নয়ের দশকের জনপ্রিয় সুপারহিরো গত শুক্রবার থেকে পর্দায় ফেরত। মুকেশ ‘শক্তিমান’ খান্না-র সঙ্গে ফোনে শুভঙ্কর চক্রবর্তী।
ধরে নিন, নাইন্টিজের কোনও একটা রোববারে ফিরে গিয়েছেন। বেলা বারোটা। টিভিতে দূরদর্শন। স্ক্রিন জুড়ে ব্রহ্মাণ্ড। ঘুরছে গ্রহ-উপগ্রহ। আর গানে ‘অদ্ভূত অদম্য সাহস কি পরিভাষা হ্যায়… শক্তি… শক্তি… শক্তিমান’। আর তার পরই গোল গোল করে ঘুরছে ভারতের প্রথম সুপারহিরো। গাঢ় লাল কস্টিউম আর এক বুক ‘সূর্য’।
তার টানে কত ছেলেমেয়ে যে সব ছেড়েছুড়ে টিভির সামনে চুপটি করে বসে যেত ‘বাবুসোনা’ হয়ে। কত কত টিউশন-আঁকার ক্লাস এক ঘণ্টা পিছিয়ে যেত। নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধু মনে মনে ভিলেন জয়কাল, কিটানুম্যান কিংবা কপালাদের পিটুনি খাওয়ার হিসেব রাখা চলত। নাইন্টিজের নস্ট্যালজিয়া ছিল ‘শক্তিমান’। আসল নাম ‘পণ্ডিত গঙ্গাধর বিদ্যাধর মায়াধর ওমকারনাথ শাস্ত্রী’।
১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ থেকে টানা সাত বছর চলেছিল ‘শক্তিমান’। তার পর ২৭ মার্চ ২০০৪। ক্ষোভ, দুঃখ, অভিমান, ‘ভাত খাবো না’ নিয়ে সিরিয়ালের সমাপ্তি। পরিণতিটাও ছিল অসমাপ্ত! কিলবিষকে তো অন্তরীক্ষে ছুড়ে ফেলতে পারল না শক্তিমান!
কত প্রশ্ন জমা ছিল যে…
কাট টু মার্চ ২০১৯। ফোনের ওপারে ‘শক্তিমান’! থুড়ি, মুকেশ খান্না। এপারে প্রশ্নের তোড়ে হতভম্ব হয়ে বলছেন, “ধীরে ধীরে। হড়বড় মত কিজিয়ে।”
‘শক্তিমান’ সত্যিই ফিরছে?
সহাস্য উত্তর, “কথা চলছে, টিভিতে না হলেও ওয়েব সিরিজে ফিরবে। গত চার বছর ধরে বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউসে কথা চলছে। ডিলগুলো ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।”
কিছু দিন আগে মুকেশ খান্নার ইউটিউব চ্যানেলে এক টিজারে দেখা গিয়েছিল ‘গঙ্গাধর’কে। হাবেভাবে সে বুঝিয়েছিল, ‘শক্তিমান’-এর নতুন এপিসোড আসছে। নাম ‘সরি শক্তিমান’। নতুন এই সিরিজ নিয়ে মুকেশ বললেন, “এখনকার প্রজন্ম ভীষণ ফাস্ট। খামখেয়ালি। ড্রাগে আসক্ত। মুখ গোঁজা মোবাইলে। শুধু হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুক। পাশাপাশি বসে কথা বলার সময় নেই কারও কাছে। দেশের প্রতি কোনও দায়িত্ব নেই। কিন্তু পুলওয়ামা কাণ্ডের পর সবার দেশভক্তি উপচে পড়ছে। অনেকদিন ধরে এ সব দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না। শক্তিমানের কাছে এ সব মানুষকে ক্ষমা চাইতে হবে। শক্তিমান আর গঙ্গাধর দু’জনেই এখনকার প্রজন্মের ভুলগুলো ধরিয়ে দেবে। মা-বাবা কীভাবে ছেলেমেয়েদের গাইড করবেন, এই এপিসোড তাও শেখাবে। ‘সরি শক্তিমান’ সিজন ওয়ানে ২৪টা এপিসোড রয়েছে।”
নব্বইয়ের প্রজন্ম আর এখনকার টেক-স্যাভি জেনারেশন কি এক? শক্তিমানের সঙ্গে আদৌ রিলেট করতে পারবে এই প্রজন্ম?
“পারবে না। দায়িত্বটা ওদের নয়। দায়িত্ব আমার। ওদের সঙ্গে আমাকে রিলেশন তৈরি করতে হবে,” বললেন মুকেশ খান্না।
‘শক্তিমান’ মানেই ‘কিলবিষ’। যার মুখে একটাই কথা, “অন্ধেরা কায়েম রহে।” এখনকার সমাজও কি কিলবিষে ভরে যায়নি?
একটু চুপ করে ‘শক্তিমান’ বললেন, “পাপ থাকবে। পাপের প্রতিকার করতে হবে। ‘কিলবিষ’ ততদিন থাকবে, যতদিন তার মধ্যে পাপ রয়েছে। এটা ঠিক যে কলিযুগে ‘কিলবিষ’ ওভারপাওয়ার করে ফেলেছে। লোকজনকে ঠিক রাস্তা খুঁজে দিতে হবে। সেই দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না দেখে আমিই নিলাম।”
মুকেশ খান্নার ইউটিউব চ্যানেলের এক লক্ষ সাবস্ক্রাইবার। টিজার রিলিজের পর তা মিনিটে মিনিটে বাড়ছে। গত ১৫ মার্চ মুক্তি পেয়েছে ‘সরি শক্তিমান’-এর প্রথম এপিসোড। কিন্তু সেই টিজারের নীচেই একজনের কমেন্ট- আই হেট শক্তিমান, আই লাভ স্পাইডারম্যান। আপনার চোখে পড়েছে?
“আমি নিজে ছেলেটিকে প্রশ্ন করেছি হোয়াই ডু ইউ হেট হিম?”
কী বলল সে?
“বলল, শক্তিমান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ও মুষড়ে পড়েছিল। রোজ বসত টিভির সামনে, শক্তিমানকে পেত না। তাই রাগে আর দেখেনি। স্পাইডারম্যানে শিফট করে গেছে।”
ঠিকই তো। এখন ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায় প্রচুর কম্পিটিশন। ‘গেম অফ থ্রোন্স’ আছে। ‘সেক্রেড গেমস’ আছে। আরও কত কী। “আপনি যতগুলো নাম নিলেন, প্রত্যেকটায় ভায়োলেন্স আছে। দাঙ্গা আছে। খুনোখুনি আছে। শক্তিমানে তা ছিল না। শক্তিমান কাউকে মেরে ফেলেনি। অন্তরীক্ষে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.