Advertisement
Advertisement
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদের কাছে বিশেষভাবে ঋণী জয়া আহসান, কেন?

লেখকের সঙ্গে সাক্ষাতের কথাও জানালেন অভিনেত্রী।

Actress Jaya Ahsan remembers Bangladeshi writer Humayun Ahmed
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:April 10, 2019 5:20 pm
  • Updated:April 10, 2019 5:20 pm  

‘জাদুকর’ হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আবেগপ্রবণ তিনি। চূড়ান্ত ব্যস্ততার ফাঁকে কফিহাউজের জন্য কলম ধরলেন জয়া আহসান

আমরা শুনেছিলাম এক বাঁশিওয়ালার কথা। তার বাঁশির সুরের মাধুর্যে সম্মোহিত হয়ে পড়েছিল হ্যামলিন শহরের সব কিশোর-কিশোরী। আর সে বাঁশির সম্মোহন এতই প্রবল ছিল যে সেই বাঁশিওয়ালার পিছু পিছু ছেলেমেয়েরা চলে গিয়েছিল শহরের সীমানা ছাড়িয়ে। নদীর সেই ওপারে, দিগন্তরেখার কাছে, উপত্যকার আঁকাবাঁকা পথ ধরে পাহাড়-পর্বতের অন্তরালে। এমনই প্রবল ছিল সে বাঁশির মূর্ছনা। এ ঘটনা লোকগল্পের, বাস্তবের নয়। কিন্তু লোকগল্পের এমন মায়াবী জাদুময় গল্প আমরা দেখেছিলাম বাস্তবে। আর তা সত্য হয়ে উঠেছিল হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে।

Advertisement

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কথা বলতে বারবার ফিরে আসতে হয় এই জাদু শব্দটিরই কাছে। বেঁচে থাকতেই এমন বাঁধভাঙা জনপ্রিয়তা ক’জন লেখকের ভাগ্যে জোটে! শুধু লিখে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সেলিব্রিটি। আর সেটি তিনি করেছিলেন গল্প তৈরি করার ক্ষমতায়, আর আকর্ষণীয়ভাবে সে গল্প বলার অসামান্য কারিগরিতে। নিত্যনতুন কাহিনি উদ্ভাবনের সহজাত ক্ষমতা, চুম্বকের মতো টান বজায় রেখে পরতের পর পরত গল্পের স্তর খুলে খুলে যাওয়ার দক্ষতা, এক লঘু কৌতুকবোধ পাঠককে আটকে রাখে তাঁর বইয়ের সঙ্গে। নিয়ে যায় আনন্দ-বেদনায় মেশানো এক মায়াময় জগতে। সেখানে চেনা বাস্তবের ওপরই এক মায়াময় আলো এসে পড়ে। এমন যাঁর জাদুকরী ঐশ্বর্য, পাঠকের মনোরঞ্জনকে তিনি খাটো করে দেখবেন কেন? পাঠকই তাঁর সাহিত্যের প্রাণভোমরা। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেই পাঠকমণ্ডলীকে সাহিত্যের মধুতে আকণ্ঠ ভরিয়ে রেখেছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদের এই অসামান্য ক্ষমতা জোয়ার এনেছিল ক্ষীণ হয়ে আসা প্রকাশনা খাতে। এই জোয়ার হুমায়ূনের একার হাতের সৃষ্টি। কারণ নিজের এক বিপুল অনুগত পাঠকশ্রেণি তিনি তৈরি করেছিলেন তাঁর কলমের শক্তিতে। বাংলাদেশের ফুলেফেঁপে ওঠা প্রকাশনাশিল্প কৃতজ্ঞ থাকবে তাঁর প্রতি।

[ আরও পড়ুন: শুধু ক্রিকেট নয়, শরীরী আবেদনেও দর্শকদের মাত করছেন এই ক্রিকেটাররা ]

এই যে এত এত পাঠকের মন জয় করলেন তিনি, তাদের মন ও কল্পনাকে তো স্পর্শ করতে হয়েছে তাঁকে। সে তো নিশ্চিতভাবেই এক অনন্য সক্ষমতা। আর এখান থেকে তো এক দেয়া-নেয়ারও সূচনা। তিনি পাঠকের মন থেকে নিচ্ছেন, আবার পাঠকও নিজের মন ভরিয়ে নিচ্ছেন তাঁর সাহিত্য থেকে। ফলে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর জীবদ্দশায় হয়ে উঠেছিলেন পপুলার কালচারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইকন। ওই সময়টিতে ঠিকঠাক পৌঁছনোর জন্য হুমায়ূন আহমেদ এক অনিবার্য সিঁড়ি।

এই লেখকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়ে যায় তাঁর লেখা টিভি-নাটক ‘লীলাবতী’-তে অভিনয় করতে গিয়ে। তাঁর সাহিত্যের মতো ব্যক্তিমানুষটিও ছিলেন চমকপ্রদ। কিংবা হয়তো বলা উচিত, তিনি চমকে দিতে ভালবাসতেন খুবই। অল্প বয়সে জাদুকর হতে চেয়েছিলেন। জাদু দেখানোর সেই তুক বা দক্ষতা তিনি তারুণ্যেই ফেলে রেখে আসেননি। নাটকের কাজে যখন তাঁর বাড়ি ‘দখিন হাওয়া’য় গিয়েছি, আমাকে হাতসাফাইয়ের নানা চোখধাঁধানো খেলা দেখিয়েছেন।

আমাকে তিনি সত্যি সত্যি চমকে দিয়েছিলেন অন্য আরেকটি কাণ্ড করে। ‘লীলাবতী’-তে অভিনয় করার সময় একদিন আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমি কী দিয়ে ভাত খেতে চাই? আমি বললাম, মাছ। তা বেশ। পরের বেলায় খেতে গিয়ে আমার চোখ তো ছানাবড়া। হরেক রকম মাছের পদে টেবিল সাজানো। রীতিমতো মাছের এক প্রদর্শনী।

এই চমক যেমন হুমায়ূন আহমেদের জীবনে, তেমনই তাঁর সাহিত্যে। সেই যে তাঁর জাদুর কথা বলছিলাম, সেই জাদুরই মতো। জাদুর প্রতি প্রবল ঝোঁকই কি তাঁকে রহস্যকাহিনি লেখার দিকে টেনে এনেছিল? কে জানে! ভাগ্যিস এনেছিল। নইলে প্রযোজক হিসেবে আমার প্রথম চলচ্চিত্র ‘দেবী’র অস্তিত্বই বা কোথায় থাকত?

এই একটি কারণেই তাঁর প্রতি আমার অশেষ ঋণ।

[ আরও পড়ুন: ‘উৎপলকে পুলিশ ধরেছিল, ছাড়িয়ে আনলাম’, অজানা গল্প শোনালেন সন্দীপ রায় ]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement