Advertisement
Advertisement

Breaking News

Fuel price

কর-কমলেষু

ব্যবসায়ী পরিবারগুলির আয় দ্বিগুণ-তিনগুণ হলেও তাদের প্রতি সরকারের মনোভাব নরম কেন? 

Why not tax the rich people | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:May 24, 2022 3:31 pm
  • Updated:May 24, 2022 3:31 pm  

ভারতে ১৭%-এর বেশি পরিবারের মাসিক আয় সাড়ে ৮ হাজার টাকা এবং ৬২%-এর বেশি পরিবারের সাড়ে ১৪ হাজার টাকা। পেট্রোপণ্যে কর চাপিয়ে কেন্দ্র গত ৮ বছরে যে বিপুল আয় করেছে, তার সিংহভাগ এই ৮০% পরিবারের থেকে এসেছে। এদিকে, দেশের ব‌্যবসায়ী পরিবারগুলির আয় দ্বিগুণ-তিনগুণ হলেও তাদের প্রতি মনোভাবটি নরম!  লিখছেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

 

Advertisement

০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২১-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু পেট্রোলিয়াম পণ্যের উপর কর বসিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার আয় করেছে ১৮ লক্ষ ২৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। সোমবার সরকারি এই তথ‌্যটি ফের জনসমক্ষে এনেছেন বাংলার মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদি ২০২২-এর প্রথম পাঁচ মাসে পেট্রোপণ্যের কর থেকে কেন্দ্রের আয় হিসাব করা হয়, তাহলে তা আরও দু’লক্ষ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ, ২০১৪ থেকে মোদি সরকার শুধু পেট্রোপণ্যের উপর কর চাপিয়েই ২০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মোদি সরকার পেট্রোলের উপর লিটারে ২৩ টাকা এবং ডিজেলের উপর লিটারে ২৯ টাকা কর চাপিয়েছে। এই অতিরিক্ত কর চাপিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোপণ্যের উপর কর থেকে আয় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা দেখেছি, ২০২০ সালে, অতিমারীর সময়, দু’-দফায় কেন্দ্র পেট্রোলে ১৩ টাকা ও ডিজেলে ১৬ টাকা কর চাপিয়েছিল। তখন চাহিদার অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম জলের চেয়েও সস্তা হয়ে গিয়েছিল। মোদি সরকার সেই সময় দেশবাসীকে সস্তায় পেট্রোল ও ডিজেল কেনার সুযোগ না দিয়ে অবিশ্বাস্য কর চাপিয়ে লাভের গুড় নিজেদের পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছিল। অতিমারীতে সরকার যে অতিরিক্ত খরচ করেছিল, তার পুরোটাই তুলে নিয়েছে শুধুমাত্র পেট্রোপণ্যের উপর চাপানো কর থেকে।

যে সরকার পেট্রোপণ‌্যকে হাতিয়ার করেছে নিজেদের আয় খেয়ালখুশি মতো বাড়ানোর জন‌্য, সেই সরকার এখন মূল‌্যবৃদ্ধির চাপে মুখরক্ষা করতে পেট্রোপণ্যে কর সামান্য হ্রাস করেই লাফাতে শুরু করেছে। পেট্রোল ও ডিজেলে কর বাড়লে তা যে সমগ্র অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা জানা। এটা বুঝতে অর্থনীতির জ্ঞানেরও প্রয়োজন হয় না। জ্বালানির দাম সবার আগে খরচ বাড়ায় পরিবহণের। পরিবহণের খরচ-বৃদ্ধি হিরে থেকে জিরে, সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। উৎপাদনের খরচ বাড়লে উৎপাদকরা তা উপভোক্তাদের ঘাড়েই ঠেলে দেয়। অর্থাৎ পেট্রোপণ্যের উপর কর চাপিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের যে আয়, তার পুরোটাই এসেছে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে।

