নতুন ছবি ‘কলঙ্ক’-এর প্রচারে আলিয়া ভাট। মুম্বইয়ে তাঁকে ধরে ফেললেন তপন বকসি৷
আলতা রঙের ডিজাইনার সালোয়ার কামিজে সেদিন অন্যরকম সেজেছিলেন আলিয়া ভাট। নতুন ছবির প্রচারে এসে ঠিক যেন ঘরের মেয়ের মতো আপন হলেন। স্টারসুলভ কোনও দেখানেপনা তো নয়ই, বরং সহনশীল বাস্তবতায় ধরা দিলেন।
আজকে আপনাকে অন্যরকম লাগছে। কেমন যেন মনে হচ্ছে আপনি আরও পরিণত হয়ে উঠছেন। আর কেমন একটা পরিণয় পরিণয় ভাব?
– অন্যরকম লাগছে তাই তো? ও আচ্ছা, পরিণয় পরিণয় ভাব? বাহ্! জানি কোনদিকে নিয়ে যেতে চাইছেন। তবে সেটা এখনই নয়। সময় আছে। ম্যঁয় শরমা রহি হুঁ। (হাতের তালুর মুদ্রায় মুখ লুকনোর চেষ্টা করলেন)
কালকেই আপনার মা সোনি রাজদানের ‘নো ফাদার্স ইন কাশ্মীর’ ছবিটা অনেকেই দেখলেন। আপনার কেমন লাগল?
– আপনি দেখেছেন? আমি ছবিটা দেখার পর সিট ছেড়ে উঠতে পারিনি বেশ কিছুক্ষণ। কেমন যেন মনে হচ্ছিল অনেক প্রশ্ন আমার মনের মধ্যে রেখে দিয়ে গেল। একটা অসামান্য অনুভূতি। মায়ের চরিত্রটা আমাকে যেন একটা শূন্যতার মধ্যে ছেড়ে দিয়ে গিয়েছে।থিয়েটারের অন্য সিটগুলো খালি হচ্ছিল, সেটা একটার পর একটা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কোনও একটা ঘোরের মধ্যে যেন নিজের সিট ছাড়তে পারছি না। র্যাদার ছেড়ে উঠতে পারছি না। এরকম ছবি আরও হওয়া উচিত।
কাশ্মীরে আপনি কিছুদিন আগেই ‘রাজি’ ছবির শুটিংয়ে বেশ কিছু দিন সময় কাটিয়েছেন। ‘রাজি’—র মতো সংবেদনশীল সীমান্তের ছবিতে উল্লেখযোগ্য চরিত্রে অভিনয় করে সদ্য পুরস্কৃতও হয়েছেন। আপনি ব্যক্তিগতভাবে কাশ্মীর বা কাশ্মীর সমস্যাকে কীভাবে দেখেন?
– আসলে কাশ্মীর বা কাশ্মীরের সমস্যার মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল একটা বিষয়ে মন্তব্য করার মতো জ্ঞান আমার নেই। এরকম একটা বিষয়ে মন্তব্য করতে যাওয়ার আগে নিজেকে আরও অনেক জানতে হয়। বাবার কাছ থেকে কিছু কিছু শুনেছি। অন্যদের আলোচনা কিছু কিছু শুনেছি। কিন্তু সেগুলো সব নয়। কাশ্মীর, ৩৭০ নম্বর ধারার প্রয়োগ ঠিক কি ঠিক নয়, এগুলোর উত্তর ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করার অভিজ্ঞতা আমার নেই। শুধু এটুকুই মনে হয়, এইরকম বিষয় আর পটভূমিতে আরও ছবি করা যেতে পারে। এইটুকুই।
আপনার মনে হয় না আপনার যা বয়স, তার তুলনায় অনেক বেশি ভারী আর ম্যাচিওরড চরিত্রে আপনি অভিনয় অলরেডি করে ফেলেছেন? এটাও একটা দায়িত্ব। বিরাট দায়িত্ব, যা আপনি নিয়ে ফেলেছেন?
