওনার অস্তিত্বও আমার জানা ছিল না।” চন্দ্রচূড়ের বক্তব্য তুলে ধরে অনিকেতের ‘কান্ডজ্ঞান, বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ’ পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন সৃজিত। তিনি আরও লেখেন, “দেখলাম হইচই-খ্যাত এই নির্দেশক বাবু হইহই করে গুমনামী বাবাকে জোচ্চর-ফেরেববাজ ইত্যাদি আখ্যা দিচ্ছেন। এই ধরনের লোকজনের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এনারা শুধু গালাগাল দেবার আনন্দটা পাওয়ার জন্য নিজেদের সাধারণ বোধবুদ্ধি বিসর্জন দিতে বা ডাহা মিথ্যে কথা বলতে কোন সংকোচ হয় না। এনাদের আরও কয়েকটা বৈশিষ্ট্য হল:
1. যখন আমাদের মিশন নেতাজী ডিক্লাসিফিকেশনের জন্য ২০০৬ সাল থেকে আন্দোলন করছিল তখন কিন্তু এনাদের টিকিটিও কোথাও দেখা যায়নি।
2. নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য বস্তুটা কি তা নিয়ে এনাদের কোন পরিষ্কার ধারণা নেই। প্রায় সাত দশক ধরে ভারত সরকার কি করেছে, অন্যান্য কে কি করেছেন তা নিয়েও এনারা প্রায় কিছুই জানেন না।
3. প্রায় পনেরো বছর ধরে অনুসন্ধান/গবেষণা করে অনুজ ধর ও আমি সাড়ে আটশো পাতার ‘কনানড্রাম’ বলে যে বইটা লিখেছি, সেটা এনারা কেউই পড়েননি, বা অতিকষ্টে কয়েক পাতা পড়ে ফেললেও কিস্যু বোঝেননি। গোটা বিষয়টিতে ইতিহাস ও রাজনীতির যে জটিল খেলা তুলে ধরা হয়েছে, তা বোঝার ক্ষমতা স্পষ্টতই এনাদের নেই।”
[ আরও পড়ুন: হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে মণিরত্নম, শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশা ]
কে এই গুমনামি বাবা?
এই নামের সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন বাঙালি বোধহয় হন্যে হয়ে খুঁজলেও মিলবে না। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদের রাম ভবনে থাকতেন ‘গুমনামি বাবা’৷ প্রকাশ্যে আসতেন না কখনও৷ ‘গুমনামি বাবা’ তাঁর জীবনের শেষ দশ বছর কাটিয়েছিলেন অযোধ্যা এবং ফৈজাবাদে৷ তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় সত্যিই নেতাজির মৃত্যু হয়নি, একথা রিপোর্টে বলেছিল মুখার্জি কমিশন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেই রিপোর্ট ফাইলের তলায় চাপা পড়ে যায়। এদিকে তাইওয়ান সরকার জানায় যে, ওই সময় কোনও বিমান ওই দেশে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়নি। তাই জাপানের রেনকোজি মন্দিরে যে চিতাভস্ম রয়েছে, সেটা সত্যিই সুভাষচন্দ্র বসুর কি না, এই সব প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর আজও মেলেনি। ঠিক সেভাবেই আজও অধরা রয়ে গিয়েছে ‘গুমনামি বাবা’র সঠিক পরিচয়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.