অশালীন ভাষায় প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত আক্রমণই হয়ে দঁাড়িয়েছে নির্বাচনী প্রচারের ভঙ্গিমা। তার বিরুদ্ধ-টোটকা ‘সরস্বতী ভাণ্ডার’!
ভাষা ও ভাব, বহিরঙ্গ, সিনেমার ভাষ্য, প্রতীকের প্রয়োগ– যা কিছু ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের মনে হয় ভারতীয় জনগণের জন্য অনৈতিক ও অশালীন– সেখানে কঁাচি করতে– এমনকী, রিশুট বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বহিরঙ্গ বদলে ফেলতে– রাষ্ট্রের এই কঁাচি-মন্ত্রক দ্বিতীয়বার ভাবে না। বিশেষত, ভাষাপ্রয়োগের ক্ষেত্রে অশালীন শব্দ ‘বিপ’ দিয়ে কিংবা সেই সময়টুকুর ডাবিং একদম নিঃশব্দ করে দেওয়া হয় আকছার। কখনও যদি সেন্সর বোর্ড এড়িয়ে যায়, তখন আবার ভারতজুড়ে বিভিন্ন সময় বিবিধ রাজনৈতিক ও রাজনৈতিক-মতাদর্শ ঘনিষ্ঠ দলের হুজ্জত চলে সিনেমা বয়কটের।
কিন্তু সেলুলয়েডের পর্দা ঠেলে বাস্তবের রঙ্গমঞ্চে এলেই কি রাজনৈতিক ও রাজনৈতিক-মতাদর্শ ঘনিষ্ঠ দলগুলির যাবতীয় চেতনা লোপ পায়? এই কথা উঠল ভোটের প্রচার ও তার প্রকার-প্রকরণ নিয়ে। প্রচার-ভঙ্গিমা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, আসন কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ ও প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে অপভাষা প্রয়োগ ছাড়া আর কোনও উপায় যেন পড়ে নেই। নির্বাচনী প্রচারে নিজেদের ভালোটুকু বলে ভোটারের মন জেতার শিক্ষা বহুকাল হল দেহ রেখেছে। কুরুচিকর ভাষায় ব্যক্তিগত আক্রমণই যেন হয়ে গিয়েছে ‘স্ট্যান্ডার্ড’। এবং তা একেবারেই জনান্তিকে হচ্ছে না। হচ্ছে রীতিমতো মাইকে, উপর্যুপরি গলা চিরে। টিভিতেও নির্বাচনী তরজাগুলিতে কান পাতা হয়ে গিয়েছে দায়। সপরিবার টিভি দেখতে বসে, অস্বস্তিকর কোনও দৃশ্য এসে পড়লে, ছোটদের কথা ভেবে বড়রা চ্যানেল ঘুরিয়ে চলে যেত খবরের দিকে।
এখন সে উপায়ও আর নেই। যঁারা দেশ চালানোর অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী (Lok Sabha Election 2024) লড়াইয়ে নেমেছেন, তঁাদের মুখের ভাষায় লাগামহীন অশালীনতায় লজ্জিত বাড়ির বুজুর্গরা তো বটেই, একইসঙ্গে অবাক শিশুরাও। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী শিখবে এর থেকে? রাজনৈতিক আদর্শেরও-বা কী পরিচয় মেলে এর থেকে? ভাষা যেহেতু ভাবপ্রকাশের প্রাচীনতম উন্নত মাধ্যম, তাই তার শক্তি অপার– তাই কি জরুরি নয় ভাষাপ্রয়োগে সচেতন হওয়া? নির্বাচনী প্রচারে (Election Campaign) ভাষার ব্যবহার নিয়ে, ঘৃণা-ভাষণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কড়া পদক্ষেপ করছে না বলেই কি এই হাল?
ভোট ও রাজনীতিকেন্দ্রিক এই সামাজিক শব্দদূষণ রোখার গণপ্রয়াস পরিলক্ষিত হল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দরজার সামনে অভিনব এক শিরোনামে– ‘সরস্বতী ভাণ্ডার প্রকল্প’। সাইনবোর্ডে লেখা– ‘মনের মাঝে বাগদেবী, ভাষা কেন বেহিসেবি’। একদল নাগরিক জড়ো হয় এই দাবিতে– প্রচারের ভাষা শালীন হোক। কিন্তু, কাজ কি হবে, কতখানি হবে? সিনেমার মতো প্রচার-বক্তৃতা কঁাচি করতে গেলে দেখা যাবে শুধু ‘বিপ’ নয়তো নৈঃশব্দে্য ভরে গিয়েছে ভাষণ!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.