– (হাসি) হ্যাঁ, ঠিক। কিন্তু এগুলো আমি যে নিয়েছি, তা সজ্ঞানে নিয়েছি। এবং সেই দায়িত্ব আমাকেই বহন করে চলতে হবে। তার জন্য পিছপা হলে তো চলবে না। আমি যখন কোনও সিনেমার অফার নিচ্ছি, তখন আমাকেই ভেবে নিতে হবে যে এই চরিত্রটাকে ঠিকঠাকভাবে বয়ে আমাকেই নিয়ে যেতে হবে। অন্য কেউ নেবেন না। সফল হলে ভাল। অসফল হলে কোথায় ভুল দেখে নিতে হবে। কোনও একটা ছবির অফার এল, আর আমি চোখকান বুজে নিয়ে নিলাম, এরকম আমি করতে চাই না। কিন্তু নিলে তার দায়িত্ব নেওয়াও আমারই কাজ।
এই যে এত অল্পবয়সে এতগুলো কাজ আপনি করে ফেললেন, সেই ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ থেকে ‘হাইওয়ে’ হয়ে ‘উড়তা পাঞ্জাব’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’, ‘রাজি’, ‘গাল্লি বয়’ থেকে যেমন এই মুহূর্তে ‘কলঙ্ক’। কোন চরিত্রটা আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে?
– ‘উড়তা পাঞ্জাব’। কিন্তু বিশ্বাস করুন ওই সময়ে আমি আমার দেশেরই সব জায়গার সমস্যার কথা জানতাম না। ‘হাইওয়ে’ যখন করি, তখনও আমি মুম্বইয়ে নিজের বাড়ির অঞ্চল, জুহুর বাইরের পৃথিবীকে জানতাম না। অথচ দেখুন আমি চরিত্রটা নিয়ে নিয়েছি। তার জন্য সবরকম এক্সারসাইজ করা (ফিজিক্যাল নয় শুধু) শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু পৃথিবী তো দূর, নিজের দেশেরই সব সমস্যার কথা জানি না। ‘উড়তা পাঞ্জাব’-এর মতো ওরকম স্টার্ক রিয়্যালিটি, ডার্ক কমেডি থ্রিলার—এসব কাজ করাটা কেরিয়ারের ওই সময়টায় চ্যালেঞ্জিং ছিল। কেননা আমি তার অল্প আগে শুরুটা করেছি ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ কিংবা ‘হাম্পটি শর্মা’ এসব দিয়ে।
এখনকার এই যে নতুন ছবি যেটা খুব শিগগির রিলিজ করছে। ‘কলঙ্ক’। এখানেও আপনার যে চরিত্র, তাতেও কিন্তু সেটা বেশ যে সরল, সোজা বলা যাবে না বলে মনে হচ্ছে?
– হুম। খুব সরল, সোজা নয়। ‘কলঙ্ক’-এ আমার চরিত্রটার নাম ‘রূপ’। এই চরিত্রটাকে বলতে পারেন চারের দশকের ব্যাকগ্রাউন্ডে এখনকার মানসিকতার কোনও মেয়ের চরিত্র। যে অন্যের সব কথা শোনে। কিন্তু আলটিমেটলি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়। সবরকম পরিস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, তার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে সে তার প্রেমকে জয়ী দেখতে চায়। তার বেঁচে থাকার মূলমন্ত্রই হল প্রেম।
সে তো এই মুহূর্তে আপনিও দেখতে চান?
– (হাসি)… গুড কোয়েশ্চেন। বললাম তো, এখনকার মানসিকতার কোনও মেয়েকে যদি আপনি চারের দশকে, পার্টিশনের আগের সময়কার পরিবেশে ফেলে দেন, যেমন হবে, তেমনই।
‘কলঙ্ক’-এ আপনি একদিকে সঞ্জয় দত্ত, মাধুরী দীক্ষিত আবার অন্যদিকে নিজের জেনারেশনের বরুণ ধাওয়ান কিংবা আদিত্য রায় কাপুরদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করলেন দুটো দিকের?
