গত তিন মাসে দু-দুটো হিট ছবির নায়ক তিনি। পার্টি করেন না। মদ খান না। জোরে মিউজিক বাজলে মাথাব্যথা করে। কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস নিয়ে মুম্বইয়ে খোলামেলা জন আব্রাহাম। সামনে অহনা ভট্টাচার্য।
[স্বাধীনতা দিবসে ‘তেরঙ্গা’র মাহাত্ম্য বোঝাল ধর্মতলার ‘ঝান্ডা আলম’]
মে মাসে ‘পরমাণু’। তার পর স্বাধীনতা দিবসে ‘সত্যমেব জয়তে’। হঠাৎ করে জন আব্রাহামকে বলিউডের অন্যতম ব্যাঙ্কেবল স্টার মনে করা হচ্ছে। হঠাৎ কী হল বলুন তো?
(হাসি) কিচ্ছু আলাদা করিনি। আমি সব সময়ই মিনিংফুল ছবি করতে চেয়েছি। সেই কারণেই সুজিতের (সরকার) মতো মানুষের সঙ্গে এক সময় গাঁটছড়া বেঁধেছিলাম। আজকে ‘পরমাণু’ আর ‘সত্যমেব জয়তে’র পর লোকে বলছে, জন ঠিক ঠিক ছবি চুজ করছে। ইটস আ গুড ফেজ।
‘সত্যমেব জয়তে’ কেন বেছে নিলেন?
মিলাপের (জাভেরি) কাছে গল্পটা শোনার পর আমার খুব ভাল লেগেছিল। তবে আমি একটু সময় চেয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন শুনলাম মনোজ বাজপেয়ী রাজি হয়ে গিয়েছে তখন আর হ্যাঁ বলতে দেরি করিনি। ছবিতে ওর চরিত্রটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় আমার কোনও সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলেও হতে পারে। কিন্তু মনোজ বাজপেয়ী ভুল করতেই পারে না।
মিলাপ জাভেরি বলেছেন ‘মস্তিজাদে’র পর ওঁর সঙ্গে কেউ কাজ করতে চাইতেন না। এমনকী হাতে থাকা ছবিও বেরিয়ে গিয়েছিল। তার পর আপনিই ওঁর সঙ্গে প্রথম কাজ করলেন। কেন?
আমি কারও ট্র্যাক রেকর্ড দেখি না। ‘পরমাণু’র আগে অভিষেক শর্মা করেছিলেন ‘দ্য শওকিনস’। ‘ভিকি ডোনার’ আর ‘ম্যাড্রাস ক্যাফে’র আগে সুজিত সরকারের ঝুলিতে ছিল ‘ইয়াহাঁ’। ‘কাবুল এক্সপ্রেস’-এর আগে কবির খান ডকুমেন্টারি বানাতেন। তা হলে? আমি জানি আজকালকার অনেক অভিনেতাই এ-লিস্ট পরিচালক ছাড়া কাজ করেন না। কারণ তাঁরা ফেল করার ভয় পান। কিন্তু আমার কোনও ভয় নেই। আমি শুধু দেখি ছবির গল্পটা জোরালো কি না। সেটা যদি জোরদার হয় তা হলে আর কোনও কিছু নিয়েই চিন্তা করার দরকার নেই। আর শুধু আমি কেন? অক্ষয় কুমার আর সলমন খানও তো নতুন পরিচালকদের সঙ্গে সমানে কাজ করে চলেছেন।
ছবি বাছাই করার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখেন?
তেমন কিছু না। যদি মনে হয় আমার গল্পটা পছন্দ হয়েছে, আমি এটা করতে পারব, তা হলে হ্যাঁ বলে দিই। আমি আমার গাট ফিলিংয়ের উপর ভরসা রাখি। আর ট্রেন্ড একেবারেই ফলো করি না। দেশভক্তিমূলক ছবি যদি ট্রেন্ড হয় তা হলে আমি তা কখনওই করব না। আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেছে স্পোর্টস বায়োপিক করছি না কেন। কেন করব? গোটা পৃথিবী করছে বলে? আমার ক্ষেত্রে ঠিক উলটোটা। সবাই করছে বলেই আমি সেটা করব না।
কারও কথা রাখতে বা শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরে কোনও ছবি করে পরে আফসোস করেছেন?
‘লাকির’। তখন আমি ইন্ডাস্ট্রিতে একদম নতুন, বয়সটাও অল্প। ‘বাবুল’-এর ক্ষেত্রেও তাই। ছবিটা আমাকে করতে বলা হয়েছিল। তবে এ সব বেশি দিন করিনি। আমি খুব তাড়াতাড়ি ‘না’ বলতে শিখে গিয়েছিলাম। সেই জন্যেই বোধহয় আমার খুব বেশ শুভানুধ্যায়ী বা বন্ধু নেই (হাসি)।
তা হলে আপনার বন্ধু কে?