[আরও পড়ুন: ‘বউদি, তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না, তবু তুলব সতীদাহ’, শপথ নিয়েছিলেন রামমোহন]

সাধারণ মানুষের পকেট-কাটা ছাড়াও কেন্দ্রের আয় বাড়ানোর ভিন্ন উপায় ছিল। কেন্দ্র অনায়াসে বড়লোকদের আয়ের উপর আরও কর চাপিয়ে কিংবা কর্পোরেট সংস্থাগুলির আয়ের উপর কর বাড়িয়ে নিজের আয় বাড়াতে পারত। কিন্তু এই মোদি সরকারের আমলেই দেখা যাচ্ছে, বড়লোকদের করের ক্ষেত্রে বেশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ভারতে এখন কর্পোরেট কর যে জায়গায় নেমে গিয়েছে, তা অকল্পনীয়। মোদি সরকার যুক্তি দিয়েছিল, কর্পোরেট কর কমলে কর্পোরেট সংস্থাগুলি লগ্নিতে উৎসাহী হবে। প্রচুর চাকরি হবে। কার্যক্ষেত্রে গরিব আরও গরিব এবং বড়লোক আরও বড়লোক হওয়া ছাড়া কিছুই ঘটেনি।

গত কয়েক বছরে আর্থিক বৈষম‌্য ভয়ংকরভাবে বৃদ্ধি পেলেও দেশে আয়কর কাঠামোয় বড়সড় কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’-র তথ‌্য বলছে ভারতের ১৭ শতাংশের বেশি পরিবারের মাসিক আয় সাড়ে ৮ হাজার টাকা এবং ৬২ শতাংশের বেশি পরিবারের মাসিক আয় সাড়ে ১৪ হাজার টাকা। মূল‌্যবৃদ্ধির ধাক্কা যে দেশের এই ৮০ শতাংশ পরিবারের উপরই ভয়াবহভাবে আছড়ে পড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পেট্রোল ও ডিজেলের উপর কর চাপিয়ে মোদি সরকার গত ৮ বছরে যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার উপর আয় করেছে, তার সিংহভাগ কিন্তু এই ৮০ শতাংশ পরিবারের পকেট থেকেই এসেছে। অর্থাৎ, গত ৮ বছরে দেশে যা কর বেড়েছে, তার বোঝা বহন করতে হয়েছে এই পরিবারগুলিকেই।
আদানি-আম্বানি-সহ দেশের ব‌্যবসায়ী পরিবারগুলির আয় গত ৮ বছরে দ্বিগুণ-তিনগুণ হলেও, তাদের উপর করের বোঝা সেভাবে বাড়েনি। কর্পোরেট করে বিপুল ছাড় দিয়ে তাদের আরও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ব‌্যবসায়ী ও বড়লোকদের বিষয়ে বরাবর নরম মনোভাব নিয়ে চলা মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ তাই বিষয়টি আড়াল করার জন‌্য সম্প্রতি বলেছেন, মূল‌্যবৃদ্ধির আঘাত বেশি আয়ের লোকেদের উপর বেশি পড়েছে। উপভোক্তার ভোগ‌্যপণ্যের উপর ব‌্যয়ের ধরন থেকে নাকি এই বিষয়টি উপলব্ধ হচ্ছে। নির্মলা সম্প্রতি আরও দাবি করেছেন যে, ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদি সরকার খাদ‌্যপণ‌্য, সার, জ্বালানি ইত‌্যাদিতে ভরতুকি দিয়েছে মোট ২৪ লক্ষ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। ইউপিএ সরকারের ১০ বছরে যে খরচ ছিল নাকি ১৩ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ‌্য যদি সঠিক হয়, তাহলেও দেখা যাচ্ছে সরকার দেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষের জন‌্য যে টাকা গত ৮ বছরে ভরতুকি হিসাবে দিয়েছে, তা পেট্রোপণ্যের উপর কর চাপিয়ে তোলা টাকার প্রায় সমান। ইউপিএ সরকার পেট্রোপণ্যে এত চড়া হারে কর চাপানোর কথা ভাবেনি। দু’দিন আগে পেট্রোলে ৮ টাকা ও ডিজেলে ৬ টাকা শুল্ক কমানোর পরেও ২০১৪ সালের তুলনায় মোদি সরকার পেট্রোলে লিটার প্রতি ১০ টাকা ৪২ পয়সা এবং ডিজেলে লিটার প্রতি ১২ টাকা ২৩ পয়সা বেশি কর আদায় করে চলেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যখন তাঁদের সরকারের জনকল‌্যাণে ব‌্যয়ের সঙ্গে ইউপিএ সরকারের ব‌্যয়ের তুলনা টানছেন, তখন তাঁর এটাও খেয়াল রাখা উচিত ছিল যে, এখনও তাঁরা চাইলে পেট্রোলে ১০ টাকা ৪২ পয়সা এবং ডিজেলে ১২ টাকা ২৩ পয়সা কর অনায়াসেই কমাতে পারেন।