– মাধুরীজির সঙ্গে সেটে প্রথম দেখা হওয়ার বা শুটিংয়ের দিন আমার দুটো হাত কাঁপছিল। আমি একটা চেয়ারে বসেছিলাম। করলাম কী, হাত দুটো নিজের দুটো পায়ের তলায় ঢুকিয়ে চেপে বসে থাকলাম। মাধুরীজির সামনে ডায়ালগ বলা, কত্থকের মতো ডান্স করা রীতিমতো আননার্ভিং। কী যে অবস্থা হয়েছিল বলে বোঝাতে পারব না। যাইহোক, কোনওভাবে উতরে গিয়েছি। আর সঞ্জুকে তো ছোটবেলা থেকেই চিনি। সেটে সব সময় আমার বাবার গল্প করতেন। আমার বাবার সঙ্গে সঞ্জুর পরিচয় অনেক দিনের। এমনকী আমি যখন জন্মাইনি, তখন থেকে। বাবার অনেক কিছু সঞ্জয় জানেন। আবার সঞ্জয়ের অনেককিছুরই সাক্ষী বাবা। সঞ্জয় তাই ঘুরেফিরে সেটে বাবার গল্পই বেশি করেছেন আমার সঙ্গে। আর বরুণ, আদিত্যরা তো আমার বন্ধু। বরুণের সঙ্গেই আমার প্রথম সিনেমা। ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’। আর আদিত্যর সঙ্গে আমি শিগগির ‘সড়ক২’ করতে যাচ্ছি।
ব্যাপারটা এমন নয় যে আপনি মহেশ ভাটের ছোট মেয়ে বলে সেই সময়কার অনেক তারকার কোলেপিঠে চড়ে বড় হয়েছেন? তাই কি?
– হয়তো কয়েকজনের। কিন্তু সবার নয়। (হাসি) সঞ্জয় আমাকে ছোটবেলায় কোলে নিয়েছেন। হয়তো আরও কেউ কেউ। কিন্তু এমন নয় যে অনেকের কোলেপিঠে চড়েছি। কেননা আমার জন্মের পর বাবা এমনিতেই বাইরের মেলামেশাটা কমিয়ে দিয়েছিলেন। পার্টি, খুব বেশি বাইরের মেলামেশায় যেতেন না তখন। কাজের পর বেশি ঘরেই থাকতেন।
‘কলঙ্ক’-এর মতো পিরিয়ড ফিল্মে আপনি প্রথমবার কাজ করলেন। যখন প্রথমে অফারটা এল, কী মনে হয়েছিল? কী দেখেছিলেন– স্ক্রিপ্ট, না করণ জোহরের ব্যানার?
– স্ক্রিপ্ট। তারপর যেটা দেখেছিলাম সেটা হল পরিচালক অভিষেককে। অভিষেক বর্মনের সঙ্গে এর আগে আমি চেতন ভগতের লেখা ‘টু স্টেটস’-এ অভিনয় করেছিলাম। অভিষেক তাই আমার পুরনো বন্ধু। ওর সঙ্গে আমার বোঝাপড়া ভাল। ও আমাকে চেনে। আমিও ওকে চিনি। তাই এই অফারটা আমার কাছে ভেসে যাওয়ার মতো ছিল।
ইদানীং যে খবরটা ছড়িয়েছে যে আপনার আর রণবীরের (কাপুর) বাগদান হয়ে গিয়েছে। সত্যি?
– না। এখনও তেমন কিছু হয়নি। (হাসি)
আপনার নতুন ছবি ‘কলঙ্ক’—এর ট্রেলার বা ছবি দেখে রণবীরের প্রতিক্রিয়া কেমন?
– খুব ভাল বলেছে। (হাসি) ও তো ভাল বলবেই। অ্যাকচুয়ালি হি ইজ লুকিং ফরওয়ার্ড টু ইট্স রিলিজ। আমাকে ভাল বলেছে।
এই মুহূর্তে যদি কোনও পুরনো হিন্দি রোমান্টিক ছবির রিমেকে আপনার সঙ্গে রণবীরকে কাস্ট করা হয় তাহলে কোন ছবির রিমেকে কাজ করার জন্য আগ্রহী হবেন?
– এই মুহূর্তে আমি আর রণবীর যে রোমান্টিক ছবিতে কাজ করলাম তার নাম ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। এটা শুধু রোমান্টিক ছবি নয়। রোমান্সকে রিডিফাইন করা হয়েছে এখানে। সাধারণ রোমান্সের চেয়ে কয়েক গুণ যা এগিয়ে। আর যদি জিজ্ঞেস করেন পুরনো কোনও রোমান্টিক ছবির রিমেক, এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। বেছে নিতে পারছি না। তবে অভিনেতা হিসেবে রণবীর খুবই দক্ষ। বুদ্ধিমান। মিশলে বোঝা যায় মানুষ হিসেবেও ও দারুণ। আর ওর মোবাইলে আমার নতুন ছবির গান তো সারাক্ষণ বাজছে। ফোন করলেই রিংটোনে শুনতে পাবেন। (হাসি)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.