আমির আর শাহরুখকে খুব সম্মান করি। এই দু’জন আমাকে সত্যিই পছন্দ করেন কারণ ওঁরা মনে করেন আমি একটু অন্য রকম, একটু অদ্ভুত। ওঁরা ভাবেন যে জন তো নিজের জগৎ নিয়ে থাকে, যা খুশি তাই করে, ওকে একটা মোটর সাইকেল দিয়ে ছেড়ে দাও, ব্যস! (হাসি)
তারকাদের মধ্যে কি সত্যিকারের বন্ধুত্ব হয়?
কোনও সাংবাদিক যদি আপনাকে হঠাৎ ফোন করে খবর ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলে, বা কোনও বিপদে পড়ে আপনার কাছে আসে, তখন বুঝবেন সে আপনার বন্ধু। তেমনই ছবি ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে যখন কথা হয়, তখনই দু’জন তারকার মধ্যে আলাপটা বন্ধুত্বে পরিণত হয়।
প্রযোজক না অভিনেতা– কোন ভূমিকায় আপনি বেশি স্বচ্ছন্দ?
আমি অভিনয় করতে ভালবাসি। কিন্তু প্রযোজক হওয়ার পর বুঝেছি যে প্রযোজকের কাছে একটা ছবি তৈরি হওয়া একজন মায়ের শিশুকে জন্ম দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা। ‘পরমাণু’কে যেমন আমি জন্ম দিয়েছি। তবে আপনি যদি পরিচালক হন, তখন কিন্তু আপনার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। অভিনেতা বা প্রযোজকের চেয়েও অনেক বেশি।
আপনাকে পরিচালকের ভূমিকায় কবে দেখা যাবে?
ইচ্ছে আছে পরিচালনায় হাত দেওয়ার। তবে এখনই না। সবাই ভুল করতে করতেই শেখে। তবে আমার তো খুব বেশি ভুল করার উপায় নেই। কারণ আমাকে ঠেকনা দেওয়ার কেউ নেই। আমি নিজেই নিজেকে ঠেকনা দিই।
‘সত্যমেব জয়তে’-তে আপনি একজন নবাগতা নায়িকার সঙ্গে কাজ করছেন। বলিউডের অনেক বড় তারকাই আজকাল নতুন নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করেন। এর পিছনে কোনও বিশেষ কারণ আছে?
বড় নায়িকারা বোধহয় বয়সে আরও বড় হিরোদের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করেন, তাই আমাদের জন্যেই নবাগতারাই পড়ে থাকে (হাসি)। আসলে আমি নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করি কারণ তাদের মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ থাকে, কাজ করার এনার্জি অনেক বেশি থাকে। আমার ছবিগুলো দেখুন- ‘ভিকি ডোনার’, ‘ম্যাড্রাস ক্যাফে’ বা ‘পরমাণু’, সবেতেই আমি নতুন মুখদের সুযোগ দিয়েছি।
আপনার এত মহিলা ফ্যান, এবং দিনকে দিন তারা সংখ্যায় বাড়ছে। কেমন লাগে?
আপনি যখন বলছেন তখন শুনতে ভালই লাগছে (হাসি)। এত অ্যাকশন আর ডার্ক ছবি করার পরেও মহিলারা যদি আমাকে পছন্দ করেন, তা হলে আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে কী জানেন? আমি চাই দুই লিঙ্গের মানুষই আমাকে সমান পছন্দ করুন। এমনিতেই পুরুষ অভিনেতাদের মহিলা ফ্যান বেশি থাকে। আবার এমন কিছু কিছু অভিনেতাও রয়েছেন যাঁদের শুধুমাত্র মহিলারাই পছন্দ করেন। আমাকে যদি ছেলেরাও মেয়েদের মতো ততটাই পছন্দ করে, তা হলে কিন্তু আমি খুব খুশি হব।
আপনি নাকি পার্টিতে যান না। এটা সত্যি?
একদম সত্যি। আমার পার্টিতে যেতে ভাল লাগে না। পার্টি করা খারাপ আমি তা একবারও বলছি না। কিন্তু ওটা আমার জন্যে না। আমি মদের গন্ধ সহ্য করতে পারি না। নিজেও মদ খাই না। আর খুব জোরে মিউজক বাজলে আমার মাথা ব্যথা করে। তাই বলে এমন নয় যে আমি মানুষের সঙ্গে মিশি না। আমি কিন্তু খুব ফ্রেন্ডলি। যে কারও সঙ্গে বসে আড্ডা মারতে পারি। কিন্তু কেউ সাজগোজ করে দামি গাড়িতে চড়ে এলেই যে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে, সেটা আমি পারব না। কারণ তাঁরা আমার জগতের মানুষ নন। আমার জগৎ সাধারণ মানুষ নিয়ে, যাঁদের কোনও বডিগার্ড নেই।
[বলিউডে হিট বাঙালি ডাক্তারের সুর, একান্ত আড্ডায় সুরকার অর্কপ্রভ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.