বস্তুত, মোদি সরকার পেট্রোল, ডিজেলে সাম্প্রতিক কর কমিয়ে অতিমারীর পূর্বাবস্থায় ফিরেছে মাত্র। ২০২০-র মার্চ মাসের আগে কেন্দ্র পেট্রোলে লিটার প্রতি ১৯ টাকা ৯৮ পয়সা এবং ডিজেলে লিটার প্রতি ১৫ টাকা ৮৩ পয়সা কর নিত। কর কমানোর পরও এই মুহূর্তে দেশে পেট্রোলের উপর কেন্দ্রের কর ১৯ টাকা ৯০ পয়সা এবং ডিজেলে ১৫ টাকা ৮০ পয়সা। ফলে কেন্দ্রের এই কর হ্রাসের সিদ্ধান্ত আদৌ মূল‌্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে চোখে ধুলো দেওয়া বলে চিহ্নিত করছেন। কেন্দ্রের আর্থিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, জুন মাস থেকেই মূল‌্যবৃদ্ধি স্তরে ২০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস দেখা যেতে পারে। এটা সম্পূর্ণতই একটি পরিসংখ‌্যানের বিষয়। মূল‌্যস্তর যেভাবে হিসাব করা হয়, তাতে জ্বালানির মূল‌্য যোগ করা হয়। জ্বালানির মূল‌্য কমায় মূল‌্যস্তরের সরকারি হিসাবে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা হ্রাস ঘটতে পারে। বাস্তবে পরিস্থিতি কতটা বদলাবে, তা যথেষ্ট প্রশ্নের মুখে।

নভেম্বরে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে কেন্দ্র পেট্রোল ও ডিজেলে কিছুটা কর কমিয়েছিল। তারপরেও মূল‌্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আসতে দেখা যায়নি। বরং জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিন ক্রমাগত বেড়েই গিয়েছে। মূল‌্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার জন‌্য কেন্দ্রীয় সরকারের যে কায়দায় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে, সেটা কখনওই তারা করছে না। গরিব ও সাধারণ মানুষকে আরও বেশি ভরতুকিতে খাদ‌্যপণ‌্য-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। যে ব‌্যবসায়ীরা প্রতিদিন তাদের মুনাফা বাড়াচ্ছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার পন্থা ও কৌশল তৈরি দরকার। বড়লোকদের আয়ের উপর কর বাড়িয়ে সরকারের আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গির বদল না এনে শুধু চালাকি করে রাজ্যের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন ঘটা সম্ভব নয়। অ-বিজেপি রা‌জ‌্যগুলির তরফ থেকে এখন এই কথাগুলিই সোচ্চারে বলা শুরু হয়েছে।

[আরও পড়ুন: জ্ঞানবাপীর ঘোলাটে ভাগ্যাকাশ, কোন দিকে মোড় নেবে ভবিষ্যত?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement